জিম্বাবুয়েকে উড়িয়ে দিয়ে সিরিজ বাংলাদেশের
দ্বিতীয় ম্যাচে কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে কি না? আগেরদিন জানতে চাইলে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা বলেছিলেন, আগে সিরিজ জয়, তারপর পরীক্ষা। অর্থ্যাৎ কোনো ঝুঁকিই নিতে চায়নি টিম বাংলাদেশ। চট্টগ্রামে গিয়ে শুরুতে সিরিজ জয়ের কাজটাই সেরে রাখলো টাইগাররা।
সফরকারী জিম্বাবুয়েকে উড়িয়ে দিয়েছে ৭ উইকেটে। ৩৫ বল (৫.৫ ওভার) হাতে রেখেই তাদের ছুড়ে দেয়া ২৪৭ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ছক্কা মেরেই দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়লেন মোহাম্মদ মিঠুন এবং মুশফিকুর রহীম। ১ ম্যাচ হাতে রেখেই ৩ ম্যাচের সিরিজ জিতে নিয়েছে টাইগাররা।
টস হেরে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশকে ২৪৭ রানের লক্ষ্য ছুঁড়ে দিয়েছিল জিম্বাবুইয়ানরা। জবাব দিতে নেমে দুই ওপেনার লিটন দাস এবং ইমরুল কায়েস মিলে ১৪৮ রানের জুটি গড়েই জয়ের কাজটা প্রায় শেষ করে দেন। ৮৩ রান করে লিটন আউট হয়ে গেলেও পরে মুশফিকের সঙ্গে ৫৯ রানের জুটি গড়ে ইমরুল কায়েস জয়ের কাজটা আরও সহজ করে দেন। তবে ইমরুল ৯০ রান করে ফিরে গেলে বাকি কাজ শেষ করেন মুশফিক আর মিঠুন। মুশফিক ৪০ এবং মিঠুন অপরাজিত থাকেন ২৪ রানে।
২৪৭ রানের লক্ষ্য। খুব বেশি বড় নয়। দুই ওপেনার যদি ফর্মে থাকেন, তাহলে এই লক্ষ্য পাড়ি দেয়াও খুব বেশি কঠিন কিছু হওয়ার কথা নয়। আপাতত সেটাই প্রমাণ করে চলেছেন দুই ওপেনার লিটন কুমার দাস এবং ইমরুল কায়েস। দু’জনের উদ্বোধনী জুটিতে ১৫.৪ ওভারেই (৯৪ বল) ১০০ রান তুলে ফেলে বাংলাদেশ।
যদিও শুরুতেই জীবন পেয়েছিলেন লিটন দাস। প্রথম ওভারের চতুর্থ বলেই লিটন দাসকে লেগ বিফোর আউট দিয়ে ফেলেছিলেন আম্পায়ার। তবে নন স্ট্রাইকে থাকা ইমরুল কায়েসের সঙ্গে কথা বলে রিভিউ নেন লিটন। তাতেই দেখা যায়, বল লেগ স্ট্যাম্প মিস করে যেতো। ফলে আম্পায়ার নিজের ভুল স্বীকার করে আউট প্রত্যাহার করে নেন।
জীবন পেয়েই সতর্ক হয়ে যান লিটন। অন্যদিকে আগের ম্যাচে ১৪৪ রান করা ইমরুল কায়েস তো যেন পুরোপুরি সেট ব্যাটসম্যান। শুরু থেকেই তার নিখুঁত এবং সাবধানি ব্যাটিং কোনো বিপদেরই কারণ সৃষ্টি করলো না। যার ফলে দু’জনের ব্যাটে রানের চাকা সমানে ঘুরতে শুরু করে। ৯.৩ ওভারেই দলীয় ৫০ রান পূরণ করে ফেলে বাংলাদেশ। পরের ৫০ রানের গণ্ডি পার হতে ভেলে মাত্র ৫.১ ওভার। অর্থ্যাৎ, ৩১ বল।
রিভিউ নিয়ে জীবন পাওয়ার পরই জ্বলে ওঠেন লিটন কুমার দাস। এশিয়া কাপের ফাইনালে যেভাবে খেলেছিলেন, আজও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ঠিক সেভাবে শুরু করেছিলেন তিনি। শুধু তাই নয়, ক্যারিয়ারে প্রথম হাফ সেঞ্চুরিও পূরণ করে ফেলেন তিনি।
তবে শেষ পর্যন্ত ইনিংসটাকে তিন অংকের ঘরে আর নিতে পারলেন না লিটন। ৭৭ বলে অনবদ্য ৮৩ রানের ইনিংস খেলার পরই বিদায় নিতে হয় তাকে। সিকান্দার রাজার বলকে কভার এবং পয়েন্টের মাঝামাঝি জায়গা দিয়ে ড্রাইভ করতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু বল ব্যাটে লেগে উঠে যা হালকা উপরে এবং সোজা গিয়ে জমা পড়ে ডোনাল্ড তিরিপানোর হাতে।
৭৭ বলে খেলা ৮৩ রানের ইনিংসে লিটন মেরেছেন ১২টি বাউন্ডারি এবং ১টি ছক্কার মার। আউট হওয়ার আগে ইমরুল কায়েসের সঙ্গে ওপেনিং জুটিতে তোলেন ১৪৮ রান। বলতে গেলে বাংলাদেশের জয়ের ভিতই রচনা করে দিয়ে গেছেন লিটন।
ফজলে মাহমুদ রাব্বির ভাগ্যটাই খুব খারাপ। আগের ম্যাচে হয়েছিল তার অভিষেক। কিন্তু ব্যাট হাতে কোনো রানই করতে পারলেন না। তবুও সুযোগ দেয়া হয়েছিল তাকে দ্বিতীয় ম্যাচে। কিন্তু এবারও তিনি দিলেন ব্যর্থতার পরিচয়। স্রেফ দুর্ভাগ্যের শিকার হলেন তিনি।
সিকান্দার রাজার ওভারেই স্ট্যাম্পিং হয়ে গেলেন তিনি। রাজার বল সামনে এগিয়ে এসে খেলতে গিয়ে মিস করেন রাব্বি। টেল বল ধরে ফেললেও বেশ সময় পেয়েছিলেন রাব্বি। কিন্তু স্ট্যাম্প ভাঙার আগে তিনি ক্রিজে পৌঁছাতে পারেননি। তবুও থার্ড আম্পায়ার ডাকা হলো। দেখা গেলো রাব্বি আউট।
সেঞ্চুরির দ্বারপ্রান্তে এসে আউট হয়ে গেলেন ইমরুল কায়েসও। লিটন কুমার দাসেরটা না হয় কিছুটা মেনে নেয়া গেলো, কিন্তু ইমরুলেরটা! ৯০-এর ঘরে চলে আসার পর আউট হয়ে যাওয়াটা খুবই হতাশার। ইমরুল কায়েস সেই হতাশাটাই জন্ম দিয়ে ফিরে গেলেন। আউট হয়ে গেলেন ৯০ রানে। টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরিটা আর পাওয়া হলো না তার। লিটন ফিরেছিলেন ৮৩ রান করে।
লিটন দাসের সঙ্গে ১৪৮ রানের অনবদ্য এক জুটি গড়েছিলেন ইমরুল। ৮৩ রান করে লিটন দাস আউট হয়ে গেলে ফজলে রাব্বির সঙ্গে জুটি বাধেন ইমরুল। কিন্তু এই জুটি টিকলো না ৪ রানও। রাব্বি আউট হয়ে যান কোনো রান না করেই। এরপর মুশফিকুর রহীমকে নিয়ে জুটি বাধেন ইমরুল। ৫৯ রানের জুটি গড়ার পর আবারও সিকান্দার রাজার আঘাত।
এবার সিকান্দার রাজার বলে লফটেড ড্রাইভ করতে চেয়েছিলেন ইমরুল। কিন্তু তার বল আর বাউন্ডারি লাইন খুঁজে পেলো না। তার আগেই জমা পড়লো চিগুম্বুরার হাতে। ১১১ বলে ৭টি বাউন্ডারিতে সাজানো ৯০ রানের ইনিংসটির পরিসমাপ্তি ঘটে গেলো খুব সহজেই। জিম্বাবুয়ে বোলারদের মধ্যে কেবল সিকান্দার রাজাই ছিলেন সফল। তিন উইকেটের সবগুলোই নিয়েছেন তিনি।
এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে জিম্বাবুয়ে ৭ উইকেট হারিয়ে করেছিল ২৪৬ রান। ব্রেন্ডন টেলর করেন সর্বোচ্চ ৭৫ রান। সিকান্দার রাজা ৪৯ এবং শন উইলিয়ামস করেন ৪৭ রান।