অন্যান্য

প্রিয়তার মুকুট জয়ের কাহিনি

ঝিনাইদহের চোখঃ

‘মিস কালচার ওয়ার্ল্ডওয়াইড-২০১৮’ শিরোপা জেতা প্রথম বাংলাদেশি তরুণী প্রিয়তা ইফতেখার। গত ১৬ ডিসেম্বর জিম্বাবুয়ের হারারের দ্য ভেন্যু অভান্ডলেতে এক বর্ণিল অনুষ্ঠানে ১৫টি দেশের প্রতিযোগীকে পেছনে ফেলে সেরার মুকুট জেতেন তিনি।

মুকুট জেতার পর দেশে ফিরে আজ মঙ্গলবার গণমাধ্যমের মুখোমুখি হন প্রিয়তা।

তিনি বলছিলেন, ‘ মহান বিজয়ের দিনে এমন একটি অর্জনে আমি খুব আনন্দিত। বিশ্বের বুকে লাল-সবুজের পতাকা ওড়ানোর তৃপ্তিটা বলে শেষ করা যাবে না। পুরো প্রতিযোগিতায় আমি বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের সংস্কৃতি তুলে ধরেছি। কেননা আমার মূল লক্ষ্যই ছিল সবার মাঝে বাংলাদেশকে তুলে ধরা।’

‘ফ্লাগ গার্ল’ খ্যাত এই তরুণী বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে এক সংবাদ সম্মেলনে আসেন। প্রিয়তার এই অর্জনকে পুরো দেশবাসীর কাছে তুলে ধরতে শিওরসেল মেডিকেল (বিডি) লি. এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রিয়তার চিকিৎক ও কনসালটেন্ট ডা. তাওহিদা রহমান ইরিন। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন সাংবাদিক রাবেয়া বেবী।

প্রিয়তা বলেন, মিস কালচার ওয়ার্ল্ডওয়াইড প্রতিযোগিতায় এটি বাংলাদেশের প্রথম অর্জন। প্রতিযোগিতার গ্র্যান্ড ফাইনালে বিশ্বের ২৬টি দেশের প্রতিযোগী অংশ নেন। এর মধ্যে সেরা ১৫ বাছাইয়ের পর শীর্ষ পাঁচ চূড়ান্ত করে জুরি বোর্ড। মিস কালচার ওয়ার্ল্ডওয়াইড-২০১৮ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য আবেদন করে ৫০টি দেশ।

‘এর আগে যারা সৌন্দর্য কিংবা কালচার প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন তারা প্রবাসী ছিলেন। প্রতিযোগিদের দুই-একজন আমাকে বলেছিলেন, আমাদের ছোট মুসলিম দেশ, কীভাবে এই মুকুট জিতব। কিন্তু আমার বিশ্বাস ছিল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বলে আমিই সবচেয়ে বেশি ভোট পাব,’- বলেন তিনি।

প্রিয়তা বলেন, ‘মাথায় ছিল আমি নিজের দেশকে উপস্থাপন করব। একজন নারী মুক্তিযোদ্ধা সেজেছিলাম; হাতে ছিল রাইফেল, আর পরনে সাদা রঙের শাড়ি। আবহ সংগীতে মুক্তিযুদ্ধের অডিও ভিজ্যুয়াল আর আমার মুখে ‘জয় বাংলা।”

নতুনদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, কখনও মনোবল না হারিয়ে আমাদের প্রায় ১৭ কোটির জনসংখ্যার দেশ, মুক্তিযুদ্ধ করে জয় লাভ করা দেশ মনে করে এগিয়ে যেতে হবে।

প্রিয়তা আরও বলেন, সারা বিশ্বে মেয়েদের ভ্রমণে প্রথমে বাধা আসে তার পরিবার থেকেই। পরিবারের মানুষ ভাবেন, মেয়েরা বিদেশে একা একা যেতে পারে না। আমেরিকাতে যাওয়ার প্রথম ভিসা পাওয়ার পরে আমাকে একা যেতে বাধা দেয়া হয়। এই বাধা থেকেই ‘ফ্ল্যাগ গার্ল’ সংগঠনের চিন্তা মাথায় আসে। এরপর নারীদের ভ্রমণে সহযোগিতা করতে ২০০৮ সালে এটির প্রতিষ্ঠা করি। নিজে এতিম হয়ে দেখেছি মা-বাবা না থাকলে সম্পত্তিতে অধিকার প্রতিষ্ঠায় কতটা বিড়ম্বনা হয়। তরুণ সমাজকে সহযোগিতা করলে তারা বিশ্বে জয় করে দেখাতে পারে। তাই আগামী দিনে এই তিনটি বিষয় নিয়ে কাজ করতে চাই।

সংবাদ সম্মেলনে ডা. তৌহিদা রহমান ইরিন বলেন, শিওরসেল মেডিকেল (বিডি) লিমিটেডের হয়ে আমি এর আগে জাতীয় পর্যায়ে প্রতিযোগিতায় সুন্দরীদের গ্রুমিংয়ের কাজ করি। এবার আমার কাজ ছিল বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের পতাকা তুলে ধরবে যে, তাকে সহযোগিতা করা। তাই এটাকে চ্যালেঞ্জ মনে করে আমি ও আমার টিম প্রিয়তাকে সহযোগিতা করি। তার স্কিন এবং হাড়ে যে সমস্যা ছিল আমরা তা ওভারকাম করতে পারি। নতুন যারা আসবে তাদের আমরা স্বাগত জানাই।

উল্লেখ্য, ‘ফ্লাগ গার্ল’ খ্যাত তরুণী প্রিয়তা ইফতেখার- ব্রিটিশ ভারতের বিখ্যাত পত্রিকা ‘সওগাত’ সম্পাদক নাসির উদ্দীনের মেয়ে, বেগম সম্পাদক নূরজাহার বেগম ও রোকনুজ্জামান খান দাদা ভাইয়ের নাতনী। বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবেও প্রিয়তা কাজ করছেন। ‘জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড ২০১৮’ অর্জন করেছেন তিনি। ট্রাভেল ব্লগার হিসেবে প্রিয়তার খ্যাতি রয়েছে, যা দেখা যায় তার ফেসবুক পেজ ‘দ্যা ফ্লাগ গার্ল’-এ। তার উদ্দেশ্য অন্তত ৫০টি দেশ ও বাংলাদেশের ৬৪টি জেলায় দেশের পতাকা নিয়ে ভ্রমণ করা। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বিশ্বের কাছে তুলে ধরা।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button