ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে অদক্ষ চালকদের হাতে ইজিবাইক, বাড়ছে দূর্ঘটনা
ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের গ্রাম্য সড়ক থেকে শুরু করে শহরের মধ্যকার পৌর সড়কসহ মহাসড়ক পর্যন্ত এখন ইজিবাইকের দখলে। চালকেরা কোন নিয়মনীতি না মেনে শহরের মধ্যকার সড়কে যেখানে সেখানে তাদের বাইক থামিয়ে যাত্রী উঠানামা করাচ্ছেন। চলাচলরত অসংখ্য ইজিবাইকের কারনে শহরের মধ্যে প্রতিনিয়ত অসহনীয় যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়াও চালকদের মধ্যে অপ্রাপ্ত বয়ষ্কো ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত না হওয়ায় হরহামেশায় ঘটছে দূর্ঘটনা।
ভুক্তভোগী অনেক শিক্ষার্থীর অভিযোগ, সকালে স্কুল কলেজে যাওয়ার সময়ে তারা প্রতিনিয়ত যানজটের শিকার হচ্ছে। তাদের অভিযোগ শহরে চলাচলরত ইজিবাইকের চালকেরা কোন নিয়ম শৃংখলা তোয়াক্কা না করে সড়কে ইচ্ছা মত ইজিবাইক ঘুরাতে যায়। আবার রাস্তার ভাঙাচোরা অংশ পরিহার করে ভালো অংশ দিয়ে যেতে চায়। ফলে তারা ঘন ঘন রাস্তায় এপাশ ওপাশ করে পথ চলে। এমত অবস্থায় মোটর সাইকেলসহ দ্রুতগতির পরিবহন পেছন থেকে আগে উঠতে গেলে ইজিবাইকে ধাক্কা লেগে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা।
ইজিবাইক চালকদের খাময়োলীতে শহরের মধ্যে সৃষ্ট যানজট এখন প্রতিদিনের চিত্র। এমন অবস্থায় পড়ে সঠিক সময়ে স্কুল কলেজে পৌছাতে না পেরে তাদেরকে প্রায়ই ক্ষতিগ্রস্থ হতে হচ্ছে। সাধারন পথচারীদের অভিযোগ,ইজিবাইক চালকেরা শহরের মধ্যে যেখানে সেখানে তাদের বাইক পার্কিং করার কারনে সৃষ্ট যানজটে ৫ মিনিটের রাস্তায় কখনও কখনও ঘন্টা খানেক সময় লেগে যায়। প্রাপ্ত সুত্রে জানা যায়, ২০১০ সালের দিকে প্রথমে কালীগঞ্জ শহরে অল্প কিছু সংখ্যক ইজিবাইক দেখা গেলেও বর্তমানে ৩ হাজারের বেশি ইজিবাইক চলাচল করছে।
সরেজমিনে উপজেলা বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, যারা ইজিবাইক চালাচ্ছেন তাদের মধ্যে ১২/ ১৩ বছরের কম বয়সের কিশোরেরাও রয়েছে। এখন প্রতিদিন নতুন নতুন ইজিবাইক সড়কে নামানো হচ্ছে। পৌর কর্তৃপক্ষ এই সব ইজিবাইক শুধুমাত্র পৌর এলাকায় চালানোর অনুমতি দিলেও তারা যাত্রী নিয়ে মহাসড়কে দ্রুতগতীর যানবাহনের সাথে পাল্লা দিয়ে যাত্রী বহন করছেন। এই সব ইজিবাইকের চালকদের মধ্যে কেউ মাঠের কৃষি শ্রমিক অথবা আগে রিক্সা/ ভ্যান চালাতেন। আবার কেউ কেউ বয়সে কিশোর। এদের শতকরা ৯৫ জন চালকই জানেন না কিভাবে রাস্তায় ইজিবাইক চালাতে হয়। তারপরও তারা নিয়মিত মহাসড়ক ছাড়াও গ্রামাঞ্চালের সড়কে ৮ জন করে যাত্রী নিয়ে দ্রুত গতিতে চালিয়ে যাচ্ছেন।
ইজিবাইক চালক মকবুল মন্ডল জানান, তিনি ৪ বছর ধরে ইজিবাইক চালাচ্ছেন। আর এটা চালিয়ে ৫ সদস্যের সংসারের জীবিকা নির্বাহ করেন। তবে তিনি স্বীকার করেন, যে হারে প্রতিদিন নতুন নতুন ইজিবাইক রাস্তায় নামছে তাতে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। তার অভিযোগ নতুন ইজিবাইক চালকেরা আইন কানুন মানে না। কে কত টাকার ভাড়া আয় করবে তারা সেই প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত। এর কারনে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা বাড়ছে।
ইজিবাইক চালক ফয়লা গ্রামের নিমাই চন্দ্র দাস জানান, ২ বছর ধরে ইজিবাইক চালিয়ে সংসার চালাচ্ছেন। আগে ভালো পয়সা রোজগার হতো কিন্ত এখন ইজিবাইকের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় রোজগার কম হচ্ছে। তিনি হাসতে হাসতে জানান, বর্তমানে শহরে এমন অবস্থা যেন মানুষের চেয়ে ইজিবাইক বেশি হয়ে গেছে।
আবু হানিফ নামের এক পথচারী বলেন, শহরের ভিতরে চলাচলরত ইজিবাইক দেখলে মনে হয় এটা যেন ইজিবাইকের শহর। অনেক চালক আছেন যারা অন্য পেশার কাজ করে বিকালে শহরে এসে ইজিবাইক চালান। ফলে বিকালে শহরে ইজিবাইকের উপস্থিতি থাকে সারাদিনের যে কোন সময়ের চেয়ে বেশি। তার অভিযোগ এ সমস্ত চালকদের কোন প্রশিক্ষণ নেই। তাছাড়াও চালকদের মধ্যে অপ্রাপ্ত বয়ষ্কো রয়েছে। তারা শহরের বিভিন্ন মোড়ে অথবা সড়কের উপরে অযথা তাদের বাইক দাঁড় করিয়ে রাখে। আবার লাইন ধরে না গিয়ে ইচ্ছা মত এলামেলোভাবে পাল্লা দিয়ে আগে উঠতে চায়। যে কারনে রাস্তায় দু’পাশ থেকে আসা যানবাহন চলাচল বাধাগ্রস্থ হয়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। তার অভিযোগ এটা চালকদের ইচ্ছাকৃত সৃষ্ট যানজট। এরপরও শহরের মধ্যে বড় গাড়ি ঢুকে যানজটের ভোগান্তিটা আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে।
কালীগঞ্জ পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র আশরাফুল আলম আশরাফ জানান, আমরা গত ২০১৬-১৭ সালের পর নতুন করে ইজিবাইকের তেমন অনুমোদন দেননি। তারপরও অপ্রাপ্ত বয়ষ্কো কোন চালককে অনুমোদন দেননি। কেউ যদি শিশুদের দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ তিন চাকার এ যান চালান কতক্ষনই বা নজরে রাখা যায়। অনুমোদনহীন নতুন নতুন ইজিবাইক শহরের সড়কে নামানো হচ্ছে। চালকদের খামখেয়ালীপনার কারনে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। তিনি বলেন,দূর্ঘটনারোধে সকল ইজিবাইক চালকেরই প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হওয়া উচিৎ। তিনি এগুলো দেখবেন বলে আশ্বাস দেন।
ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) মিলু মিয়া বিশ্বাস জানান, সড়ক দুর্ঘটনা রোধে তারা বিভিন্নভাবে সচেতনতা সৃষ্টি করছেন। এখন ইজিবাইক অনেক বেড়ে গেছে। অল্প বয়সী চালক দিয়ে চালানো ইজিবাইক পুলিশ বিভিন্ন সময় আটকও করে থাকে। তিনি বলেন,এ থেকে পরিত্রান পেতে সমাজের সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন,হাইওয়েতে তো ইজিবাইক চলাচল একেবারেই নিষিদ্ধ। তার পরেও কিছু চালক পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে যাতায়াত করছে। এগুলোর বিরুদ্ধে খুব শিঘ্রই ব্যবস্থা নেয়া হবে।