মানুষ কর্মফল জীবদ্দশায় পাবে নাকি মৃত্যুর পর?
আল্লাহ তাআলা মানুষকে ভালো কাজে সহযোগিতা করার উপদেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি হারাম কাজে সহযোগিতা করতে নিষেধ করেছেন। হারাম কাজে কাউকে সহযোগিতা করা বৈধ নয়। হারাম কাজের সহযোগিতা করাও হারাম।
কিন্তু কেউ যদি জীবদ্দশায় ভালো কিংবা মন্দ কাজ করে তবে তার সুফল বা কুফল সে কি জীবদ্দশায় পাবে নাকি মৃত্যুর পর পাবে? হ্যাঁ, কাজ ভালো হোক কিংবা মন্দ হোক, যখন থেকে তার প্রচলন ঘটবে তখন থেকেই তার ফলাফল শুরু হবে। আর তা যতদিন চলবে ততদিন এ ফলাফল অব্যাহত থাকবে।
এ কারণেই আল্লাহ তাআলা ভালো কাজ ও মন্দ কাজের ব্যাপারে দিক-নির্দেশনা দিয়ে ঘোষণা করেন-
‘তোমরা সৎ কাজ ও তাকওয়ায় একে অপরকে সহযোগিতা কর। আর মন্দ ও সীমালঙ্ঘনে একে অপরকে সহযোগিতা করো না। আর আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তি প্রদানে কঠোর।’ (সুরা মায়েদা : আয়াত ২)
ভলো কাজের নির্দেশকারী ও মান্যকারী উভয়ে যেমন সাওয়াব পাবে। তেমনি যতদিন এ ভালো কাজ চলতে থাকবে ততদিন এর নির্দেশকারীও পালনকারীর সমান সাওয়াব পাবে। ঠিক মন্দ কাজের নির্দেশকারী ও পালনকারী তার মন্দ কাজের পরিণাম ভোগ করবে। যতদিন এ মন্দ কাজ চলতে থাকবে ততদিন নির্দেশকারী ও পালনকারী এর পরিণাম ভোগ করতে থাকবে।
হজরত মুনজির ইবনে জারির রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তার পিতা বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি কোনো ভালো কাজের প্রচলন ঘটাবে এবং অন্যরা সেটার অনুসরণ করবে তবে তার জন্য এর প্রতিদান লেখা হবে এবং এর অনুসরণকারীরও অনুরূপ নেকি লেখা হবে। অথচ তাদের প্রতিদান থেকে এতটুকু কমানো হবে না।
অনুরূপ যে ব্যক্তি কোনো পাপ কাজের প্রচলন ঘটাবে এবং অন্যরাও সে পাপ কাজের অনুসরণ করবে, তবে সে পাপ কাজের অন্য প্রচলনকারীর আমলনায় পাপ যুক্ত হতে থাকবে। অথচ যে পাপ করবে তার পাপের সামান্য অংশও কমানো হবে না।’ (ইবনে মাজাহ, ইবনে হিব্বান)
অন্য হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি পাপের কাজে আহ্বান করবে, সেই পাপের দায়ভার তার (আহ্বানকারীর) ওপরেও বর্তাবে। অথচ পাপকারীরও পাপের মধ্যে কোনো ঘাটতি হবে না।’ (মুয়াত্তা মালেক)
উল্লেখিত হাদিস দুটি দ্বারা ভালো কাজের প্রচলন করার তাগিদ যেমন দেয়া হয়েছে, তেমনি পাপের কাজের প্রচলন ঘটানোর ভয়াবহতাও ঘোষণা করা হয়েছে।
এমনকি কোনো ব্যক্তির কৃত পাপের অনুসরণ যারা করবে, এ অনুসরণ যতদিন চলবে ততদিনের সব পাপের বোঝা তাদের আমলনামায়ও যোগ হবে।
কাজ ভালো হোক কিংবা মন্দ হোক তা যে শুধু মৃত্যুর পর আমলনামায় যোগ হবে তা কিন্তু নয়, বরং জীবিত অবস্থায়ও ভালো ও মন্দের প্রতিফল আমলনামায় যোগ হতে থাকবে। ইমাম নববি রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন-
‘যে ব্যক্তি পাপের কাজ করে ও পাপের প্রচলন ঘটায় এবং অন্যরা সে পাপের কাজের অনুসরণ করে তবে পাপের প্রচলনকারীর আমলনায় জীবদ্দশায় এবং মৃত্যুর পরও চলমান পাপের পরিণাম যুক্ত হতে থাকবে।’ (শরহে নববি)
সুতরাং মানুষের উচিত কুরআন এবং হাদিসের নসিহত গ্রহণ করে নিজের ভালো কাজ করা এবং ভালো কাজের প্রচলন করা। মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি মন্দ বন্ধে কার্যকরী ভূমিকা রাখা।
যারা কুরআন সুন্নাহর দেখানো পথে নিজে চলবে অন্যকে পরিচালনা করবে উভয়ের জন্য রয়েছে শুভ পরিণতি। এ পক্রিয়া যতদিন প্রচলিত থাকবে ততদিন এর পরিচালকরা সাওয়াব লাভ করবে।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে দুনিয়াতে নিজে ভালো কাজ করার পাশাপাশি সমাজে বেশি বেশি ভালো কাজের প্রচলন ঘটানোর তাওফিক দান করুন। জীবিত ও মৃত উভয় অবস্থায় ভালো কাজের ফলাফল লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।