#সাবজেল হোসেন, ঝিনাইদহের চোখঃ
ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের মধ্যদিয়ে প্রবাহিত ঐতিহ্যবাহী বেগবতী নদীর উত্তর পাড় ঘেষে জামাল আর দক্ষিণে নিয়ামতপুর ইউনিয়ন। পাশাপাশি ২ ইউনিয়নের সীমানা নির্ধারনকারী এ নদীটিই হয়েছে দু’পাড়ের বসবাসরত মানুষের জন্য বিশ ফোঁড়া।
কৃষি প্রধান এ এলাকার নদীর ওপর সেতু না থাকায় লোক চলাচলে বাঁশের সাঁকোই দীর্ঘদিনের ভরসা। তবে এলাকাবাসীর কৃষিপণ্যসহ মালামাল এপার ওপার করার কোন সুযোগ নেই। অতি প্রয়োজনে মালামাল এক পাশ থেকে অন্যপাশে নিতে হলে বাঁশোর সাঁকোর ওপরদিয়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে মাথায় করে টেনে নিতে হয়।
বিকল্প পথ দিয়ে যেতে হলে ২০ কিলোমিটার ঘুরতে হয়। আবার স্কুল কলেজের ছেলেমেয়েদের জন্য এ সাঁকোটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। কেননা এ নদীর ওপর নির্মিত তৈলকূপ সাঁকোটি প্রতি বর্ষার মৌসুমের পানির স্রোতে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। সে সময়ে শিশুসহ শিক্ষার্থীদের ডোঙায় চড়ে আরেক ঝুঁকির মধ্যদিয়ে পার হতে হয়।
আবার যখন বর্ষা কমে যায় তখন দু’পাড়ের মানুষের আর্থিক সহযোগিতায় প্রস্তুতি নিতে হয় নতুন সাঁকো তৈরির। যা বেশ ব্যয়বহুল এবং জন ভোগান্তিকর। স্থানীয় লোকজন এখানে একটি সেতু নির্মাণের দাবি করে আসছে দীর্ঘদিন কিন্তু কাজের কাজ হয়নি। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চিকন চিকন বাঁশ দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে বাঁশের সাঁকো।
এর ওপর দিয়ে শুধু লোক চলাচলের উপযোগী। ভারি কিছু এর ওপর দিয়ে বহন করার কোন সুযোগ নেই। ছোট ছোট স্কুলগামী ছেলেমেয়েরা অত্যন্ত ভয়ের সঙ্গে পড়ি কি মরি অবস্থার মধ্যদিয়ে পার হচ্ছে এ বাঁশের সাঁকোটি।
তৈলকূপ গ্রামের বাসিন্দা তবিবুর রহমান জানান, তাদের এলাকাটি সম্পনূর্ণটাই কৃষি প্রধান। তাদের উৎপাদিত ফসল কালীগঞ্জ শহরে নিয়ে বিক্রি করতে হয়। কিন্তু ব্রিজ না থাকায় ৩ কিলোমিটার পথের জন্য তাদেরকে ১৫ কিলোমিটার ঘুরে যাওয়া লাগে। আবার আশপাশের গ্রামের মানুষের নদী পার হয়ে যেতে হলে ঝুঁকি মধ্যদিয়ে যেতে হয়।
কামারাইল গ্রামের বাসিন্দা লিয়াকত হোসেন জানান, নদীর ওপারেই গোপালপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বারোপাখিয়া মাদ্রাসা, ঘোষনগর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কালীগঞ্জ শহরের বেশ কয়েকটি কলেজ গড়ে ওঠেছে। এ সকল শিক্ষার্থীদের সকাল হলেই ঝুঁকির মধ্যদিয়ে তাদের নিজ নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে হয়। আর ঝুঁকিমুক্তভাবে যেতে হলে তাদের অনেক পথ ঘুরে যেতে হয়। যেটা এলাকার অভিভাবকদের জন্য অত্যন্ত ব্যয়বহুল ব্যাপার। অন্যদিকে সাঁকো পার হয়ে গেলে বিপদের আশঙ্কায় তারা থাকেন মহাচিন্তায়। আর শিশু শিক্ষার্থীদের জন্য ভাবনাটা থাকে আরও বেশি।
নদীটির দক্ষিণ পাড়ের গ্রাম নিয়ামতপুর ইউনিয়নের বারোপাখিয়ার বয়োবৃদ্ধ আলতাফ হোসেন জানান, আমরা দুই পাড়ের মানুষেরা এ নদীর সাঁকোর স্থলে একটি সেতু নির্মাণের দাবি করে আসছি। ভোট আসলেই নেতারা কথা দেন। তার ক্ষমতার মেয়াদ চলে যায়। এরপর আসেন অন্যদলের নতুন কোন নেতা তিনিও কথা দেন। এভাবে শুধু কথাই দেয়া হয় সেতু আর দেয়া হয় না। তিনি বলেন এবার এলাকাবাসী আশায় বুক বেধে আছেন কেননা উপজেলার প্রায় সকল নদীর ওপরই সেতু নির্মিত হয়ে গেছে বাদ আছে শুধু তাদেরটা। ফলে তাদেরটা হয়ে যাবে বলে তারা আশা করছেন।
এমন অভিযোগ নদীটির দু’পাড়ের বলরামপুর, মহেশ্বরচাদা, নিয়ামতপুর, বারোপাখিয়া, ঘোষনগর, কাশিমা, তৈলকুপ, কামারাইল, গুটিয়ানী, নলডাঙ্গা, দুর্গাপুরসহ আশপাশের সকল গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে।
এ বিষয়ে জামাল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোদাচ্ছের হোসেন মন্ডল জানান, ভুক্তভোগী সকলেরই নিরাপদে নদী পার ছাড়াও এলাকার উন্নয়নে নদীর ওপর একটি পাকা ব্রিজ নির্মাণ একান্ত প্রয়োজন। তিনি এলাকাবাসীর দাবির কথা অনেক আগেই স্থানীয় সাংসদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি নিজেও এলাকাবাসীর দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আশা করছেন খুব শীঘ্রই সেতুটি হয়ে যাবে। দূর হবে এলাকাবাসীর দুর্ভোগ।