কুরআন ও সুন্নাহর মানদণ্ডে অধিকাংশ মানুষ যেমন
ঝিনাইদহের চোখঃ
আমাদের শত্রু ছিল শুধু ইবলিশ শয়তান। কিন্তু ইসলামের শত্রু হলো ইবলিশ, ইহুদি, খ্রিস্টান এবং আরও মানবগোষ্ঠী। এখন ঈমান আক্বীদাহ্ ঠিক রাখাই বড় কষ্টকর। কারণ কাফিররা মুমিনদের বলে, তোমরা বিভ্রান্তিতে আছ। (সূরা ইয়াসীন- ৪৭)
আল্লাহ তাআলা বলেন, “তাদের সামনে কুরআনের আয়াত পাঠ করা হলে কাফিররা বলে, দুই দলের মধ্যে মর্যাদার কোনটি শ্রেষ্ঠতর এবং মজলিস হিসেবে উত্তম?” (সুরা মাইয়াম- ৭৩)
অর্থাৎ কাফিররা দলে ভারী হওয়ায় কথা বলে। কিন্তু আল্লাহ তাআলা বলেন,
(ক) তাদের অধিকাংশই ঈমান আনবে না (সূরা বাকারা- ১০০)
(খ) তাদের অধিকাংশ জাহেল বা মূর্খ (সূরা আন-আম- ১১)
(গ) অথচ তাদের অধিকাংশ জানে না (সূরা নাহল- ৭৫)
(ঘ) কিন্তু তাদের অধিকাংশ প্রকৃত সত্য জানে না (সূরা আম্বিয়া- ২৪)
(ঙ) এতে অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে, কিন্তু তাদের অধিকাংশ মুমিন নয়। (সূরা শু’আরা- ৮, ৬৭, ১০১, ১২১, ১৩৯, ১৫৮, ১৭৪, ১৯১)
(চ) তুমি কি মনে কর যে, তাদের অধিকাংশ শুনে ও বুঝে? তারা তো পশুর মতোই, বরং তার চেয়ে অধিক পথভ্রষ্ট (সূরা ফুরক্বান- ৪৪)
এছাড়াও একই কথা সূরা আনআম- ৩৭, ৬১, সূরা ইউসূফ- ৫৫, সূরা আ’রাফ- ২৯ থেকে ৪৯, সূরা লুকমান- ২৫, সূরা কাসাস- ১৩ থেকে ৫৭, সূরা নামল- ৭৩, সূরা সাফফাত- ৭১, সূরা মুমিন- ৭০, সূরা আম্বিয়া- ২৪, সূরা ফুরক্বান- ৫০, সহ অন্যান্য আরও অনেক সূরাতে আলোচনা করা হয়েছে।
যে অধিকাংশ-এর মানদণ্ড কাফির, মুশরিক, ফাসিকদের মনমানসিকতার বহিঃপ্রকাশ, যা কোনোভাবে গ্রহণীয় নয়। বরং অল্পসংখ্যক লোকই কিয়ামতের আগ পর্যন্ত মুমিন হিসেবে দুনিয়াতে অবস্থান করবে।
(ক) আল্লাহ তাআলা বলেন, “তারা হৃদয়ে আচ্ছাদিত, বরং তাদের অবিশ্বাসের কারণে আল্লাহ তাদেরকে অভিশপ্ত করেছেন। ফলে তারা অতিঅল্প সংখ্যকই ঈমান এনে থাকে।” (সূরা বাকারাহ- ৮৮)
(খ) আল্লাহ তাআলা বলেন, আপনি অল্প সংখ্যক ব্যতীত তাদের পক্ষ থেকে কোনো না কোনো প্রতারণা সম্পর্কে অবগত হয়েছেন। (সূরা মায়িদাহ- ১৩)
(গ) আমার বান্দাদের মধ্যে অল্প সংখ্যক লোকই কৃতজ্ঞ। (সূরা সাবা- ১৩)
(ঘ) তোমরা নামাজ কায়েম করবে ও যাকাত প্রদান করবে, তারপরও তোমাদের মধ্যে হতে অল্প সংখ্যক ব্যতীত তোমরা সকলেই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলে। আর তোমরা ছিলে দ্বিমুখী সম্প্রদায়। (সূরা বাকারা- ৮৩)
এছাড়াও একই কথা সূরা বানী ইসরাঈল- ৬২, সূরা বাকারা- ৪৬,২৪৯, সূরা মায়েদা- ২৪, সূরা নিসা- ৬৬ সহ অন্যান্য সূরাতে আলোচনা করা হয়েছে যে, অল্প সংখ্যক লোকই মুমিন মুসলিম ও কৃতজ্ঞতা আদায়কারী।
মহানবী (সা.) অল্প সংখ্যক লোকদের নাজাতের বা মুক্তির কথাই বলেছেন।
ক) মুসিলমদের থেকে অল্প সংখ্যক লোকই এই দ্বীনের ওপর সর্বদা প্রতিষ্ঠিত থেকে কিয়ামত পর্যন্ত সংগ্রাম চালিয়ে যাবে। (সহীহ মুসলিম, হা- ৫০৬২, মিশকাত, হা- ৩৮০১)।
খ) দ্বীন ইসলামের সূচনা অল্প সংখ্যক অবস্থায় ঘটেছে। আর সূচনা যেমন ঘটেছিল পুনরায় সেরূপ ঘটবে, অতএব অল্প সংখ্যকরাই ভাগ্যবান, জিজ্ঞেস করা হলো অল্প সংখ্যকের তাৎপর্য কী? বা অল্পসংখ্যক কারা?
রাসূল (সা.) বললেন, অধিক সংখ্যক লোকের মাঝে অল্পসংখ্যক সৎলোক। অনুগত দলের অপেক্ষা অবাধ্য দলের সংখ্যা বেশি। (মুসনাদে আহম্মদ হা- ৬৬৫০)।
গ) আমার উম্মতের মধ্যে হুবহু সে সব জিনিস ঘটবে যেগুলো বনী ইসরাঈলের তথা ইহুদিদের মধ্যে ঘটেছিল। যেমনিভাবে এক জোড়া জুতার একটির সাথে আরেকটির তলা মিলে যায়। এমন কী যদি বনী ইসরাঈলের (ইহুদিদের) কোনো ব্যক্তি তার মায়ের সাথে প্রকাশ্যে ব্যভিচার করে তবে আমার উম্মতের মধ্য হতে কোনো পাপিষ্ট ব্যক্তি এ কাজটি করবে। নিশ্চয় বানী ইসরাঈল (ইহুদি) ৭২ দলে বিভক্ত হয়ে ছিল। আর আমার উম্মত ৭৩ দলে বিভক্ত হবে। তন্মেধ্য একটি দল ছাড়া সবগুলোই জাহান্নামে যাবে। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! সে দল কোনটি? তিনি উত্তরে বললেন, যার ওপর আমিও আমার সাহাবীগণ আছি। (তিরমিযী, হা-২৬৩১, মিশকাত, হা-১৭১)
সেই সময় পৃথিবীর অধিকাংশ লোক কাফির মুশরিক, অগ্নি পূজারীসহ অনেক লোক ছিল, কিন্তু নবী (সা.) ও তাঁর সাহাবীগণ তুলনায় বা মানদণ্ডে অল্পসংখ্যক ছিলেন। সে জন্যে আল্লাহ তাআলা বলেন, তোমাদের নিকট যে জ্ঞান (কুরআন ও সহীহ সুন্নাহ) পৌঁছেছে, তারপরও যদি তাদের (কাফির মুশরিক, ফাসিক ও বেদআতীদের) ইচ্ছা ও বাসনার অনুসরণ করো তাহলে নিশ্চিত করে জালিমদের মধ্যে গণ্য হবে। সূরা বাকারা- ১৪৫)
অর্থাৎ পূর্বের অল্প সংখ্যক লোকের ন্যায় আমাদেরকেও কুরআনও সহীহ সুন্নাহর অনুসারী হয়ে নাজাত বা মুক্তি লাভ করে জান্নাতি হওয়ার প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
লেখক : মাওলানা আখতারুজ্জামান খালেদ, সাবেক ইমাম ও খতীব।