#ঝিনাইদহের চোখঃ
ঝিনাইদহের শৈলকুপার তিনটি ইউনিয়নে খরস্রোতা গড়াই নদীর ভাঙ্গনে ৫টি গ্রামের কয়েকশত বসত বাড়ি ও ফসলি জমি বিলীন হচ্ছে। প্রতিরক্ষাবাধ না থাকায় নতুন করে নদী ভাঙ্গন দেখা দেওয়ার পর থেকে আতংকিত হয়ে পড়েছে এলাকার জনপদ। নদীর হিং¯্র থাবায় এ উপজেলার সারুটিয়া, হাকিমপুর ও ধলোহরাচন্দ্র ইউনিয়নের নদীর পাড় ভিত্তিক গ্রামগুলোর শত শত বিঘার ফসলি জমি ও বাড়ির একাংশ হারিয়ে গেছে। নদীর করাল গ্রাসে হুমকির মুখে পড়েছে পার্শ্ববর্তি মসজিদ ও বাজার সহ দু-শতাধিক বসতি।
শৈলকুপা উপজেলার সারুটিয়া, হাকিমপুর ও ধলোহরাচন্দ্র ইউনিয়নের গড়াই নদীর পাড় ভিত্তিক বড়–রিয়া, কৃঞ্চনগর, মাঝদিয়া, মাদলা ও লাঙ্গলবাধ বাজার গ্রামগুলো এখন হুমকির মুখে পড়েছে। প্রতিরক্ষাবাধ না দেওয়ায় প্রায় ১৪শত বিঘার ফসলি জমি ও প্রায় ৩০টি বাড়ির একাংশ নদীর গ্রাসে হারিয়ে গেছে। সম্প্রতি বৃষ্টির কারনে পানি বৃদ্ধি পাওয়ার পর থেকেই নদীর এ ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। নদীর হিং¯্র থাবায় যে কোন সময় গ্রামের আরও শত শত বিঘার ফসলি জমি ও দুই শতাধিক বসত বাড়ি, মসজিদ ও লাঙ্গলবাধ বাজার হুমকির মুখে পড়েছে। নদীর প্রবল ¯্রােত আর ভারি বর্ষনে ভাঙ্গন কবলিত এলাকা আগ্রাসী রুপ ধারন করছে।
ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার সারুটিয়া ইউনিয়নের গড়াই নদী সংলগ্ন বড়–রিয়া গ্রামে নদী-ভাঙ্গনের সাথে প্রায় শতাধিক পরিবার যুদ্ধ করে বসবাস করে। নদীর করাল গ্রাস থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য তিন-তিন বার ঘর ভেঙ্গে কৃষক উসমান তার স্ত্রী সন্তান ও মা নিয়ে এক ছটাক জমির উপর বসবাস করে সংসার চালায়। তার পিছুতে পিছুতে আর জায়গা নেই। নদীর ¯্রােত আর ভাঙ্গনের সাথে যুদ্ধ করে বেচে থাকলেও গত তিন বছর আগে এ তান্ডবে পড়ে কওসার নামে ৭ বছরের শিশু সন্তানের প্রাণ কেড়ে নেই। এখনও দশ হাত দুরে তার বসতভিটা দাড়িয়ে আছে কিন্তু রাতের আধারে ভাঙ্গনের মুখে পড়লে পরিবারসহ সবাই নদীর ¯্রােতে হারিয়ে যাবে সেটি জেনেও ঝুকি নিয়ে বসবাস করছে। তারা অভিযোগ করেন, সরকারের পক্ষ থেকে কতজন আসে কিন্তু তাদের আজও কেও খোজ করে না।
তেমনি পাশ^বর্তি মাঝদিয়া গ্রামের শফিক, শরিফুলসহ অসংখ্য পরিবারের চোখে আর্তনাদ আর বেচে থাকার আকুতি ফুটে উঠেছে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও সংসদ সদস্যরা তাদের পাশে দাড়াইনি বলে করছেন অভিযোগ। ভোটের সময় কত আশ^াস আর প্রতিশ্রæতি দেন কিন্তু জয়ী হলে তাদের খোজ কেও আর রাখে না বলে তারা দাবি করেন। সে কারনে তারা অনতিবিলম্বে স্থায়ী প্রতিরক্ষা বাধ চেয়েছেন। তা না হলে গ্রামগুলো যেমন মানচিত্র থেকে মুছে যাবে তেমনি এমন কয়েক শত পরিবার ভিটেছাড়া হয়ে বিলীন হয়ে যাবে বলে ক্ষতিগ্রস্থরা জানিয়েছেন। তবে সবচাইতে আতংকে ও ঘর বাড়ি বিলীন হয়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে বড়ুরিয়া গ্রামে।
সারুটিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসান জানান, কুষ্টিয়া থেকে ভাটিতে আসা গড়াই নদী ঝিনাইদহের শৈলকুপার লাঙ্গলবাধ পর্যন্ত প্রায় ৪০ কিলোমিটার অংশে প্রবাহিত। ১৯৯০ সালের পর থেকে বছরের পর বছর এ নদীর ভাঙ্গনের করাল গ্রাসে তিনটি ইউনিয়ন ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। অনেক পরিবার বসত ভিটা ও ঘর বাড়ি ছেড়ে পথে বসেছে।
দ্রæত নদী ভাঙ্গন ঠেকানো না গেলে গ্রামের শত শত পরিবার পথে বসবে। সে কারনে প্রতিরক্ষা বাধের দাবি জানান ।
ঝিনাইদহ-১ সংসদ সদস্য আব্দুল হাই জানান, তারা অনতিবিলম্বে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষন করে ক্ষতিগ্রস্থদের পাশে দাড়ানো ও প্রতিরক্ষা বাধ দেওয়ার অনুরোধ জানান।
ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী কর্মকর্তা সরোয়ার জাহান সুজন জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে একটি টিম ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন করেছে। জরুরী ভিত্তিকে বাধ নির্মানের জন্য প্রকল্প চেয়ে উর্দ্ধতৃন কতৃপক্ষের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। আমরা নিয়মিত মনিটরিং করে যাচ্ছি । তবে বরাদ্ধ পেলেই কাজ শুরু করা হবে বলে জানান।