২৫ বছর পেরিয়েও যেসব কারণে জনপ্রিয় সালমান-শাবনূর জুটি
ঝিনাইদহের চোখঃ
২৫ বছর পেরিয়েও তুমুল জনপ্রিয় জুটি সালমান-শাবনূর। হঠাৎ কোনো হলে এই জুটির সিনেমা এলে হলে ভিড় লাগে দর্শকের। কোনো অনুষ্ঠানে এই জুটি নিয়ে আলোচনা হলে দর্শক মুগ্ধ হয়ে শোনেন।
সবচেয়ে বড় কথা আজও এই জুটি সিনেমার জুটিগুলোর কাছে সেরা হওয়ার মানদণ্ড। প্রজন্মের প্রায় সব তারকারাই সালমান-শাবনূর জুটিকে নিজেদের পছন্দের জুটি বলে মনে করেন।
কিন্তু কেন? যেখানে আজকাল কোনো তারকা ৫ বছর পার হলেই আর টিকে থাকছেন না সেখানে কী কারণে এখনো জনপ্রিয় সালমান-শাবনূর জুটি। সেই রহস্য অনুসন্ধানের চেষ্টা করা হলো-
রোমান্টিক গল্প
ক্যারিয়ারে জুটি বেঁধে ১৪টি সিনেমায় অভিনয় করেছেন সালমান-শাবনূর। তার প্রায় সবগুলো ছবিই ছিলো রোমান্টিক প্রেমে ভরপুর কাহিনির। সেইসব ছবিতে যুবক-যুবতীর শ্বাশত আকর্ষণকে ধারণ করে হাজির হতেন তারা। তাদের মুখে দারুণ সব সংলাপ খুব সহজেই দর্শকের মনে দাগ কাটতো। ছবি মুক্তির পর ঘুরেফিরে বাজতো দর্শকের মুখে।
শুধু তাই নয়, এই জুটির বেশিরভাগ ছবির নামগুলোও রোমান্টিক। ‘তোমাকে চাই’, ‘তুমি আমার’, ‘শুধু তুমি’, ‘আনন্দ অশ্রু’, ‘প্রেম পিয়াসী’, ‘চাওয়া থেকে পাওয়া’ ইত্যাদি ছবিগুলো রোমান্টিক নামের কারণে সবার নজরে আসতো। আর এইসব ছবি দিয়ে দর্শকের মনে স্থায়ী আসন গড়ে নেন সালমান-শাবনূর।
গান
সালমান-শাবনূর জনপ্রিয়তার মূলে রয়েছে অসংখ্য গান। প্রেম-বিরহের সেইসব গান এই জুটিকে অনবদ্য করে তুলেছে দর্শকের কাছে। ‘এইদিন সেইদিন কোনোদিন তোমায় ভুলবো না’, ‘তুমি আমার করতে সাথী জীবনে’, ‘ওগো আমার সুন্দর মানুষ’, ‘তুমি মোর জীবনের ভাবনা’, ‘তোমাকে চাই শুধু তোমাকে চাই’, ‘তুমি আমার মনের মানুষ’, ‘ভালো আছি ভালো থেকো’, ‘ও সুজন সখী রে’, ‘বাজারে যাচাই করে দেখিনি তো দাম’, ‘পৃথিবীতে সুখ বলে যদি কিছু থেকে থাকে’, ‘ও সাথী রে যেও না কখনো দূরে’, ‘জ্বালাইয়া প্রেমের বাত্তি’, ‘স্বপ্নের নায়ক সেই তুমি’, ‘আমার জন্ম তোমার জন্য’, ‘৭১ এর মা জননী’, ‘আমার নাকেরও ফুল বলে রে’ ইত্যাদি গানগুলো সবশ্রেণির দর্শকের কাছে তুমুল জনপ্রিয় করে রেখেছে সালমান-শাবনূরকে।
সাবলীল অভিনয়
বলা হয়ে থাকে সালমান শাহের মৃত্যুর পর তার মতো জাঁদরেল অভিনেতা আর আসেনি ইন্ডাস্ট্রিতে। এখনো সালমানের অভাব সবখানে। নিখুঁত স্টাইল, নিত্য নতুন ফ্যাশনের পাশাপাশি সালমান শাহের সাবলীল ন্যাচারাল অভিনয়ে খুব সহজেই ডুবে যেতেন দর্শক। ছবিতে সালমানকে দেখতে দেখতে পর্দায় নিজেকেই আবিষ্কার করতেন তারা।
একইভাবে সদ্য কৈশোর পেরোনো শাবনূরও অভিনয়ে বেশ সাবলীল ছিলেন। দুরন্ত কিশোরী বা সদ্য যুবতী চরিত্রে শাবনূরের জুড়ি মেলা ভার। সেইসব চঞ্চলা, চপলা প্রেমিকা চরিত্রে শাবনূরকে নিজের প্রেমিকা ভেবেই হলে আসতেন কোটি দর্শক।
এই জুটির অভিনয়ের সেই মুগ্ধতা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে গেছে। নতুন প্রজন্মের কাছেও তাই তাদের আবেদন ও গ্রহণযোগ্যতা দুইই ঈর্ষণীয়।
ব্যক্তিগত সম্পর্কের মিথ
কেমন ছিলো সালমান শাহ ও শাবনূরের ব্যক্তিগত সম্পর্কটা? এ নিয়ে বিস্তর গবেষণা করেও সঠিক সিদ্ধান্তে যাওয়া সম্ভব নয়। কারণ সালমান শাহ আর বেঁচে নেই। শাবনূর আছেন, তিনি দাবি করেন সালমান তাকে ছোট বোনের মতো করে আদর করতো।
আবার নব্বই দশকের গণমাধ্যম বলছে এই দুই তারকার মধ্যে প্রেম ছিলো। গভীর সম্পর্কেও জড়িয়েছেন তারা। একপর্যায়ে শাবনূর নাকি বিয়ের জন্য চাপও দেন সালমানকে।
তবে সময়ের স্রোতে সেবকিছুই গুজব হিসেবে উড়ে গেছে। বাস্তবে এই জুটির কোনো সাফল্য না এলেও রুপালি পর্দার জুটি হিসেবে তারা প্রেমের অনন্য এক রুপকথার জন্ম দিয়েছেন। সেই রুপকথায় ভালোবাসার ডালপালা গজাচ্ছে আজও।
সালমানের রহস্যজনক মৃত্যু
১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করেন ঢাকাই সিনেমার অমর নায়ক সালমান শাহ। কিন্তু তার মৃত্যু নিয়ে আজও রহস্য কাটেনি। আজও জানা যায়নি কী তার অকাল প্রয়াণের কারণ।
তবে দারুণভাবে আলোচনায় এসেছে ও সালমানের মা-ভাই এবং অনেক ভক্তরাই দাবি করেন যে এই নায়ককে খুন করা হয়েছে। সেই খুনের রহস্যেল সঙ্গে রসালো গল্প জন্ম দিয়েছে সালমান-শাবনূরের প্রেম। যে গল্প এই জুটির প্রতি আবেদন জিইয়ে রেখেছে দুই যুগ পেরিয়েও।