কালীগঞ্জটপ লিড

ঝিনাইদহের সোবাহান অন্যদের অনুপ্রেরণা

#ঝিনাইদহের চোখঃ

ড্রাগন, পেয়ারা, ফুল, কুল, আম-আমড়ার মতো ভিন্ন সব ফুল-ফলের চাষ করে জীবনের চাকা বদলাতে সক্ষম হয়েছেন কবিরুস সোবাহান। অষ্টম শ্রেণি পাশের পর পরিবারের প্রয়োজনে কৃষিকাজে নিজেকে সমপৃক্ত করতে বাধ্য হলেও গতানুগতিক চাষে যখন সফলতা আসচ্ছিল না, তখনই এই কবিরুস সোবাহান বেছে নেন ভিন্ন সব চাষাবাদ।

আজ তিনি অত্রাঞ্চলের একজন সফল চাষি। তার বাড়ি হয়েছে, হয়েছে মাঠে বেশ কিছু চাষযোগ্য জমি। তাকে দেখে অন্যরাও অনুপ্রাণিত হচ্ছেন, কবিরুসের মতো তারাও ভিন্ন সব চাষাবাদের ঝুকে পড়ছেন।

কবিরুস সোবাহান (৪৪) ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ত্রিলোচনপুর গ্রামের অহেদুস সোবাহানের বড় ছেলে। কবির বলেন, প্রায় ২৮ বছর আগের কথা। অসচ্ছল পরিবারের কথা চিন্তা করে পড়ালেখা ছেড়ে কৃষি কাজে নেমে পড়েন।

গতনুগতিক চাষে তেমন কোনো সফলতা পাচ্ছিলেন না। প্রায় ৮ বছর এভাবে চাষ করে সংসারে সচ্ছলতা ফেরাতে পারেননি কবির। এমনই সময় ফুল চাষ শুরু করেন। মাত্র দুই বছরে অভাবনীয় সফলতা পান।

পর্যায়ক্রমে ফুলের চাষ বৃদ্ধি করতে থাকেন। এক সময় আত্মবিশ্বাস জন্মায় নিষ্ঠার সঙ্গে পরিশ্রম করলে যে কোনো চাষ থেকে ভালো মুনাফা পাওয়া সম্ভব। এরপর কবির তার সফলতার গল্প বলতে শুরু করেন।

২০১২ সালে ৫ বিঘা জমিতে তিনি পেয়ারা চাষ করেছিলেন। এই চাষেও ভালো মুনাফা আসে তার। বর্তমানে ৮ বিঘা জমিতে পেয়ারা চাষ রয়েছে। ২০১৬ সালে চাস করেন ড্রাগন। প্রথমে এক বিঘা (৩৩শতক) জমিতে ড্রাগন চাষ করলেও এখন তা বাড়িয়ে প্রায় ৩ বিঘা করেছেন। ড্রাগন চাষে এক সঙ্গে অনেক টাকা খরচ হলেও এই চাষ অন্য যে কোন চাষের তুলনায় বেশী লাভজনক।

এছাড়া কবির ৫ বিঘা জমিতে বেল সুন্দরী জাতের কুল ও ৩ বিঘা জমিতে থাই আম গাছ লাগিয়েছেন। থাই আম সারা বছর পাওয়া যাবে বলে তিনি জানিয়েছেন। কুল ও আম চাষেও সফল হবেন বলে আশা করছেন। সফল চাষী কবিরুলের ফসল ও মাটির সঙ্গে রয়েছে ২৮ বছরের সম্পর্ক। এই চাষ থেকেই তিনি ১০ বিঘা ফসলি জমি কিনেছেন। একটি দালান বাড়ি বানিয়েছেন। বাজার-ঘাটে যাতায়াতের জন্য একটি মটর সাইকেলও কিনেছেন। মটর সাইকেলে প্রতিদিন ছেলে-মেয়েদের স্কুলে দিয়ে আসেন। কবিরুলের বড় ছেলে জিহাদুস সোবাহান এবার বালিয়াডাঙ্গা দাখিল মাদরাসা থেকে দাখিল পরীক্ষা দিবে এবং মেয়ে কেয়াকে ভর্তি করিয়েছেন একই গ্রামের ন্যাশলাল প্রি-ক্যাডেট স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণিতে।

তিনি বলেন, পরিশ্রম করে আমি শুধু আমার নিজের অবস্থার পরিবর্তন করেছি তা নয়। তার ক্ষেত খামারে কর্মসংস্থান হয়েছে পরিতোষ, উত্তম, আমিরুলসহ ১৪ জন শ্রমিকের। যারা নিয়মিত তার জমিতে কাজ করেন। কাজের অভাবে কোন দিন বসে থাকতে হয়না তাদের। শ্রমিকরাও আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে বলে আজ তিনি সফল চাষী হতে পেরেছেন বলে উল্লেখ করেন। শ্রমিক উত্তম কুমার জানান, ১২ বছর কবির ভাইয়ের ক্ষেতে কাজ করছেন। আরেকজন শ্রমিক পরিতোষ কুমার জানান, তিনি ১৭ বছর ধরে কাজ করছেন। এভাবে দীর্ঘ বছর ধরে তার সঙ্গে আছেন তার মতো বেশ কিছু কৃষি শ্রমিক। তিনি আরো বলেন, পরিকল্পিত ভাবে যদি কেউ কৃষি কাজ করে তবে তার উন্নতি হবেই। যার নিদর্শন কবিরুস সোবাহান।

কবিরুস সোবাহান জানান, এখন অনেক নতুন ও পুরাতন চাষী তার কাছে ছুটে আসেন কৃষি পরমর্শের জন্য। তিনি সাধ্যমতো সহযোগিতা করেন। নানা পরামর্শ দেন এবং তার বাগানগুলো ঘুরিয়ে দেখান। নিজের অভিজ্ঞতা অন্যদের সঙ্গে শেয়ার করেন। এতে তিনি আনন্দ পান বলে জানান। তিনি সবাইকে পরামর্শ দেন জমিতে ভিন্ন জাতের ফুল-ফলের চাষ করতে। তাহলে সফলতা আসবেই।

কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহিদুল করিম বলেন, ফলের উৎপাদন বাড়ানো থেকে শুরু করে এগুলো যাতে পোকা মাকড়ের আক্রমন থেকে রক্ষা পায় সে জন্য তারা প্রয়োজনীয় পরামর্শ সব সময় দিয়েছেন। তিনি বলেন, ফুল ও ফল চাষি কবিরুস সোবাহান নি:সন্দেহে আগামী দিনে অন্য চাষীদের জন্য অনুপ্রেরণা যোগাবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button