সন্তানের নাম রাখার বিষয়ে হাদিসের নির্দেশনা
ঝিনাইদহের চোখঃ সন্তানের নাম রাখার ব্যাপারে ইসলাম আমাদের উপর কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করেছে, আর তা মেনে চলা মুসলিম হিসাবে আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। উত্তম নাম রাখার গুরুত্ব সম্পর্কে হযরত আবু দারদা (রা.) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কিয়ামতের দিন তোমাদেরকে ডাকা হবে তোমাদের এবং তোমাদের পিতার নাম ধরে। অতএব, তোমাদের নামসমূহ ভালো দেখে রাখ । (মেশকাত-আবু দাউদ ও আহমদ)
মহান আল্লাহ তায়ালার নিকট সর্বোত্তম ও পছন্দনীয় নাম কি হতে পারে এ সম্পর্কে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, আল্লাহ তায়ালার নিকট তোমাদের নামসমূহের মধ্যে সর্বাপেক্ষা প্রিয় নাম হলো আব্দুল্লাহ ও আবদুর রহমান। (মেশকাত-মুসলিম)
হযরত আবু ওহাব আল জুশামী (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন- রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা নবীদের নামে নিজেদের নাম রাখো। তবে মহান আল্লাহ তায়ালার নিকট আব্দুল্লাহ ও আবদুর রহমান নামই অধিক প্রিয়। আর অর্থ ও বাস্তবতার দিক দিয়ে সর্বাধিক সত্য নাম হল হারেস (অর্জনকারী) ও হাম্মাম (সংকল্পকারী) এবং সর্বাধিক মন্দ নাম হরব(যুদ্ধ) ও মুররা(তিক্ত)। (মেশকাত-আবু দাউদ)। আর মহান আল্লাহ তায়ালার নিকট সর্বাপেক্ষা ঘৃণিত ও লাঞ্চিত ঐ ব্যক্তি, যে রাজাধিরাজ নাম করে। (মেশকাত-বুখারী)। উপরোক্ত প্রথম হাদীসদ্বয়ের ব্যাখ্যায় আল্লামা তাবরানী (রহ.) বলেন, যে নামের মধ্যে আল্লাহ তায়ালার দাসত্ববোধক অর্থ রয়েছে সে নামই আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়।
এছাড়াও উত্তম নাম হিসাবে নবী-রাসূলগণের নাম, সাহাবায়ে কেরামগণের নাম বুযুর্গ ব্যক্তিগণের নাম এবং সুন্দর অর্থবোধক যেকোন নাম রাখা যায়। কাফির-মুশরিক বা কোন পাপিষ্ঠ ব্যক্তির নামে বা খারাপ ও কুৎসিত নামে কারো নাম থাকলে তা পরিবর্তন করে ভালো নাম রাখা জরুরী। এ ব্যাপারে হাদীসে বর্ণিত আছে যে, হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বলেন, নবী করীম (সা.) খারাপ ও কুৎসিত নাম পরিবর্তন করে দিতেন। (মেশকাত-তিরমিযি)। প্রখ্যাত তাবেয়ী হযরত মাসরূক (রহ.) বলেন, একবার আমি উমর (রা.) এর সাথে সাক্ষাত করলাম। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কে ? আমি বললাম, আজদার পুত্র মাসরূক। তখন তিনি বললেন, আমি নবী করীম (সা.) কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, আজদা হল শয়তান। (মেশকাত, ইবনে মাজাহ ও আবু দাউদ) কন্যা ছিলো যাকে আছিয়া (পাপিয়সী) নামে ডাকা হতো। অতপর রাসূলুল্লাহ (সা.) তার নাম পরিবর্তন করে জামিলা রাখলেন। (মেশকাত- মুসলিম)। হযরত সাহল বিন সাআদ (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মুনযির ইবনে আবু উসাইদ যখন ভূমিষ্ট হল তখন তাকে নবী করীম (সা.) এর নিকট আনা হল, তিনি তাকে নিজ উরুর উপর রাখলেন এবং জিজ্ঞেস করলেন এর নাম কি ? উত্তর দাতা বললেন, ‘অমুক’ তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, না বরং এর নাম ‘মুনযির’। ( মেশকাত-মুতাফাক্কুন আলাইহি)
তখন তিনি বললেন না,বরং ; তুমি যুরআহ (আকর্ষণীয়)। ইমাম আবু দাউদ (রহ.) বক্তব্য সংক্ষিপ্তকরনার্থে বলেন, এছাড়াও নবী করীম (সা.) আছ (পাপী), আযীয (ক্ষমতাশালী), আতালাহ (লৌহার হাতুড়ী), শয়তান(ক্ষতিগ্রস্থ), হাকাম (বিচারক), গোরাব (কাক পাখি), হুবাব (সাপ) ও শিহাব (অগ্নিস্পুলিঙ্গ) ইত্যাদি নামসমূহ পরিবর্তন করে ভালো নাম রেখেছেন। (মেশকাত-আবু দাউদ)। ব্যক্তি চরিত্রের উপর নামের ভাল কিংবা মন্দ অর্থ প্রভাব বিস্তার করে। একটি ভাল নাম ব্যক্তিকে ভালোর দিকে নিয়ে যায় এবং মন্দ নাম ব্যক্তিকে মন্দের দিকে নিয়ে যায়।
একটি খারাপ নামের প্রভাব সম্পর্কে হযরত আবদুল হামিদ বিন জুবাইর ইবনে শাইবা (রহ.) বলেন, একদা আমি সাঈদ ইবনে মুসাইয়্যাব (রা.) এর কাছে বসেছিলাম, তখন তিনি বর্ণনা করলেন যে, তাঁর দাদা হাযন একবার নবী করীম (সা.) খেদমতে উপস্থিত হলেন, অতপর রাসূল (সা.) জিজ্ঞেস করলেন তোমার নাম কি ? উত্তরে তিনি বলেন আমার নাম হাযন (কঠিন)। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, তোমার নাম সাহল। প্রতিউত্তরে তিনি বলেন, পিতৃপ্রদত্ত নাম আমি পরিবর্তন করতে চাই না। এরপর সাঈদ ইবনে মুসাইয়্যাব বলেন, তারপর আমাদের পরিবার সর্বদা কঠোরতায় নিমজ্জিত রইল। (মেশকাত-বুখারী)
এছাড়াও এমন কিছু শব্দ বা নাম আছে যা শাব্দিক ও আর্থিক উভয়দিক থেকে মঙ্গল ও কল্যাণজনক হলেও স্থান, কাল ও পাত্রভেদে সে নাম রাখা উচিত নয়। যেমন এ সম্পর্কে হযরত সামুরা বিন জুনদুব (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তুমি কখনো তোমার গোলামের (ছেলে সন্তানের) নাম ইয়াসার (প্রশস্ততা বা প্রশান্তি), রাবাহ (লাভজনক), নাজীহ (সমৃদ্ধি) ও আফলাহা (কল্যাণ) রেখো না। কেননা, যখন তুমি জিজ্ঞেস করবে অমুক এখানে আছে, তখন কেউ উত্তর দিবে নেই।
হরযত জাবের (রা.) হতে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইচ্ছে করেছেন যে, তিনি লোকদেরকে নাফে, ইয়ালা, বরকত, আফলাহ, ইয়াসার, নাম রাখতে নিষেধ করবেন। অতপর তিনি নিশ্চুপ রইলেন। এমতাবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করলেন। (মেশকাত-মুসলিম)