ঝিনাইদহে বিএনপির ৯ নতুন মুখ
ঝিনাইদহের চারটি আসনে বিএনপির পক্ষ থেকে নয়জন নতুন মুখ মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। ১৯৯১ সালের পর এবারই প্রথম নতুন মুখ দেখল বিএনপি। এত দিন এই চার আসনে নির্বাচন করতেন দলটির চার পরিচিত মুখ।
নতুন নয়জন হলেন ঝিনাইদহ-১ আসনে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. আসাদুজ্জামান আসাদ ও কেন্দ্রীয় সাবেক ছাত্রনেতা জয়ন্ত কুমার কুন্ডু, ঝিনাইদহ-২ আসনে আইনজীবী মো. আবদুল মজিদ, সাবেক সাংসদ মসিউর রহমানের ছেলে ইব্রাহিম রহমান ও জেলা বারের সভাপতি এস এম মসিউর রহমান, ঝিনাইদহ-৩ আসনে কণ্ঠশিল্পী মনির খান, সাবেক ছাত্রনেতা আমিরুল আলম খান শিমুল ও সাবেক সাংসদ শহিদুল ইসলামের ছেলে মেহেদী হাসান রনি এবং ঝিনাইদহ-৪ আসনে সাবেক ছাত্রনেতা সাইফুল ইসলাম ফিরোজ।
২০১৪ সালের নির্বাচন ছাড়া বাকি সব কটি নির্বাচনে যাঁরা এত দিন প্রার্থী ছিলেন তাঁরা হলেন ঝিনাইদহ-১ আসনে জেলা বিএনপির সহসভাপতি এম এ ওহাব, ঝিনাইদহ-২ আসনে জেলা বিএনপির সভাপতি মসিউর রহমান, ঝিনাইদহ-৩ আসনে জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত শহিদুল ইসলাম ও ঝিনাইদহ-৪ আসনে জেলা বিএনপির আরেক সহসভাপতি শহিদুজ্জামান বেল্টু। তাঁদের মধ্যে এম এ ওহাব, মসিউর রহমান ও শহিদুজ্জামান বেল্টু এবারও দলীয় মনোনয়ন নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
তৃণমূল নেতা–কর্মীরা মনে করছেন, দলের তরুণ নেতাদের মনোনয়ন দেওয়াটা ইতিবাচক। আবার অনেকে মনে করছেন, সরকারি দলের শক্তিশালী প্রার্থীদের মোকাবিলা করতে পুরোনো নেতাদেরই প্রয়োজন।
এরশাদ সরকারের পতনের পর ১৯৯১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে প্রথম নির্বাচনে ঝিনাইদহ-১ আসনে মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচিত হন এম এ ওহাব। তিনি ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারিসহ মোট তিনটি নির্বাচনে জয়লাভ করেন। আর ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়নি। এবার এই আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে পড়ালেখা করে বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টে আইন পেশায় জড়িত আসাদুজ্জামান আসাদ। আরও আছেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাবেক নেতা জয়ন্ত কুমার কুন্ডু। এ বিষয়ে শৈলকুপা উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেন বলেন, তাঁরা নতুন প্রার্থী পেয়ে খুশি। শিক্ষিত ও অপেক্ষাকৃত তরুণ প্রার্থীর পক্ষে তরুণ ভোটারসহ সব শ্রেণির মানুষের সমর্থন থাকবে।
ঝিনাইদহ-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়েছেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও বর্তমান সাংসদ আবদুল হাই।
ঝিনাইদহ-২ আসনে ১৯৯১ সালে বিএনপির প্রার্থী হয়েছিলেন মো. মসিউর রহমান। তিনি ২০১৪ সাল ছাড়া সব কটি নির্বাচনে অংশ নেন। মোট ৪টি নির্বাচনে তিনি জয়লাভ করেন। এবার তাঁর আসনে নতুন প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ঝিনাইদহ শহীদ জিয়াউর রহমান আইন মহাবিদ্যালয় থেকে এলএলবি পাস করা ব্যবসায়ী ও হরিণাকুন্ডু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আবদুল মজিদ। তিনিও বয়সে অপেক্ষাকৃত তরুণ। স্থানীয় ব্যক্তিরা বলছেন, সরকারি দলের প্রার্থীর সঙ্গে এই আসনে তাঁর লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি। আসনটিতে বিএনপির আরও মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ঝিনাইদহ আইনজীবী সমিতির সভাপতি বিএনপি নেতা এস এম মসিউর রহমান ও সাবেক সাংসদ মসিউর রহমানের ছেলে ইব্রাহিম রহমান। এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান সাংসদ তাহজীব আলম সিদ্দিকী ওরফে সমি সিদ্দিকী।
ঝিনাইদহ-৩ আসনে ১৯৯১ সালে বিএনপির প্রার্থী হয়েছিলেন শহিদুল ইসলাম ওরফে শহিদুল মাস্টার। তিনিও সব কটি নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ২০১৬ সালে অসুস্থ হয়ে মারা যান। এবার এই আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন কণ্ঠশিল্পী মনির খান। আরও মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক নেতা আমিরুল আলম খান ওরফে শিমুল ও সাবেক সাংসদ শহিদুল ইসলামের ছেলে মেহেদী হাসান রনি। এই আসনে জামায়াতের পক্ষ থেকেও জোটের মনোনয়ন নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন অধ্যাপক মতিয়ার রহমান। এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়েছেন সাবেক সাংসদ শফিকুল আজম খান চঞ্চল।
ঝিনাইদহ-৪ আসনে গত ৫টি নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে অংশ নেন শহিদুজ্জামান বেল্টু। তিনি ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর কাছে পরাজিত হন। এবারও তিনি দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। তবে এই আসনে বিএনপির নতুন মূখ হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ। তিনি বলেন, মানুষ পরিবর্তন চায়। দল তাই তাঁকে মনোনয়ন দিয়েছে। এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী কালীগঞ্জ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাংসদ আনোয়ারুল আজিম আনার।