আল্লাহ নিজের জন্য যে জিকির প্রতিষ্ঠার কথা বলেছেন
জিকির হলো স্মরণ করা। যে ব্যক্তি আল্লাহকে স্মরণ করবে আল্লাহ তাআলাও তাকে স্মরণ করার ঘোষণা দিয়েছেন পবিত্র কুরআনে। এ ঘোষণা থেকেই বুঝা যায় যে, জিকির আল্লাহর শ্রেষ্ঠ ইবাদত। কুরআনুল কারিমের ঘোষণায় এ শ্রেষ্ঠ জিকির হলো নামাজ।
যেভাবে নামাজ শ্রেষ্ঠ জিকির হলো কুরআন এবং হাদিসে রয়েছে তার যথেষ্ট প্রমাণ। আল্লাহ তাআলা মানুষের জন্য প্রতিদিন পাঁচ সময়ে এ জিকির করা ফরজ করেছেন। শ্রেষ্ঠ জিকির নামাজের কিছু প্রমাণ সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো।
– কুরআনে আল্লাহ তাআলা এ জিকিরের নির্দেশ দিয়ে বলেন-
‘এবং তোমরা সকাল ও বিকালে তোমাদের মহান প্রভুর নামে জিকির কর।’ (সুরা ইনসান : আয়াত ২৫)
– কুরআনুল কারিমের অন্য আয়াতে নামাজকে তাসবিহ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তাসবিহ দ্বারাও আল্লাহর প্রশংসামূলক স্মরণকে বুঝানো হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘সুতরাং তোমরা আল্লাহর তাসবিহ আদায় কর, যখন সন্ধ্যায় (মাগরিব ও ইশার নামাজ দ্বারা) উপনীত হবে এবং সকালে (ফজর নামাজ দ্বারা) উঠবে। আর অপরাহ্নে (আসর নামাজ দ্বারা) ও জোহরের সময়ে। আর আসমান ও জমিনে সব প্রশংসা একমাত্র তাঁরই।’ (সুরা রূম : আয়াত ১৭-১৮)
– অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলার জিকির তথা স্মরণের জন্য জিকিরকে প্রতিষ্ঠা করার নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন-
‘নামাজ প্রতিষ্ঠা কর আমার জিকিরের জন্য।’ (সুরা ত্বহা : আয়াত ১৪)
এভাবে কুরআনুল কারিমের অনেক স্থানে মানুষের শিক্ষা ও বাস্তবায়নের জন্য প্রিয়নবির প্রতি জিকিরের নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহর নির্দেশ মানুষের জন্য পালন করা ফরজ।
বিশেষ করে সকাল ও সন্ধ্যায় আল্লাহর জিকিরের যে নির্দেশ সুরা ইনসানের ২৫নং আয়াতে করা হয়েছে। এ ব্যাপারে বিখ্যাত তাফসিরকারদের ভাষ্য হলো, ‘নামাজই আল্লাহ তাআলার সর্বোত্তম জিকির।’
– হজরত ইবনে যাইদ বলেন, ‘সকালের জিকির হলো ফজরের নামাজ আর বিকালের জিকির হলো জোহরের সালাত।
– ইমাম তাবারি এ আয়াতের ব্যাখ্যা এভাবে করেছেন যে, ‘হে মুহাম্মদ! আপনি আপনার প্রভুর নামে জিকির করুন। সকালে ফজরের নামাজে এবং বিকালে জোহর ও আসরের নামাজের মধ্যে আপনি তাঁকে তাঁর নাম ধরে ডাকুন।’
– ইমাম আল্লামা কুরতুবি বলেন, ‘সকাল-বিকাল আপনার প্রভুর নামের যিক্র করুন, অর্থাৎ দিনের প্রথমে ফজরের নামাজ এবং দিনের শেষে জোহর ও আসরের নামাজ আপনার প্রভুর জন্য আদায় করুন। আর রাতে তাঁর জন্য সেজদা করুন অর্থাৎ মাগরিব ও ইশার নামাজ আদায় করুন। আর দীর্ঘ রাত তাঁর তাসবিহ করুন অর্থাৎ রাতে নফল নামাজ আদায়ের মাধ্যমে তার জিকির করুন।
– বিখ্যাত তাফসির গ্রন্থ ‘জালালাইন’-এ উল্লেখ করা হয়েছে, ‘আপনি আপনার প্রভুর নামে জিকির করুন সকাল ও বিকালের নামাজের মাধ্যমে। অর্থাৎ ফজর জোহর ও আসরের নামাজের মাধ্যমে।
শুধু তাই নয়, হজ শারীরিক ও আর্থিক সামথ্যবানদের জন্য ফরজ। হজ আদায়কারী মানুষকেও হজের সময় নামাজ আদায়ের মাধ্যমে সর্বোত্তম জিকিরের নির্দেশ দিয়েছেন মহান আল্লাহ। তিনি বলেন-
‘সুতরাং তোমরা আরাফা থেকে বের হয়ে আসবে, তখণ মাশআরে হারামের কাছে (মুজদালিফায়) আল্লাহকে (মাগরিব ও ইশা একসঙ্গে এবং ফজর নামাজ আদায়ের মাধ্যমে) স্মরণ কর এবং তাকে স্মরণ কর যেভাবে তিনি তোমাদেরকে দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৯৮)
মুজদালিফায় হজপালনকারীদের প্রচলিত তাসবিহ-তাহলিল ইত্যাদি কোনো জিকির করা ফরজ-ওযাজিব নয়। শুধুমাত্র মাগরিব ও ইশা’র নামাজ (ইশার সময়) একত্রে আদায় করা ও ফজরের নামাজ আদায় করাই হাজীদের হজ সংক্রান্ত বিধান।
ইমাম তাবারি এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, ‘তোমরা যখন আরাফাত থেকে ফিরে মুজদালিফায় চলে আসবে তখন আল্লাহর জিকির করবে, এখানে জিকির বলতে মাশআরুল হারামের কাছে নামাজ ও দোয়া করাকে বুঝানো হয়েছে।
হজরত আবু সাঈদ খুদরি ও আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি রাতে ঘুম থেকে ওঠে তার স্ত্রীকে জাগাবে এবং দু’জনেই ২ রাকআত তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করবে, আল্লাহর দরবারে তারা আল্লাহর শ্রেষ্ঠ জাকিরিন বা সর্বাধিক জিকিরকারী ও জিকিরকারিণিী হিসেবে অন্তর্ভূক্ত হবেন।
কুরআন ও হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী এ কথা সুস্পষ্ট যে, আল্লাহর জিকির ও তাসবিহ এর মধ্যে শ্রেষ্ঠ জিকির কিংবা তাসবিহ হলো নামাজ আদায় করা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে যথাসময়ে ফরজ নামাজ আদায়ের পাশাপাশি ওয়াজিব, সুন্নাত ও নফল নামাজ আদায় করে আল্লাহর শ্রেষ্ঠ জিকির করার তাওফিক দান করুন। আমিন।