বাংলাদেশে উৎপাদিত চালে আর্সেনিকের উপস্থিতি ৮০-৯০ ভাগ
পানি ও ধান আর্সেনিকের অন্যতম উৎস। পৃথিবীর ৮০টি দেশের প্রায় ২০০ মিলিয়ন মানুষ আর্সেনিক দ্বারা আক্রান্ত। এর মধ্যে বাংলাদেশের প্রায় ৮০ মিলিয়ন মানুষ আর্সেনিকে আক্রান্ত। আমাদের দেশে মানুষ প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৪২০ গ্রাম ভাত খায়।
গবেষণায় দেখা গেছে বাংলাদেশে উৎপাদিত চালে প্রায় শতকরা ৮০-৯০ ভাগ অজৈব আর্সেনিকের উপস্থিত রয়েছে। অজৈব আর্সেনিক জৈব আর্সেনিকের তুলনায় অনেক বেশি বিষাক্ত। ধান সিদ্ধ করার প্রচলিত পদ্ধতির কিছুটা পরিবর্তন ঘটিয়ে বিকল্প পদ্ধতির মাধ্যমে ধান হতে আর্সেনিক অপসারণে সফলতা পেয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) একদল গবেষক।
বুধবার বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ নজরুল ইসলাম সম্মেলন কক্ষে ‘চাল থেকে অজৈব আর্সেনিক অপসারণ’ শীর্ষক সেমিনারে এ তথ্য জানানো হয়। নেসলে ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং কুইন্স ইউনিভার্সিটির যৌথ উদ্যোগে ওই অনুষ্ঠানের আায়োজন করা হয়।
চাল বাংলাদেশের প্রধান শস্য জাতীয় ফসল। কারণ দেশের মানুষের প্রধান খাদ্যই ভাত। কিন্তু চালে আর্সেনিকের উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়ায় মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ। গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে উৎপাদিত চালে প্রায় শতকার ৮০-৯০ ভাগ অজৈব আর্সেনিকের উপস্থিত রয়েছে। ধান চাষের সময় সেচের জন্য ব্যবহৃত ভূগর্ভস্থ পানি এই অর্সেনিকের উৎস। আর এই অজৈব আর্সেনিক মানুষের শরীরের জন্য অত্যান্ত ক্ষতিকর। এটি শরীরের মধ্যে প্রবেশ করলে ত্বক,লিভার ক্যান্সারসহ বিভিন্ন ধরনের মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হয় মানুষ। ধান সিদ্ধ করার প্রচলিত পদ্ধতির কিছুটা পরিবর্তন ঘটিয়ে বিকল্প পদ্ধতির মাধ্যমে ধান হতে আর্সেনিক অপসারণ করা সম্ভব। বিকল্প এই পদ্ধতিতে প্রথমে ধান পানিতে ভেজানোর পূর্বে হাস্কিং মেশিনের সাহায্যে ধানের উপরের খোসা অপসারণ (হাস্ক) করা হয়। এরপর ওই শস্যকে ১২ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রেখে ১০ মিনিট দ্বিগুন পরিমাণ ফুটন্ত পানিতে সিদ্ধ করে রোদে শুকানো হয়। তারপর পলিশিং এর মাধ্যমে ধানের কুঁড়া অপসারণ করা হয়। উক্ত পদ্ধতির মাধ্যমে জাতভেদে চালের শতকরা ৬৮ ভাগ পর্যন্ত অজৈব আর্সেনিক অপসারণ সম্ভব।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল আবেদীনের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আলী আকবর।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. জহির উদ্দিন, বাকৃবি রিসার্চ সিস্টেমের (বাউরেস) পরিচালক অধ্যাপক ড. এম এ এম ইয়াহিয়া খন্দকার।
সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য দেন মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে মুল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গবেষণা প্রকল্পের প্রধান অধ্যাপক ড. মাহমুদ হোসেন সুমন। এসময় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষণা প্রতিষ্ঠান, সম্প্রসারণ বিভাগের বিজ্ঞানীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।