বোখারা ও সমরকন্দের পতনের পেছনের কাহিনী
ঝিনাইদহের চোখঃ
ইসলামের প্রারম্ভকাল থেকেই সমরকন্দ ও বোখারা ছিল পুরো মুসলিমের বিশ্বের ইলমি রাজধানী হিসেবে পরিচিত। এখানকার জনগণ ছিল উলামায়ে কেরামের প্রতি খুব আস্থাশীল। তারা উলামাদের জিজ্ঞেস না করে কোনো কাজ করতো না।
রুশ ইহুদিরা যখন এখান থেকে ইসলাম এবং মুসলমানদের উচ্ছেদ করার অভিপ্রায় গ্রহণ করে, তখন তারা ওখানে এক গভীর ষড়যন্ত্রের জাল বিছিয়ে দেয়। তারা তাদের কতিপয় মেধাবী ব্যবসায়ীদের ওখানে ব্যবসার জন্য পাঠিয়ে দেয়।
ওরা মুসলিম বেশে ব্যবসা চালিয়ে যেতে থাকে। এক পর্যায়ে তারা খুব নামধাম অর্জন করে অর্থনীতিতে তাদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে নেয়। বোখারা ও সমরকন্দকে বাণিজ্যিক দিক দিয়ে অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে যায়। এই ব্যবসায়ীরা তাদের মেধাবী ছেলেদের মুসলিম বিদ্যাপীঠগুলিতে পাঠিয়ে দেয়।
ইহুদিরা এমনিতেই ধীমান ও চতুর জাতি। তদুপরি এ বাচ্চাগুলো ছিল মেধাবীবের সন্তান। ফলে জেনেটিকভাবেই এদের মেধা ছিল অতি উন্নত। ক্লাসে তারা প্রথম স্থান অধিকার করতো বিধায় স্বভাবতই শিক্ষকগণ তাদেরকে ভালোবাসতেন এবং তাদের প্রতি আলাদা দৃষ্টি দিতেন।
তারা যখন বিদ্যাপীঠ থেকে বাড়িতে আসতো তখন তাদের মাতা পিতারা তাদেরকে বুঝিয়ে বলতো— তোমাদের কিন্তু ইসলামের খেদমতের উদ্দেশ্যে বিদ্যালয়ে পাঠানো হয়নি। তোমাদের সবসময় এটা স্মরণ রাখতে হবে— তোমরা জাতিতে ইহুদি।
জাতীয় একটি এজেন্ডার ভিত্তিতে তোমাদেরকে ইসলাম শেখানো হচ্ছে। তোমরা পড়ালেখা শেষ করে যখন বড় বড় মসজিদ এবং মাদরাসায় চাকরি করবে, তখন তোমাদেরকে জাতির সে এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে হবে।
মাতা-পিতার এহেন উপদেশের ফলে এই বাচ্চাগুলো যদিও বিদ্যালয়গুলোতে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখছিল কিন্তু ইলম ও হিদায়তের নূর তাদেরকে স্পর্শ করতে পারছিল না। যেহেতু মাতা-পিতা কর্তৃক আগেই তাদের অন্তরে সন্দেহ ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছিল তাই শিক্ষা সমাপন শেষে যখন ওদের একাডেমিক ফলাফল বিবেচনায় বিভিন্ন বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষকপদে নিয়োগ দেয়া হয় তখন এরা শিক্ষাগত যোগ্যতার মাধ্যমে অতি তাড়াতাড়ি সমাজে নিজেদের অবস্থান গড়ে নেয়।
ধীরে ধীরে এ চক্রান্ত সমাজের একেবারে গভীরে ঢুকে যায় এবং সময়ের ব্যবধানে এই ইহুদি আলেমরা বোখারা ও সমরকন্দের মুফতির আসনে বসে যায়।
আগেই বলা হয়েছে বোখারা ও সমরকন্দের সাধারণ মানুষ উলামা মাশায়েখ এবং মুফতিদের অত্যন্ত সম্মান করতো। তারা কোনো কাজই ওদেরকে জিজ্ঞেস না করে করতো না।
ওরা প্রথম প্রথম ইসলামের সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়ে সমাজে নিজেদের অবস্থান মজবুত করে নেওয়ার পর ধীরে ধীরে খোলস থেকে বেরিয়ে আসা শুরু করে। ক্রমান্বয়ে তারা এমনসব বিতর্কিত সিদ্ধান্ত দিতে থাকে যা সমাজকে দ্বিধাবিভক্ত দেয়।
একদিকে ওরা জনসাধারণকে অস্থিরতার মধ্যে ফেলে দিচ্ছিল, অপর দিকে তাদের ব্যবসায়ী পিতা-মাতারা সমাজের বিত্তশালীদের ভোগবাদী করে তুলছিল। হক্কানী উলামায়ে কেরাম প্রথম প্রথম বিষয়টা দেখেও না দেখার ভান করলে বিষয়টা যখন ভয়াবহ ফেতনার আকার রূপ ধারণ করবে বলে অনুমিত হয়, তখন তারা এসব মুফতিদের বিপক্ষে অবস্থান নিতে থাকেন।
কিন্তু ইতোমধ্যে ওরা একটি নিষ্ঠাবান অনুসারীর দল গড়ে তুলেছিল। তারা প্রত্যেকেই নিজেকেই সত্যের অনুসারী বলে দাবী করছিল। ফলে বোখারা ও সমরকন্দের অলিতে গলিতে চলতে থাকে বিতর্কের আসর। এসব বিতর্কসভা অনেকসময় খুনোখুনির কারণ হয়ে উঠতো।
মানুষ দ্বিধাবিভক্ত হয়ে যাচ্ছিল। উলামাদের উপর থেকে জনগণের আগের সেই আস্থা চলে যাচ্ছিল। জনগণের মতো রাষ্ট্রপরিচালনার সাথে সংশ্লিষ্টরাও দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ছিল। আর এই বিভিক্তি একসময় গৃহযুদ্ধের আকার ধারণ করে তাদের শক্তির মেরুদণ্ড ভেঙ্গে ফেলছিল।
আর এই সুযোগে সাম্রাজ্যবাদী জার রুশরা তাদের পৈশাচিকতার চূড়ান্ত প্রদর্শনী ঘটিয়ে একসময় গিলে ফেলে ঐতিহ্যবাহী বোখারা ও সমরকন্দ।
নোট : আজ মুসলিম বিশ্বের সর্বত্র ইসলামের নামে নতুন নতুন যেসব ফেৎনা মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে এগুলোর পেছনে যে, ইসরাইলি তথা ইহুদিবাদীদের কালোহাত সক্রিয় নয় এ ব্যাপারে নিশ্চিত ও নিশ্চিন্ত হবার কোনো কারণ নেই।
ইহুদিরা চিরকালই ইসলামের শত্রু জাতি। ইসলামের জন্মলগ্ন থেকেই তারা চক্রান্ত চালিয়ে আসছে। ওরা যেমন অতীতে সক্রিয় ছিল, বর্তমানেও সক্রিয় আছে, ভবিষ্যতেও সক্রিয় থাকবে।