পহেলা মে সংগ্রামী ইতিহাস, এখনো অধিকার বঞ্চিত শ্রমিক!–মোঃ সবুর মিয়া
ঝিনাইদহের চোখঃ
আজ থেকে ১৩৩ বছর পূর্বে অর্থাৎ-১৮৮৬ সালের ৪ঠা মে শ্রমিকরা তাদের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলন সংগ্রাম করেছিল। ১৮৮৬ সালের ১মে, আমেরিকায় শিকাগো শহরের হে মার্কেটের সামনে কারখানার শ্রমিকেরা বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছিল। উল্লেখ্য এ মার্কেটিং হচ্ছে আমেরিকার অন্যতম একটি বাণিজ্যিক অঞ্চল। শ্রমিকদের যুক্তিসঙ্গত ও ন্যায় সঙ্গত, বৈধ দাবি গুলোর মধ্যে অন্যতম দাবী ছিল, শ্রমিকদের কর্মঘন্টা হবে ৮ ঘণ্টা। সেই সময় কারখানার মালিকপক্ষ শ্রমিকদের ১০ থেকে ১৫ ঘন্টা পর্যন্ত কাজের নামে এক ধরনের শারীরিক ও আর্থিক নির্যাতন করতো। সেই আন্দোলনকে দমানোর জন্য আমেরিকার বৈধ পুলিশ বাহিনী তাদের ওপর অন্যায়ভাবে আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রভাবিত করে শ্রমিকদের ওপরে ইতিহাসের নির্মম হামলা চালিয়েছিল। সে বর্বর ভয়ানক হামলায় ১১ জন শ্রমিক মারা গিয়েছিল। আহতের সংখ্যা ছিল অগণিত।
ঐতিহাসিক ঘটনার প্রেক্ষাপটে, ১৯৮০ সালের পহেলা মে সমগ্র পৃথিবীব্যাপী আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। পরিতাপের বিষয়, শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের জন্য ১৩৩ বছর পূর্বে আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েছিল। সে আন্দোলন সংগ্রাম দাবি মানা, না-মানার অভিপ্রায় এখনো চলমান। শ্রমিকরা কি তাদের ন্যায্য অধিকার পূর্বে পেয়েছে কিংবা বর্তমানে পাচ্ছে।
গত কিছুদিন পূর্বে ট্রান্সফারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ(টিআইবি) প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধির পরেও তারা 26 শতাংশ বেতন কম পেয়েছে। কিন্তু গার্মেন্টস কর্তৃপক্ষ সম্পূর্ণরূপেই তাদের প্রতিবেদনটি মিথ্যা বলে প্রতিপন্ন করছে। তাহলে এটাই কি শুভংকরের ফাঁকি। গার্মেন্টস শ্রমিক, পরিবহন শ্রমিক, বিভিন্ন শিল্প কল- কারখানার শ্রমিক, পহেলা মে বিশ্ব শ্রমিক দিবস পালন করবে, তারপর সব শেষ!
একজন শ্রমিক হয়তো নিজেও জানেনা এই দিনটির তাৎপর্য ১৮৮৬ সালে আমেরিকায় ঘটে যাওয়া সংগ্রামের রক্তাক্ত তাৎপর্য। একটা দেশের উন্নয়নের চালিকাশক্তি হচ্ছে শ্রমিক।
শ্রমিকরা তাদের অধিকার পাওয়ার জন্য শুধু কি বছরের পহেলা ১মে নামক দিনটি তাদের জন্য নির্ধারিত। শ্রমিকেরা শুধু নির্যাতিত, নিষ্পেষিত, ঘৃণিত, অমূল্যায়িত শুধুই কায়িক শ্রমিক।মালিক কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের কি মনে করে, কিভাবে মূল্যায়ন করে, শ্রমিকেরাও কি মানুষ, তাদেরও কি অধিকার আছে, নাকি তারা শুধুই শ্রমিক। বাংলাদেশের শ্রমিকদের দৃশ্য কত নির্মম কত কষ্টকর এটা বাস্তবে উপলব্ধি করা যায়। বাংলাদেশ একজন শ্রমিক এখনো আট ঘন্টার বেশি কাজ করে থাকে। মালিক কর্তৃপক্ষ বলবে, অতিরিক্ত কাজের জন্য তাদেরকে পারিশ্রমিক দেয়া হয় সত্যিই তাই কিন্তু আমাদের দেশের পাশাপাশি অন্যান্য রাষ্ট্রের শ্রমিকদের সাথে এই পারিশ্রমিক কি আদেও তুলনাযোগ্য।
মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, দুবাই, সিঙ্গাপুর সহ অন্যান্য দেশে আমাদের দেশের শ্রমিকেরা যাচ্ছে, যাদের যোগ্যতা খুবই নগণ্য। তারপরেও তাদের মজুরি আমাদের দেশের শ্রমিকদের থেকে তিন থেকে চার গুন, কোন কোন কাজের ক্ষেত্রে আরো বেশি। মালিক কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তাদের জন্য বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয় বা দেওয়ার নিয়ম থাকে কিন্তু একজন শ্রমিকের কাজের মূল্যায়ন শুধুই মজুরি, এটা কি শ্রমিকের অধিকারের মধ্যে পড়ে? শ্রমিকদের অধিকারের কথা মুখে বললেই, শ্রমিক দিবসে বিশেষ বাণী দিলেই শ্রমিকের অধিকার আদায় হয় না। সত্যি কারের শ্রমিক অধিকার রক্ষার্থে কর্তৃপক্ষের আরো অধিক দায়িত্বশীল, মানব কল্যাণমুখী অর্থাৎ শ্রমিক কল্যাণমুখী মনোভাব এর মাধ্যমে শ্রমিকের ন্যায় সঙ্গত অধিকার বাস্তবায়ন করতে হবে।
শ্রমিকদের মানুষরূপে গণ্য করতে হবে, তাহলে মে দিবসে শ্রমিকদের রক্ত দানের সার্থকতা পরিলক্ষিত হবে। আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন হোক শ্রমিকরা তাদের অধিকার নিয়ে পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াক এটাই সকলের কামনা।
মোঃ সবুর মিয়া।
E-mail: sabur2050@gmail.com