সরব ধানমন্ডি, নীরব গুলশান
ভর দুপুর। তাও আবার শুক্রবার। গুলশান ৮৬ নম্বর সড়কে প্রায় সুনসান নীরবতা। দু-একটি প্রাইভেটকারের দেখা মিললেও পায়ে হাঁটা মানুষের দেখা নেই বললেই চলে। ইরান দূতাবাস পার হলেই বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কার্যালয়।
কার্যালয়ের সামনে দুটি প্রাইভেটকার রাখা। ধূলি-ময়লার আবরণ গাড়ির গ্লাসে লেপ্টে আছে। যেন রাজনীতির এক অচেনা কার্যালয়ের ঠিকানা। খালেদা জিয়া, তারেক রহমানের ছবি না থাকলে বোঝার উপায়-ই নেই এটি একটি দলীয় প্রধানের অফিস।
অথচ এই কার্যালয়কে ঘিরেই রাজনীতির অন্যরকম এক ইতিহাস। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গুলশান-২ এর ৮৬ নম্বর সড়কের পরিচিতি পেয়েছিল ‘মিডিয়া পাড়া’ হিসেবে। এই অফিসে থেকেই বিএনপি প্রধান আন্দোলন পরিচালনা করেছিলেন দীর্ঘসময়।
সময় ইতিহাস গড়ে, খালেদা জিয়া এখন ঢাকার পুরানো কারাগারে। আদালত-কারাগার-হাতপাতালেই দিন কাটছে খালেদা জিয়ার। খালেদাবিহীন গুলশান কার্যালয় যেন অনেকটাই নীরবতার চাদরে ঢাকা।
অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির কার্যালয়ে আনন্দের হাওয়া। শুক্রবার সকাল থেকেই মনোনয়নপত্র বিক্রির ধুম পড়েছে ধানমন্ডির ৩/এ সড়কে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে। সারাদেশ থেকে মনোনয়ন ফরম কিনতে এসেছেন নৌকার প্রার্থীরা। জনবল নিয়ে মনোনয়নপত্র কিনছেন, আনন্দ মিছিল করছেন। মূলত হাজার হাজার নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে সমাবেশ রূপ নিয়েছে কার্যালয় প্রাঙ্গণ। লোকের ভিড়ে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে জিগাতলা-মোহাম্মদপুর সড়কে।
রাজনীতির এমন দিনে ধানমন্ডিতে আনন্দধারা বইলেও গুলশানে নীরবতা। যেন এক পাশে আলো, অন্য পাশে অন্ধকার।
রাজনীতি, নির্বাচন নিয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক। বলেন, সময় কারও জন্য অপেক্ষা করে না। ইতিহাস নির্মম। ২০১৪ সালে নির্বাচনে অংশ না নিলে বিএনপির আজকের দশা নাও হতে পারত। তারা রাজনীতির সরল পথে হাঁটতে অভ্যস্ত নয়। নির্বাচনের বাইরে থাকলে দলের প্রাণ থাকে না। বিএনপি এখন প্রাণহীন দল। যার প্রমাণ মিলছে দলটির কার্যক্রম এবং অফিসেও।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ জনবান্ধব দল। নির্বাচনেই সমাধান জানে আওয়ামী লীগ। নির্বাচনী সময় বাঙালির আনন্দ মৌসুম। এই আনন্দে শরিক হতে মানুষ মুখিয়ে থাকে। তারই প্রমাণ মিলছে ধানমন্ডি আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কার্যালয়ে।
একই প্রসঙ্গ নিয়ে কথা হয় বিএনপি নেতা ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনের সঙ্গে। তিনি বলেন, সরকারের নির্বাচনী খেলায় মানুষ আর আবেগ প্রকাশ করে না। বিএনপি রাজনীতির মাঠে সরবই আছে। সরকারের একের পর এক ষড়যন্ত্র বিএনপি শক্তভাবে মোকাবেলা করছে।
তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে সরকার যা করছে তা লোকদেখানো। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট রাজনীতির মাপকাঠি নির্ধারণ করে দিয়ে প্রস্তাব দিয়েছে। এর বাইরে নির্বাচন গেলে সরকারও চ্যালেঞ্জে পড়বে। রাজনীতিতে গুমট অবস্থা বিরাজমান। যে কোনো সময় জনরোষ বিস্ফোরণে রূপ নেবে। হয়তো খানিক সময়ের অপেক্ষা।