আমি কতদূর চলে এসেছি?–গুলজার হোসেন গরিব
#ঝিনাইদহের চোখঃ
আমি কতদূর! কতদূর চলে এসেছি ?
এখন কি ওই মায়ামাখা গ্রামে
ইচ্ছে করলেই যাওয়া যায় না?
চৌমাথায় ঝাকড়ানো শেওড়াগাছে দোল খাওয়া।
হুমাদাহর বিলে শাপলা তুলতে যাওয়া,
কালিদাস কাকা,হরিকমল,বুধো,অধীরের
ডোঙায় চড়ে বিলের জলে শাপলা তোলা।
আহ কি পরিষ্কার জল!
তিতপুঁটির দল রুপোর গহনা পরে
চিতকাত হয়ে কী দারুণ!নাচ দেখায়।
প্রভাতে বিলের জলে জেলেদের মাছ তাড়ানো শব্দ
এখনো ঘুম সোহাগি ভোরে কানে এসে বাজে।
বেগবতীর নতুন পানিতে লাফালাফি করা
লাল চোখে বাড়ি ফেরা,মাকে ভেজা কণ্ঠে ডাকা,
মায়ের মমতাজড়ানো আদুরে রাগ দিব্যি চোখে ভাসে।
শিশিরভেজা সবুজ ঘাস পাড়িয়ে দলিয়ে
মাঠে বাবার জন্য মাথায় করে ভাত নেয়া
বাবার মাখানো মিষ্টি ভাত খাওয়া
সে ভাতের স্বাদ আর কোথাও পাইনা।
সকালের রোদে পেটানো বাবার ক্লান্ত মুখ
ক্লান্তমুখে একফালি হাসি,যেনো কালো মেঘের
ফাঁকে বেরুয়ে আসা একটু সুখের ঝলকানি।
চৈত্রে মহাদেবের উঠোনে হ্যাছাং জ্বেলে চৈতাদেল।
কাঁসা করতাল ঢাঁক হারমোনিয়ামের সুর বাজে
মাঝে মাঝে উঁলু উঁলু জয়োধ্বনি।
পুরুষদের দেবদেবী সাজা
মহরমে বাড়ি বাড়ি ফেনা খেচড়ি,শবেবরাতে রুটি।
পীরের বাড়ি সারারাত জিকির
বিলে গরু ছেড়ে,বাবলাতলায় রাখাল বাঁশির সুর।
কাদাজলে মাছ ধরা; গামছা,চালোন,ঝুড়িকলে,
ঠেলাজালি,হাতড়িয়ে।
অতিথি পাখির ভোজ আয়োজন।
আষাঢ়ে গর্তে গর্তে ব্যাঙের ঘ্যাঁঘুঘ্যাঁঘু ডাক
সন্ধ্যায় জোনাকির মেলা।
ভাগাড়ে শকুনদের মাংসোৎসব।
জৈষ্ঠে দিঘির পাড়ে বটগাছ তলায় দশড়ার মেলা
লোকজন, হৈ চৈ,শিশুদের প্যাঁপো প্যাঁপো মেলার বাঁশি,
কাঠের গাড়ি,মাটির পুতুল,রঙবেরঙের ঘুড়ি,
হরেক রকমের মৌসুমি ফল মিষ্টি।
দিঘিতে মানতের ডাব ছুড়ে ফেলা,চরকাখেলা,চুড়িখেলা।
মাঝে মাঝে পুলিশের হাঁকা বাঁশীর সাবধান বার্তা।
শীত মানে; গ্রাম জুড়ে পিঠা ঘরে ঘরে পিঠা উৎসব
বাহারি পিঠার সুগন্ধে বাতাস মৌ মৌ
চুলোর পাশে বসে মা’র হাতের পিঠা,স্বাদ বলা যাবে না।
রাতে বন্ধুদলে রস খাওয়ার মহড়া,চৈত্রের রস মিষ্টি বেশি।
আজ আমার সেই শৈশব কোথায় হারিয়ে গেলো
আমি কতদূর! কতদূর চলে এসেছি?