অনেকেই জানেন না এই ২৯টি বিষাক্ত খাবার সম্পর্কে, সবার জেনে রাখা উচিত
ঝিনাইদহের চোখ ডেস্ক:
অহরহই আমরা নাম জানা বা অজানা খাবার খাচ্ছি। এসব খাবারে অনেক সময় মরনব্যাধি রোগ থাকে। বিষ থাকে। মৃত্যুর আশঙ্কা থাকে। কিন্তু আমাদের অজ্ঞতার কারণে না বুঝেই দিব্বি এসব খাবার হজম করে যাচ্ছি। এমন কিছু খাবার রয়েছে যা প্রায় প্রতিদিন আমাদের খাবার মেন্যুতে থাকে। থাকে রান্না ঘরেও। তবে বিষাক্ত খাবারগুলোর নাম জানা থাকলে আমরা সচেতন হতে পারি। বিষমুক্ত থাকতে পারি। যুগান্তর পাঠকদের জন্য বিষাক্ত এমন ২৯টি খাবারের তালিকা দেয়া হলো-
১. আলু
প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় আলু থাকে না এমন লোক খুব কমই দেখা যায়। সহজলভ্যতা, শর্করা, আর নানা ধরনের খাদ্যদ্রব্য প্রস্তত করা যায় বিধায় বিশ্বব্যাপী আলুর চাহিদা ব্যাপক। তবে সবুজ দাগযুক্ত আলু শরীরের জন্য ক্ষতিকর। এ ধরনের আলু অর্থনৈতিক বিবেচনায় নির্দিষ্ট সময়ের আগেই উত্তোলন করা হয়। এতে সোলানাইন নামক বিষাক্ত পদার্থ থাকে যা রান্না এবং পোড়ানোর পরও দূর হয় না। বিশেষজ্ঞরা বলেন, আলুর সবুজ অংশ ফেলে দেওয়া সবসময় নিরাপদ নয়। বরং এই ধরনের আলু ব্যবহার না করাই উত্তম। এছাড়া আলুর পাতা ও কাণ্ডে গ্লাইকো অ্যাল্কালয়েড থাকে। বাসায় অনেক দিন পর্যন্ত আলু রেখে দিলে এর মধ্যে গ্যাঁজ হয়ে যায়। এই গ্যাঁজে গ্লাইকো অ্যাল্কালয়েড থাকে যা আলোর সংস্পর্শে বৃদ্ধি পায়। এজন্য আলু সবসময় ঠাণ্ডা ও অন্ধকার জায়গায় রাখতে হয়। সবুজ ও গ্যাঁজ হওয়া আলু খেলে ডায়রিয়া, মাথাব্যাথা, এমনকি কোমায় চলে যেতে পারে। ফলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
২. টমেটো
টমেটো একটি দৃষ্টিনন্দন শীতের সবজি। এটি একটি সুস্বাদু ও পুষ্টিসমৃদ্ধ সবজি। সবজি হিসেবে টমেটোর জুড়ি অনেক। টমেটো আমাদের দেশে সারা বছর পাওয়া যায়। এটি যেমন কাঁচা খাওয়া যায়, ঠিক একইভাবে রান্না করে বা রান্না সুস্বাদু করার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। টমেটোর কাণ্ড কোমল ও রসাল। উদ্ভিদ বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে টমেটো একটি ফল হলেও, সবজি হিসেবেই সারা বিশ্বে টমেটো পরিচিত। সবজি এবং সালাদ হিসেবে ভিটামিন এবং খনিজ সমৃদ্ধ টমেটোর বেশ চাহিদা। তবে আলুর মতোই টমেটোর পাতা ও কাণ্ডেও গ্লাইকো অ্যাল্কালয়েড থাকে যা হজমে সমস্যা সৃষ্টি করে। কাঁচা সবুজ টমেটোতেও একই উপাদান আছে। তবে অল্প পরিমাণে খেলে সমস্যা নেই।
৩. শিম বিচি
অনেকেরই পছন্দের সবজির তালিকায় আছে শিমের নাম। এটি খুবই সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। শিম, শিমের বিচি এবং শিমের পাতাও শাক হিসেবে খাওয়া যায়। শিমের বিচিতে রয়েছে উচ্চমানের ফাইবার প্রোটিন, যা শরীরের জন্য খুবই প্রয়োজন। এতে কোনো কোলেস্টেরল নেই। এনার্জি বা শক্তির জন্য শিমে রয়েছে শতকরা ২০ ভাগ প্রোটিন ও উচ্চমাত্রার কার্বোহাইড্রেট। তবে শিমের বিচিতে ফাইটোহিমাটোগ্লুটানিন নামক বিষ থাকে। যা আপনাকে মারাত্মক অসুস্থ্য করে দিতে পারে। যার ফলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাই রান্নার পূর্বে ১০ মিনিট সিদ্ধ করে তারপর রান্না করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে ক্ষতিকারক উপাদান আর থাকবে না।
৪. লাল মটরশুটি
স্বাস্থ্যসম্মত সবজি হিসেবে মটরশুটির খ্যাতি রয়েছে। লাল মটরশুটি যুবকদের একটি প্রাকৃতিক বসন্ত বলা হয়ে থাকে। এটি সারাবছর প্রস্তুতির জন্য আপনি প্রয়োজনীয় ভিটামিন বি পাবেন। খাদ্যের ক্রমাগত খরচ হৃদয়কে শক্তিশালী করতে সাহায্য করবে, ওজন হারাবে, টক্সিন অপসারণ করবে। কিন্তু লাল মটরশুটিতে রয়েছে বিষাক্ত পদার্থ। আর এ বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে এ ধরনের মটরশুটিকে ১০ মিনিটেরও বেশি সময় ধরে সেদ্ধ করতে হয়। সেদ্ধ করা ছাড়া রান্না করলে এটি দুই থেকে তিনগুণ বেশি ক্ষতি করতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, তাপ ক্ষতিকর সক্রিয় পদার্থকে ধ্বংস করে। ফলে তা আমাদের শরীরের কোষে আক্রমণ করতে পারে না। আর তাই এ মটরশুটি রান্নার আগে অবশ্যই সেদ্ধ করে নিতে হবে।
৫. আপেল
প্রবাদে আছে– “অহ ধঢ়ঢ়ষব ধ ফধু রিষষ শববঢ় ঃযব ফড়পঃড়ৎ ধধিু” অর্থাৎ আপনি যদি প্রতিদিন একটি আপেল খান তাহলে আপনাকে আর ডাক্তারের কাছে যেতে হবে না। আপেলের মধ্যে এক ধরনের অ্যান্টি অক্সিডেন্ট থাকে, যা কুয়েরসেটিন নামে পরিচিত। এটি আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে এবং আমাদের শরীর ভাল রাখতে সাহায্য করে। কিন্তু আপেলের বিচিতে হাইড্রোজেন সায়ানাইড নামক বিষ থাকে। আমরা সাধারণত আপেলের বিচি খাই না এবং একটা আপেলে খুব বেশি বিচি থাকেও না। কিন্তু আপেলের বিচি কোন কারণে বেশি পরিমাণে খেয়ে ফেললে ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই আপেলের জুস তৈরির সময় বিচি যেন না যায় সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।
বিষাক্ত খাবারের তালিকায় নাম আছে কামরাঙারও। ছবি: সংগৃহীত
৬. কামরাঙা
কামরাঙা চুল, ত্বক, নখ ও দাঁত উজ্জ্বল করে। মুখে ব্রন হওয়া আটকায়। কামরাঙা কোনোভাবেই খালি পেটে খাওয়া চলবে না। ডায়ারিয়া হলে কামরাঙা খাওয়া চলবে না। কামরাঙা একটি অক্সালেট সমৃদ্ধ ভিটামিন সি জাতীয় ফল। সে কারণে যাদের কিডনির সমস্যা রয়েছে, তাদের কামরাঙা খেতে নিষেধ করছেন চিকিত্সকরা। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এরমধ্যে এক ধরনের অজানা নিউরোটক্সিন থাকে। স্বাভাবিক কিডনির যা কোনো ক্ষতি করে না। কিন্তু কারও কিডনি খারাপ হলে সেই বিষ কিডনির আরো ক্ষতি করতে পারে। খাওয়ার সময় তা বোঝাও সম্ভব না।
৭. জায়ফল
জায়ফল খাবারকে সুস্বাদু আর সুগন্ধি করে, ভেষজ উপকারিতাও অনেক। খাবারে দিলে সে খাবার চট করে নষ্ট হয় না। নবম শতাব্দীর শুরুর দিকে থিওডর দ্য স্টুডাইট তাঁর শিষ্যদের খাবারের ওপরে জায়ফল গুঁড়ো দিয়ে খেতে বলতেন। স্বাস্থ্য আর মনোযোগ দুই-ই ভাল হবে। জায়ফল গরম মশলায় ব্যবহারের পাশাপাশি ব্যবহার করা হয় বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি বা রান্নায়। নানা রকম ওষুধ হিসেবেও জায়ফল ব্যবহার করা হয়। তবে জায়ফলে মাইরিস্টিসিন আছে যা মনের ওপরে কাজ করে। সাধারণত রান্নায় যে পরিমাণ জায়ফল ব্যবহার করা হয় তা ক্ষতিকর নয়। কিন্তু বেশি পরিমাণে খেলে বমি, ঘাম ঝরা, মাথা ঘোরা, মাথা ব্যথা ও হ্যালুসিনেশন হয়।
৮. সুগন্ধি ফল
এক টুকরো ভালো ও সুগন্ধি মশলা শুকনো খাবারে মেশালে তেমন কোনো ক্ষতি হয় না কিংবা এর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায় না। কিন্তু বেশি পরিমাণে খেলে মাথা ব্যাথা, বমি বমি ভাব, মাথা ঘোরা এমন কি হ্যালুসিনেশনের মতো নানা ধরনের শারীরিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে! বাদামে মিরিসটিসিন নামে এক ধরনের সাইকোঅ্যাক্টিভ উপাদান রয়েছে, যা আমাদের জন্য ক্ষতিকর। বিশেষজ্ঞরা বলেন, রোজম্যারি ও ওরেগানোর মতো অন্যান্য মশলা বেশি পরিমাণে খেলে আমরা আরো বেশি সক্রিয় হবো।
৯. শুকনো ফল
আমাদের অনেকেরই শুকনো ফলের প্রতি এক ধরনের আসক্তি দেখা যায়। ধুয়ে বা না ধুয়ে অনেকসময় আমরা এসব ফল মুঠো ভরে খেয়ে ফেলি। কিন্তু এসব ফল যত কম খাওয়া যায় আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ততটাই মঙ্গল। বাজারে বিক্রি হওয়া এসব শুকনো ফলের বেশিরভাগ সালফার এবং পটাসিয়াম জাতীয় দ্রব্য ব্যবহার করে শিল্প কারখানায় শুকানো হয়। যা হজমে ব্যাঘাত ঘটায়। আর তাই সুষ্ঠু হজম ক্রিয়ার জন্য শুকনো ফল বেশি পরিমাণে না খাওয়াই উত্তম। বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্রচুর পরিমাণ সালফারের ব্যবহার হজমের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এ ছাড়া এটা পাকস্থলির সমস্যাও সৃষ্টি করতে পারে। যে সব শস্য সঠিকভাবে সংরক্ষিত হয়নি, সেগুলোতে মাইক্রো-টক্সিন নামে এক ধরনের ছত্রাক দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে যা আমাদের জন্য বিপজ্জনক।
১০. বিষ ফল
এলডার বেরি দেখতে দারুণ। গন্ধও চমৎকার। এ ধরনের বেরি বা আঙুর দিয়ে সিরাপ তৈরি হয়। পাই বা কেকের সিজনিং, জ্যাম, চাটনি এমনকী, লিকারও তৈরি হয় এই ফল দিয়ে। কিন্তু ভালো করে রান্না করতে না পারলে বিপদ। এই ফলের মধ্যে থাকে বিষ। না পাকা অবস্থায় এই ফল খেলে মৃত্যু অবধারিত। আর পাকা ফলও ঠিকভাবে রান্না করে খেতে হয়। এল্ডার বেরির পাতা এবং ডালে থাকে সায়ানাইড বিষ। কোনোভাবে তা পেটে চলে গেলে মৃত্যু অবধারিত।
লাল আঙুর ফলের ব্যাপারেও সাবধান থাকতে হবে। ছবি: সংগৃহীত
১১. গেঁজিয়ে যাওয়া হাঙর
এটি বহু পুরনো ভাইকিং খাবার। আইসল্যান্ডে এটি জাতীয় খাবারের মর্যাদা পেয়েছে। পচে যাওয়া গ্রিনল্যান্ডের শার্ক। এ ধরনের হাঙর ধরার পর বালির নীচে পুঁতে দেওয়া হয়। ফলে হাঙরের দেহ খানিক পচে যায়, খানিক শুকিয়ে যায়। এভাবে ১২ সপ্তাহ রাখার পর হাঙরের শরীর থেকে সমস্ত তরল বেরিয়ে যায়। পচে যাওয়া সেই হাঙর তখন শুকোতে দেওয়া হয়। খাওয়া হয় আরো কয়েকমাস পর।
১২. কাঁচা মধু
কাঁচা মধু গরম করা হয় না এবং নিয়মিত মধুর মতো পেস্টুরাইজ করা হয় না। কাঁচা মধুতে অনেক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং এনজাইম থাকে যা গরমকালে ধ্বংস হয়ে যায়। কাঁচা মধুতে গ্রায়ানোক্সিন থাকে। তাই এক টেবিল চামুচ কাঁচা মধু খেলে মাথাঘোরা, দুর্বল লাগা, অত্যধিক ঘাম হওয়া, বমি বমি ভাব হওয়া এবং বমি হওয়া এই উপসর্গ দেখা দেয়।
১৩. কাজুবাদাম
মিষ্টি কাজুবাদাম ও তেতো কাজুবাদাম এই দুই ধরণের কাজুবাদাম পাওয়া যায়।তুলনামূলক ভাবে তেতো কাজুবাদাম এ প্রচুর হাইড্রোজেন সায়ানাইড থাকে।সাত থেকে দশটা তেতো কাজু বাদাম কাঁচা খেলে বড়দের সমস্যা হতে পারে এবং ছোটদের জন্য প্রাণনাশক হতে পারে।কিছু কিছু দেশ এই তেতো বাদাম বিক্রি করা অবৈধ ঘোষণা করেছ, যেমন- নিউজিল্যান্ড।আমেরিকাতে কাঁচা কাজু বাদাম বিক্রি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
১৪. তিতা কাজুবাদাম
অ্যামন্ড বা কাজু বাদাম কিন্তু বাদাম নয়, বিভিন্ন স্বাস্থ্যগুণে সমৃদ্ধ একধরণের বীজ। কাজু বাদাম দু’ধরণের রয়েছে, মিষ্টি কাজুবাদাম এবং তিতা কাজুবাদাম। অনেকেই মিষ্টি কাজুবাদামের চেয়ে তিতা কাজুবাদাম বেশি পছন্দ করে। কেননা তিতা কাজুবাদামের গন্ধ আর স্বাদ বেশি। কাজুবাদাম সম্পর্কে এসব তথ্য আমরা অনেকেই জানি। যা জানি না তা হলো, তিতা কাজুবাদামে সায়ানাইট থাকে। যা ঠিকভাবে প্রসেসিং করা না হলে কাজুবাদামের এই বিষই হতে পারে আপনার মৃত্যুর কারণ।
১৫. ব্রাজিলীয় বাদাম
যদিও এ ধরনের বাদামের প্রচলন আমাদের দেশে খুব একটা নেই তবুও জেনে রাখা ভালো যে এ ধরনের বাদাম সামান্য পরিমাণে খেতে হবে। এটি হচ্ছে ব্রাজিলীয় বাদাম। যা দেখতে অর্ধ-চন্দ্রাকৃতি। এ ধরনের বাদামে রয়েছে সেলেনিয়াম যা আমাদের শরীরকে প্রচুর পরিমাণে বিষাক্ত করতে পারে। দিনে ৩টির বেশি বাদাম না খেলে সেলেনিয়াম বিষে আক্রান্ত হওয়া এড়ানো যাবে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, বাদাম যখন মানব শরীরে প্রবেশ করে তখন তা ঝুঁকিপূর্ণ হয় এবং তা ধীরে ধীরে ভয়াবহ আকার ধারণ করে। বাদাম হার্টের জন্য উপকারী হলেও তাতে যে প্রচুর পরিমাণে রাসায়নিক পদার্থ রয়েছে তা অনেক সময় মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে।
ব্যাঙের ছাতা আর মাশরুম সমার্থক হলেও, কিছুটা ভিন্নতা কিন্তু রয়েই গেছে। ছবি: সংগৃহীত
১৬. চেরি
চেরি জনপ্রিয় একটি ফল। চোখ ধাঁধানো হলকা টক মিষ্টি ফল চেরি। আকৃতি কিছুটা অরবড়ই-এর মত। দেহ সামান্য খাঁচযুক্ত। কাঁচা অবস্থায় সবুজ, পরে হালকা হলুদ এবং সর্বশেষ গাঢ় লাল রং ধারণ করে। গাছের আকৃতি মধ্যম মানের। চেরি হচ্ছে ‘প্রুনাস’ গণের অন্তর্ভুক্ত একটি ফল। চেরি কাঁচা বা রান্না করেও খাওয়া হয় এবং মদ তৈরিতে ব্যবহার হয়। চেরির পাতা এবং বীজে বিষাক্ত উপাদান আছে।যখন চেরির বীজকে চুষা বা চূর্ণ করা হয় তখন প্রুসিক এসিড (হাইড্রোজেন সায়ানাইড)উৎপন্ন হয়।যখন ই চেরি খাবেন এর বীচি চুষে খাবেন না।বরই এবং পীচ ফলের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।
১৭. এপ্রিকট ও বরই
চিন্তা করার কিছু নেই। এই মজাদার ফলগুলোতে কোনো বিষাক্ত পদার্থ নেই। বিষাক্ত পদার্থ রয়েছে এদের বীজে। যা সায়ানাইড পরিবারের গোত্রভূক্ত। কখনও কখনও এগুলো দিয়ে তৈরি জ্যাম, স্প্রেড বা দুধ জাতীয় পণ্যসহ বিভিন্ন খাবারের প্যাকেটের গায়ে এসবের বীজ ফাটানো, গেলা বা চাবানো যাবে না বলে সতর্কীকরণ লেবেল সাঁটা থাকে। বিশষজ্ঞরা বলেন, বীজের উপাদানগুলো সনাক্ত করা গুরুত্বপূর্ণ। সেই সাথে সেই সুনির্দিষ্ট ফল কম পরিমাণে খেতে হবে।
১৮. ক্যাস্টর অয়েল
রেড়ির তেল বিভিন্ন ধরণের ক্যান্ডি,চকলেট ও অন্যান্য খাদ্যে ব্যবহার করা হয়।অনেকেই আছেন যারা প্রতিদিন একটু ক্যাস্টর অয়েল খেয়ে থাকেন এবং বাচ্চাদেরকেও জোর করে খাওয়ান।রেড়ীর বীচিতে রিচিন নামক বিষ থাকে যা খুবই মারাত্মক বিষ।যারা এই বীজ সংগ্রহরের কাজ করে থাকেন তাদের মারাত্মক ধরণের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। রেড়ীর একটা বীজ খেলে একজন মানুষ মারা যায় আর চারটা খেলে একটা ঘোড়া মারা যায়। আমরা ভাগ্যবান, কারণ আমরা যে ক্যাস্টর অয়েল কিনি তা ভালোভাবে প্রস্তুত করা থাকে।
১৯. ফুগু বা পাফার ফিস বা পোটকা মাছ
সবচেয়ে ভয়ংকর খাদ্যের এক নম্বরে আছে পাফার ফিস বা পোটকা মাছ যা জাপানে ফুগু নামে পরিচিত। ফুগু একটি অত্যন্ত দামী এবং উপাদেয় খাদ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ফুগু মাছ দেখতে অনেকটা বাংলাদেশি পোটকা মাছের মত। তবে জাপানী বিষাক্তকর এই ফুগু সাইজে বাংলাদেশি পোটকা মাছের চাইতে অনেক বড়। যখন মাছটি খাবার জন্য উপযুক্তভাবে তৈরি করা হয় তখন এতে ভয়ের কিছু থাকে না। তবে যখন মাছটি খাবারের জন্য ভালোভাবে তৈরি করা হয় না তখন এটিই আপনার শেষ খাবার হতে পারে। কেননা এই মাছে রয়েছে টেট্রোডোটক্সিন নামক এক প্রকার প্রাণঘাতী বিষ যা থাকে মাছের লিভারে।তবে জাপানের আইনে, সকল রেস্টুরেন্ট এই খাবার তৈরি করা হয় না। শুধুমাত্র অভিজ্ঞ শেফ দ্বারাই এই খাবার তৈরি করা হয়। যাদের কমপক্ষে তিন বছরের একটি ট্রেনিং করতে হয়। অনেক গন্যমান্য ফুগু শেফরা খাবারের মধ্যে খুব সামান্য পরিমান টেট্রোডোটক্সিন রেখে দেন খাবার খাওয়ার সময় কিছুটা শিহরন জাগে। সাধারণত বছরে প্রায় ১০০ জন মানুষের মৃত্যু হয় এই ভয়ঙ্কর ফুগু পাফার ফিস বা পোটকা মাছে খেয়ে।
২০. সানাকজি
কোরিয়াতে এ ধরনের বিষাক্ত অক্টোপাসের নাম সান-নাকজি। সাধারণত রান্না না করেই এ ধরনের অক্টোপাস কোরিয়ায় খেতে দেওয়া হয়। সেটাই ডেলিকেসি। তবে শরীর থেকে পা’গুলো আলাদা করে দেওয়া হয়। শরীরেই থাকে বিষ, যা খাওয়া যায় না। কিন্তু পা’গুলো আলাদা করে সিসেম তেল দিয়ে মাখিয়ে সার্ভ করা হলেও পা’গুলো নড়তে থাকে। অতিথিদের বলে দেওয়া হয়, সাবধানে খেতে। যে কোনো সময় গলায় লেগে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে এবং মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ করে ফেলতে পারে। এগুলো মানুষের মৃত্যুর কারণ না হলেও, মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।
কোরিয়াতে এ ধরনের বিষাক্ত অক্টোপাসের নাম সান-নাকজি। ছবি: সংগৃহীত
২১. হাকার্ল
গ্রিনল্যান্ডে একধরণের হাঙ্গরের মাংসের বেশ কদর রয়েছে। এই ধরণের হাঙ্গরের এক অদ্ভুত সমস্যা হলো, এগুলোর মূত্রাশয় বা কিডনি থাকে না। ফলে শরীরের ক্ষতিকর বিষাক্ত সব বর্জ্য বের হতে না পেরে শরীরের বিভিন্ন অংশে গিয়ে জমা হয়। ফলে এধরণের হাঙ্গর থেকে তৈরি খাবার খেলে মানুষ বিভিন্ন ধরণের খ্যাদ্যাভাসজনিত রোগের শিকার হতে পারে। তাই হাকার্ল রান্না করার বিশেষ সব ধাপ রয়েছে, যেগুলো না জানলে এগুলো থেকে দূরে থাকাই ভালো। তবু কে আর দূরে থাকে, যাদের খাবার তারা ঠিকই খায়।
২২. আকি বা আকি আপেল
আকি বা আকি আপেল খুবই বিষাক্ত একটি ফল। এটি জ্যামাইকার জাতীয় ফল। একে ব্লাঘিয়া সাপিডা নামেও ডাকা হয়। আফ্রিকায় আকি খুবই জনপ্রিয় একটি খাবার। একে ফল হিসেবে কিংবা অন্যান্য ট্রেডিশনাল বিভিন্ন খাবারের সাথেও মিশিয়ে খাওয়া হয়। তবে ঝামেলা বাধে যখন ফলটি কাচা থাকে। কারন কাচা ফলের মধ্যে থাকে হাইপোগ্লাইসিন নামক এক প্রকার বিষ। তবে ফল পাকার পর যখন তা লাল হয়ে যায় এবং ফলের বাইরের আবরন স্বাভাবিক ভাবেই খুলে যায় তখন তা নিরাপদেই খাওয়া যায়। তবে পাকা ফলের মধ্যে থাকা বড় কালো বীজের মধ্যে তখনও হাইপোগ্লাইসিন থাকে। হাইপোগ্লাইসিন বিষ গ্রহনের ফলে যে বিষক্রিয়া হয় তাতে বমি হয় এবং পরিনতিতে মৃত্যুও হতে পারে। চিকিৎসা প্রনালী আবিষ্কারের আগে এই বিষে মৃত্যুহার ছিলো ৮০% তবে এখন অনেকাংশেই কমে গেছে।
২৩. বন্য মাশরুম
মাশরুম অনেকেরই পছন্দের খাবার, বেশ উপাদেয়। ছোটবেলায় আমরা বনে জঙ্গলে বিভিন্ন জায়গায় ব্যাঙের ছাতা গজিয়ে উঠতে দেখতাম, বড় হয়ে জেনেছি এগুলোকে মাশরুম বলে। তাই বলে, মাশরুম ভেবে ব্যাঙের ছাতা যেন খেতে যাবেন না ভুলেও। ব্যাঙের ছাতা আর মাশরুম সমার্থক হলেও, কিছুটা ভিন্নতা কিন্তু রয়েই গেছে। ব্যাঙের ছাতা বলতে আমরা যে বন্য মাশরুমকে বুঝি, তা কিন্তু উপাদেয় নয়। কিছু বন্য মাশরুম তো খুবই ক্ষতিকর। ক্ষেত্রবিশেষে মৃত্যুর কারণও হতে পারে। বন্য মাশরুম মানুষের শরীরে অভ্যন্তরীণ ব্যাথা বেদনার সৃষ্টি করতে পারে, বমির উদ্রেক করতে পারে, এমনকি হার্ট, লিভার এবং কিডনি নষ্ট করে দিতে পারে। শুধু মাশরুমই নয় যে কোন বন্য কিছু খাবার আগে বিশেষ ধরণের সতর্কতার প্রয়োজন রয়েছে।
২৪. বিষাক্ত ব্যাঙের ছাতা
সারা পৃথিবীতেই ব্যাঙের ছাতা খাওয়ার চল আছে। কিন্তু সব ধরনের ছাতা খাওয়া যায় না। অনেক ব্যাঙের ছাতাই হয় বিষাক্ত। ‘আমানিতা ফ্যালোয়ডেস’ তেমনই একপ্রকার ছত্রাক। কেউ কেউ যাকে ‘মৃত্যু ছত্রাক’ও বলেন। ঠিকমতো রান্না না করে এই ছত্রাক খেলে মৃত্যুও হতে পারে। কিডনি এবং লিভার নষ্ট করে দেয় এই ছত্রাক।
২৫. বিষাক্ত ব্যাঙ
নামিবিয়ার ‘বুলফ্রগ’ খাওয়ার নির্দিষ্ট সময় আছে। বলা হয়, তৃতীয় বৃষ্টির আগে একে মারা ঠিক নয়। তাহলে ব্যাঙের শরীরে বিষ থেকে যাবে। তৃতীয় বৃষ্টির দিনে নাকি এই ব্যাঙ সবচেয়ে বেশি ডাকতে থাকে। এরপর কাঠের উনুনে সেই ব্যাঙ রান্না করাই রেওয়াজ। এই রীতি ঠিকমতো পালন না করলে কিডনি নষ্ট হওয়ার সমূহ আশঙ্কা।
পাফার ফিস বা পোটকা মাছ যা জাপানে ফুগু নামে পরিচিত। ছবি: সংগৃহীত
২৬. কাসু মারুজু চিজ বা পনির
কাসু মারুজু পনির বিশ্বের সবচেয়ে মারাত্মক পনির। ইতালির এই পনিরটি পচা পনির নামেও পরিচিত। কাসু মারজু তৈরি হয় সার্ডিনিয়ান ভেড়ার দুধে থেকে। পনির তৈরির অন্যান্য প্রক্রিয়া স্বাভাবিক হলে কাসু মারজু পনির কে রাখা হয় খোলা স্থানে যাতে করে চিজ মাছি এসে পনিরের মধ্যে ডিম পারতে পারে। আর এই ডিম গুলোই ফার্মেন্টেশনের জন্য দায়ী। ডিম ফুটে লার্ভা বের হয় এবং লার্ভা পনিরের কিছুটা অংশ খেয়ে ফেলে। আর এভাবেই ফারমেন্টেশন হয়। অনেকসময় পনিরের সাথে খাওয়া লার্ভা মানুষের পেটেও কিছুক্ষনের জন্য জীবিত থেকে যায়। এতে করে বিভিন্ন সমস্যা হয় যেমন: রক্তপড়া সহ ডায়রিয়া কিংবা খুব বেশি বমি হওয়া। আবার লার্ভাগুলো লাফিয়ে প্রায় ৬ ইঞ্চি পর্যন্ত উঠতে পারে তাই খাওয়ার সময় সাবধান থাকতে হয়। এই কাজু চিজ এখন তৈরি করা নিষিদ্ধ ঘোষনা করা হয়েছে। তবুও কিছু লোক এটা অগোচরে বিক্রি করে এবং খায়।
২৭. কাসাভা রুট বা কাসাভার মূল
কাসাভা মূল সাধারনত টাপিওকা তৈরিতে ব্যবহার হয় এবং সবজি হিসেবেও অনেকের ডায়েট কন্ট্রোলে ব্যবহৃত হয়। কেননা চাল এবং ভুট্টার পর কাসাভার মূলেই সবচেয়ে বেশি কার্বোহাইড্রেট আছে। খাবার হিসেবে কাসাভা মুল চূর্ন করে, ভাপে সিদ্ধ করে, পুডিং হিসেবে এবং জুস তৈরি করে খাওয়া হয়। এই গাছ কেবল আফ্রিকা এবং দক্ষিন আমেরিকাতেই দেখা যায়। কাসাভার পাতায় এবং মূলে রয়েছে বিষাক্ত হাইড্রোজেন সায়ানাইড। ভালোভাবে রান্না করা না হলে এই খাবার খেয়ে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন হু এর মতে কাসাভা বিষে আক্রান্ত প্রতি ৫ জনের একজন বিষক্রিয়ায় মারা যায়। তবে কাসাভা মুল ভালোভাবে চাষ করে, স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে রান্না করলে খাওয়া যায়।
২৮. জায়ান্ট বুলফ্রগ
নামিবিয়ার জনগনের কাছে জায়ান্ট বুলফ্রগ একটি রুচিকর এবং সুখাদ্য হিসেবেই পরিচিত। বিশেষত ওভ্যাম্বো মানুষেরা এটা তাদের ঐতিহ্যবাহী খাবার হিসেবে মনে করে এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পরিবেশন করে। নামিবিয়ার সবচেয়ে বড় এই বুলফ্রগ লম্বায় প্রায় ১০ ইঞ্চি হয় এবং ইদুর থেকে শুরু করে অন্যান্য সরীসৃপও খায় এমনকি অন্যান্য ব্যাঙও খায়। এই ব্যাঙের সবচেয়ে ভয়ের বিষয় হলো যখন কোন অপিরিনত ব্যাঙকে খাওয়া হয় যা এখনো বংশবৃদ্ধি করে নি। এই ধরনের ব্যাঙে অশিকেটাকাটা নামক এক ধরনের বিষ থাকে। এই বিষের কারনে সাময়িক কিডনি ফেইলিয়ার হয় কিংবা মৃত্যুও হতে পারে। এবং একটা ব্যাঙ খাওয়ার জন্য নিশ্চই কেউ এই রিস্ক নিতে চাইবে না!
২৯. রক্ত ঝিনুক
যে কোন জ্যান্ত ঝিনুকের মধ্যেই কি একটা ব্যাপার আছে, কাছ থেকে দেখলে মনে কেমন জানি অস্বস্ত্বিকর এক অনুভূতির জন্ম দেয়। যা হোক, প্রশান্ত মহাসাগর, মেক্সিকো উপসাগর এবং আটলান্টিক মহাসাগরের কিছু জায়গায় একধরনের ঝিনুকের চাষ হয়, যার নাম “ব্লাড ক্লামজ” বা “রক্ত ঝিনুক”। এ ঝিনুক প্রচুর পরিমাণ হিমোগ্লোবিনের আধার। যে মানুষের শরীরে হিমোগ্লোবিনের অভাব রয়েছে তার জন্য রক্ত ঝিনুক খ্বুই উপকারী। কিন্তু বিপদের কথা হচ্ছে, রক্ত ঝিনুকের মধ্যে নানা ধরণের ব্যাকটেরিয়া থাকে। তাই রক্ত ঝিনুক খেলে মানুষের আমাশয়, টাইফয়েড, হেপাটাইটিস ‘এ’ সহ নানা ধরণের রোগে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি থাকে। অবশ্য মানুষ এ সব রোগকে থোরাই কেয়ার করে! এত রোগের ঝুঁকি থাকার পরেও নানা দেশের মানুষের কাছে খাদ্য হিসেবে রক্ত ঝিনুকের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।