ধর্ম ও জীবন

মসজিদে না গিয়ে ঘরে নামাজ পড়া প্রসঙ্গে প্রিয়নবির ঘোষণা

ঝিনাইদহের চোখ ডেস্ক:

আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষের প্রতি সবচেয়ে বড় দায়িত্ব হলো- সৎ কাজের আদেশ ও অন্যায় কাজ থেকে নিষেধাজ্ঞার কর্তব্য সম্পাদন করা।’ অর্থাৎ নিয়মিত সৎ কাজ করা আর অন্যায় কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখার পাশাপাশি জামাআতের সঙ্গে নামাজ আদায় করা।

আল্লাহ তাআলা কুরআনে পাকে এ কাজগুলোর নির্দেশ দিয়েছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদিসে পাকে অনেক নসিহত পেশ করেছেন।

বর্তমান সময়ে এমন অনেক মানুষ রয়েছে যারা মসজিদকে অনাবাদী রেখে নিজ নিজ ঘরে নামাজ আদায় করে। এটা অনেব বড় ভুল কাজ। তাই মসজিদ থেকে নিজেদের নিবৃত রাখা একেবারেই ঠিক নয়।

জামাআতের সঙ্গে নামাজ আদায়ে হজরত উম্মে মাকতুমের প্রতি প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নির্দেশনা ছিলো অনেক জোরালো। আর তাহলো-

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দরবারে এসে নিবেদন করলেন, ‘হে আল্লহর রাসুল! আমি অন্ধ এবং আমার ঘর মসজিদ থেকে অনেক দূরে অবস্থিত। আমি কি জামাআতে অংশগ্রহণ না করে আমার ঘরে নামাজ পড়ার অনুমতি পেতে পারি?

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে জিজ্ঞাসা করলেন- ‘তুমি কি নামাজের দেয়া আজানের শব্দ শুনতে পাও?

আব্দুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম বললেন, ‘জি হ্যাঁ’ শুনতে পাই।

তখন প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তবে তুমি সেই (আজানের) ডাকে সাড়া দাও। আজানের শব্দ শুনলে উহার ডাকে তোমার মতো অন্ধকেও তাতে সাড়া দিয়ে মসজিদে নামাজের জামাআতে অংশগ্রহণ করতে হবে।

অন্য বর্ণনায় এসেছে, প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আমি তোমার জন্য অব্যহতির কোনো পথ দেখতে পাচ্ছি না।

আজান হওয়ার পর মসজিদে নামাজের জামাআতে না আসা ব্যক্তিদের সম্পর্কে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন-
‘আমি ইচ্ছা পোষণ করি যে, নামাজ শুরু করার আদেশ দেই, ফলে মুসল্লিগণ নামাজে দণ্ডায়মান হয়। আর তখন আমি একজনকে হুকুম দেই এবং সে এ নামাজের ইমামতির দায়িত্ব পালন করে।

আর আমি সেই সব লোকদের কাছে যাই, যারা নামাজের জন্য (মসজিদে) উপস্থিত হয় নাই এবং (জামাআতে উপস্থিত না হওয়ার কারণে) তাদের ঘরে আগুন ধরিয়ে দেই।’

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওা সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আজান শুনতে পেল এবং ন্যায়সঙ্গত ওজর ছাড়া মসজিদে আসল না, তার নামাজ সিদ্ধ হবে না।’ (ইবনে মাজাহ)

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘যে ব্যক্তি আগামীকাল আল্লাহর সঙ্গে মুসলিমরুপে সাক্ষাৎ করতে আনন্দ অনুভব করার ইচ্ছা পোষণ করে; তার উচিত যে-
‘যখনই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের উদ্দেশ্যে আজান দেয়া হয়, তখনই উহাতে (নামাজে) সাড়া দিয়ে (প্রত্যেক ওয়াক্তের) নামাজগুলোর হেফাজত করা জরুরি।’ (মুসলিম)

পরিশেষেৃ
মসজিদে গিয়ে জামাআতে নামাজ আদায় প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশ। প্রিয়নবির নির্দেশ সুন্নাত তরিকায় পালন করা আবশ্যক কর্তব্য। যে ব্যক্তি এ সুন্নাত পালন থেকে বিরত থাকল সে পথভ্রষ্ট হলো।

আর যে ব্যক্তি প্রিয়নবির ঘোষণা অনুযায়ী উত্তমরূপে ওজু করে মসজিদসমূহের মধ্যে কোনো একটি মসজিদে গমন করে, সে সময় আল্লাহ তাআলা তার প্রত্যেক কদমে একটি করে নেকি লেখা হয়, তার একটি মর্যাদা বৃদ্ধি পায় এবং একটি গোনাহ মাফ হয়।’

হজরত ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আমরা দেখেছি নামাজের জামাআতে কেউ পিছিয়ে থাকত না কেবল ঐরূপ মুনাফেক ব্যতিত; যারা নেফাকের সঙ্গে জড়িত।’

সুতরাং নামাজের আজান শুনা গেলে ঘরে বা দোকান-পাটে অবস্থান এবং নামাজ আদায় নয় বরং জামাআতে নামাজ আদায়ে মসজিদে যাওয়া প্রিয়নবির সুন্নাতের অনুসরণ আবশ্যক।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জামাআতের সঙ্গে নামাজ আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button