জানা-অজানা

‘প্যারোল’ কী?

ঝিনাইদহের চোখঃ

প্যারোল হলো- আইনগত পরিভাষা। সাজাপ্রাপ্ত কোনো আসামিকে নজরদারিতে রেখে শর্তসাপেক্ষে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য লোকালয়ে মুক্তভাবে চলাফেরার সুযোগ দেওয়াকে প্যারোলে মুক্তি বলা যায়।

প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ১ জুন প্যারোলে মুক্তি সংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ওই নীতিমালায় কারাবন্দীদের মুক্তির পথ বলে দেয়া রয়েছে।

(ক) সাধারণ নীতিমালা:

১ (ক) ধারায় বলা হয়েছে, ভিআইপি/অন্যান্য সকল শ্রেণির কয়েদি/হাজতি বন্দীর নিকট আত্মীয় (যেমন: বাবা-মা, শ্বশুর-শাশুড়ি, স্বামী-স্ত্রী, সন্তান-সন্ততি এবং আপন ভাই-বোন) মারা গেলে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য প্যারোলে মুক্তি দেওয়া যাবে।

১ (খ) ধারায় বলা হয়েছে, ভিআইপি/অন্যান্য সকল শ্রেণির কয়েদি/হাজতি বন্দীর নিকট আত্মীয়র মৃত্যু ছাড়াও কোনো আদালতের আদেশ কিংবা সরকারের বিশেষ সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্যারোলে মুক্তি দেওয়া প্রয়োজন হলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনক্রমে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বন্দীকে প্যারোলে মুক্তি দেওয়া যাবে। উভয় ক্ষেত্রে নিরাপত্তা ও দূরত্ব বিবেচনায় প্যারোল মঞ্জুরকারী কর্তৃপক্ষ সময় নির্ধারণ করে দেবেন।

২ নং ধারায় বলা হয়েছে, সে ক্ষেত্রে সার্বক্ষণিক পুলিশ পাহারায় রাখতে হবে।

৩ নং ধারায় বলা হয়েছে, মুক্তির সময়সীমা কোনো অবস্থাতেই ১২ ঘণ্টার বেশি হবে না। তবে বিশেষক্ষেত্রে সরকার মুক্তির সময়সীমা হ্রাস/বৃদ্ধি করার ক্ষমতা সংরক্ষণ করবে।

৪ নং ধারায় বলা হয়েছে, কোনো বন্দী জেলার কোনো কেন্দ্রীয়/জেলা/বিশেষ কারাগার/সাব জেলে আটক থাকলে ওই জেলার অভ্যন্তরে যে কোনো স্থানে মঞ্জুরকারী কর্তৃপক্ষ প্যারোল মঞ্জুর করতে পারবেন। অপরদিকে কোনো বন্দী নিজ জেলায় কো-কেন্দ্রীয়/জেলা/বিশেষ কারাগার/সাব জেলে আটক না থেকে অন্য জেলায় অবস্থিত কোনো কেন্দ্রীয়/জেলা/বিশেষ কারাগার/সাব জেলে আটক থাকলে গন্তব্যের দূরত্ব বিবেচনা করে মঞ্জুরকারী কর্তৃপক্ষ প্যারোল মঞ্জুর করতে পারবেন। তবে উভয় ক্ষেত্রেই দুর্গম এলাকা, যোগাযোগ ব্যবস্থা, দূরত্ব বা নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় মঞ্জুরকারী কর্তৃপক্ষ প্যারোল মঞ্জুর বা না মঞ্জুরের ক্ষমতা সংরক্ষণ করবেন।

৫ নং ধারায় বলা হয়েছে, কারাগারের ফটক থেকে পুলিশ প্যারোলে মুক্ত বন্দীকে বুঝে নেবার পর অনুমোদিত সময়সীমার মধ্যেই পুনরায় কারাগারে প্রেরণ করবেন।

(খ) প্যারোল মঞ্জুরকারী কর্তৃপক্ষ:

সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট প্যারোল মঞ্জুরকারী কর্তৃপক্ষ হিসেবে বিবেচিত হবেন।

এ বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আইনজীবী জাকির হোসেন বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘প্যারোল হচ্ছে আসামির আবেদনের প্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা সরকার কর্তৃক মুক্তি লাভ।’

এর আগে দেশে যারা প্যারোলে মুক্তি নিয়েছেন

তারেক রহমান, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্যারোলে মুক্তি নিয়ে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান।

দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী, যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত হয়ে যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির আল্লামা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী সন্তানের মৃত্যুতে প্যারোলের মাধ্যমে জানাজায় অংশ নেন।

কামারুজ্জামান, ২২ আগস্ট ২০১২ সালে মানবতা বিরোধী অপরাধে কারাগারে আটক অবস্থায় জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামান তিন ঘণ্টার জন্য প্যারোলে মুক্তি নিয়ে মায়ের জানাজায় অংশ নেন এবং জানাজার নামাজে ইমামের দায়িত্ব পালন করেন।

খালেদা জিয়া, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ২০০৮ সালের ১৯ জানুয়ারিতে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কারাগারে বন্দী অবস্থায় মায়ের মৃত্যুর পর প্যারোল নিয়েছিলেন।

সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ২০১৬ সালের ১২ জুলাই মা জোবাইদা রহমানের মৃত্যুর পর প্যারোলে ১২ ঘণ্টার মুক্তি পেয়েছিলেন।

পাকিস্তান

পাকিস্তানের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের স্ত্রী কুলসুম নওয়াজের মৃত্যুর পর ১২ ঘণ্টার জন্য প্যারোলে মুক্তি পেয়েছিলেন। এমনকি তার মেয়ে মরিয়ম শরিফ ও জামাতা অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ সাফদারও প্যারোলে মুক্তি পান।

ভারত

৩০ দিনের জন্য প্যারোলে মুক্ত হয়েছিলেন বলিউডের ‘মুন্নাভাই’ খ্যাত অভিনেতা সঞ্জয় দত্ত। ২০১৩ সালের মে মাসে জেলে যাবার পর তিন দফায় প্যারোল নিয়েছিলেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button