ধর্ম ও জীবন

নবী প্রেরণের তিনটি উদ্দেশ্য

কোরআনের অর্থ হৃদয়ঙ্গম করা এবং তার বিধি-বিধান পালন করা যেমন ফরজ ও উচ্চস্তরের ইবাদত, তেমনিভাবে তার শব্দ তেলাওয়াত করাও একটি স্বতন্ত্র ইবাদত ও সওয়াবের কাজ। তাই অর্থ না বুঝে কোরআনের শব্দ পাঠ করা নিরর্থক নয়; বরং সওয়াবের কাজ। রাসুলুল্লাহ (সা.) ও সাহাবায়ে কেরাম কোরআনের অর্থ সম্পর্কে সমধিক জ্ঞাত ছিলেন। কিন্তু উপরোক্ত কারণেই তারা শুধু অর্থ বোঝা ও তা বাস্তবায়ন করাকেই
যথেষ্ট মনে করেননি 

 

‘তিনি তাদের কাছে তোমার আয়াতগুলো তেলাওয়াত করবেন, তাদের কিতাব শিক্ষা দেবেন এবং তাদের পরিশুদ্ধ করবেন।’ (সূরা বাকারা : ১২৯)।

নবী করিম (সা.) এর প্রতি নির্দেশ ছিল, প্রথমত, আমার আয়াতগুলো তেলাওয়াত করবেন। দ্বিতীয়ত, আসমানি কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেবেন। তৃতীয়ত, তাদের (মানুষকে) পবিত্র করবেন, অর্থাৎ মানুষের চরিত্র শুদ্ধি করবেন।

এখানে সর্বপ্রথম প্রণিধানযোগ্য যে, তেলাওয়াতের সম্পর্ক শব্দের সঙ্গে এবং শিক্ষাদানের সম্পর্ক অর্থের সঙ্গে। তেলাওয়াত ও শিক্ষাদান পৃথক পৃথকভাবে বর্ণিত হওয়ার মর্মার্থ এই যে, কোরআনের অর্থসম্ভার যেমন উদ্দেশ্য, শব্দসম্ভারও তেমনি একটি লক্ষ্য। এসব তেলাওয়াত ও হেদায়েত একটি ফরজ ও গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। কোরআনের শব্দের সঙ্গে বিশেষ বিশেষ বিধি-বিধানও সম্পৃক্ত রয়েছে। ফিকাহ শাস্ত্রের মূলনীতি সংক্রান্ত গ্রন্থগুলোয় কোরআনের সংজ্ঞা এভাবে বর্ণিত হয়েছে : শব্দসম্ভার ও অর্থসম্ভার উভয়ের সমন্বিত গ্রন্থের নামই কোরআন। মোটকথা, আয়াতে কোরআন তেলাওয়াতকে কোরআন শিক্ষাদান থেকে পৃথক করে একটি উদ্দেশ্যের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, কোরআনের অর্থসম্ভার যেমন উদ্দেশ্য, শব্দসম্ভারও তেমনি উদ্দেশ্য। কেননা, তেলাওয়াত করা হয় শব্দের, অর্থের নয়। অতএব, অর্থ শিক্ষা দেওয়া যেমন পয়গম্বরের কর্তব্য, তেমনি শব্দের তেলাওয়াত এবং সংরক্ষণও তাঁর একটি স্বতন্ত্র কর্তব্য ও দায়িত্ব। কোরআনের অর্থ হৃদয়ঙ্গম করা এবং তার বিধি-বিধান পালন করা যেমন ফরজ ও উচ্চস্তরের ইবাদত, তেমনি তার শব্দ তেলাওয়াত করাও একটি স্বতন্ত্র ইবাদত ও সওয়াবের কাজ। তাই অর্থ না বুঝে কোরআনের শব্দ পাঠ করা নিরর্থক নয়; বরং সওয়াবের কাজ।

রাসুলুল্লাহ (সা.) ও সাহাবায়ে কেরাম কোরআনের অর্থ সম্পর্কে সমধিক জ্ঞাত ছিলেন। কিন্তু উপরোক্ত কারণেই তারা শুধু অর্থ বোঝা ও তা বাস্তবায়ন করাকেই যথেষ্ট মনে করেননি। বোঝা এবং আমল করার জন্য একবার পড়ে নেওয়াই যথেষ্ট ছিল; কিন্তু তারা সারাজীবন কোরআন তেলাওয়াতকে অন্ধের ষষ্ঠী মনে করতেন। কিছু সাহাবি দৈনিক একবার কোরআন খতম করতেন, কেউ দুই দিনে এবং কেউ তিন দিনে, কেউ সাত দিনে কোরআন খতমে অভ্যস্ত ছিলেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) ও সাহাবায়ে কেরামের এ কার্যধারাই প্রমাণ করে, কোরআনের অর্থ বোঝা এবং সে অনুযায়ী আমল করা যেমন ইবাদত, তেমনি শব্দ তেলাওয়াত করাও স্বতন্ত্র দৃষ্টিতে একটি উচ্চস্তরের ইবাদত এবং বরকতময়। আর তা সৌভাগ্য ও মুক্তির উপায়। এ কারণেই রাসুলুল্লাহ (সা.) এর কর্তব্যগুলোর মধ্যে কোরআন তেলাওয়াতকে একটি স্বতন্ত্র মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। মোটকথা, রাসুলের কর্তব্য বর্ণনা প্রসঙ্গে কোরআন তেলাওয়াতকে স্বতন্ত্র কর্তব্যের মর্যাদা দিয়ে হুঁশিয়ার করা হয়েছে যে, কোরআনের শব্দ তেলাওয়াত, শব্দের সংরক্ষণ এবং যে ভঙ্গিতে তা অবতীর্ণ হয়েছে, সে ভঙ্গিতে তা পাঠ করা একটি স্বতন্ত্র ফরজ। (মাআরেফুল কোরআন : প্রথম খ-, পৃ-৩৮৩)।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button