#মোঃ হাবিব ওসমান, ঝিনাইদহের চোখঃ
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ পৌরসভার আড়পাড়া ও চাপালী কুঠিপাড়া গ্রামের উপর দিয়ে যাওয়া ৩৩ হাজারের ‘হাই-ভোল্টেজ’ তারের নিচে জীবণবাজী রেখে প্রায় বসবাস করছে শতাধিক পরিবার ।
বিদ্যুৎ আইন বলছে, ‘হাই-ভোল্টেজ’-এর সঞ্চালন লাইনের নিচে কোনও ঘরবাড়ি বা স্থাপনা থাকতে পারবে না, ডানে ও বামে কমপক্ষে ১০ ফুট ফাঁকা থাকতে হবে। কিন্তু এসবের দিকে সেই আমল থেকেই এ পর্যন্ত কোন খেয়াল করেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এই এলাকায় বহু বাসাবাড়ির ওপর বিপজ্জনকভাবে ঝুলে রয়েছে এই ভয়ংকর ৩৩ হাজার ভোল্টেজের সঞ্চালন লাইনের তার।
আড়পাড়া ও চাপালী কুঠিপাড়া গ্রামে বসবাসকারী বাসিন্দাদের সাথে আড়পাড়া দরগাপাড়া গ্রামের ব্যাংকার মোজাম্মেল হক ও পল্লী চিকিৎসক আব্দুল জব্বার জানান, আড়পাড়া (নদীপাড়া), আড়পাড়া (মধূপট্টি), আড়পাড়া (কোটচাঁদপুর রোড), আড়পাড়া (মাঠপাড়া), আড়পাড়া (দরগাপাড়া) চাপালী কুঠিপাড়াসহ এই এলাকার বাসা বাড়ির ওপরে বিপজ্জনক ভাবে ঝুলে রয়েছে ৩৩ হাজার হাই-ভোল্টেজের সঞ্চালন বিদ্যুৎ লাইনের তার। আমরা আমাদের পরিবারের কোমলমতি শিশু, বৃদ্ধাসহ সবাই খুবই নিরাপত্তা হীনতা ভাবে বসবাস করছি।
আজ থেকে প্রায় ৪০ বছর আগে এটা স্থাপিত হয়। ৩৩ হাজার ভোল্টেজের এ লাইনটি যখন স্থাপন করা হয় তখন এ এলাকায় বাসাবাড়ি তেমন ছিল না। পরবর্তী সময়ে ধীরে ধীরে এলাকাটি ঘনবসতিপূর্ণ হয়ে উঠে। এই এলাকায় উচ্চ ভোল্টেজের তারের নিচেই আমাদের অসংখ্য বাসাবাড়ি রয়েছে। দীর্ঘ দিনের এই তার ধীরে ধীরে ঝুলে পড়েছে। স্থাপনের পর থেকে অদ্যবদি এই সঞ্চালন লাইনের মেরামত বা সংস্কার হয়নি। বর্তমানে লাইনটি অত্যন্ত বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে এ লাইনে দুর্ঘটনা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যাওয়ায় সম্ভাবনা রয়েছে। গত ২০ বছরে এই এলাকায় বাড়ি ঘর নির্মান করতে যেয়ে নির্মাণ শ্রমিকসহ ৪/৫ জন অকালে প্রাণ হারিয়েছে। আহত হয়েছে প্রায় ১৫ জন। এখনও পঙ্গুগুত্ব বরণ করছে অনেকে। আমরাও নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে বসবাস করছি।
‘কারেন্টের (বিদ্যুতের) তার এই এলাকার বেশিরভাগ ঘরবাড়ির ছাদ ও চাল ছুই ছুই অবস্থা। কিন্তু এটা নিয়ে কারো মাথাব্যথা নেই। কতো মানুষ যে লাইনে শখ খেযেছে তার কোনও হিসাব নাই।
লাইনের ডান-বামের পরিস্থিতি আতঙ্কিত হওয়ার মতো। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা দিয়ে বিদ্যুতের উচ্চ ভোল্টেজের লাইন যাওয়ায় অনেকে বাসাবাড়ি নির্মাণ করতে পারছেন না। আবার অনেকে বাসার কাজ শেষ করতে পারছে না। এ কারণে জায়গা জমি থাকার পরও অনেকের জমি পতিত পড়ে আছে। কেউ আবার অনেক কষ্টে কেনা জায়গা বেচে দেওয়ার চেষ্টা করছে।
স্থানীয়রা জানান, প্রায়ই শোনা যায় ছাদে কাজ করতে গিয়ে আহত হওয়ার খবর। তারা লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে সুস্থ হন। অনেকেই ছাদে উঠার সিঁড়িটি বন্ধ করে দিয়েছে। এ এলাকার বহু পরিবার রীতিমতো জীবনবাজি রেখে ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যুতের তারের নিচে বাসাবাড়িতে বসবাস করছেন।
এ ব্যাপারে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিষ্ট্রিবিউশন কোম্পানী (ওজোপাডিকোর) ভারপ্রাপ্ত আবাসিক প্রকৌশলী (আরই) মোঃ সাইদুল ইসলাম জানান, এটা অনেক আগে স্থাপিত হয়েছে এখন এটা রক্ষনা-বেক্ষন করা হয়। এ বিষয়ে ৩ মাস আগে ভূক্তভোগী পরিবারগুলো এলাকা এই তার অপসারনের জন্য বিদ্যুৎ অফিস বরাবর আবেদন করেছিল। তাদের এই আবেদনের প্রেক্ষিতে আমি আমাদের বিদ্যুৎ অফিসের লোকজন নিয়ে এলাকাটি সরেজমিনে পরিদর্শন করি। পরিদর্শন করে আমরা বুঝতে পারি আসলেই পরিবারগুলো খুবই বিপদজনক এবং নিরাপত্তাহীনতা ভাবে বসবাস করছে। এরপর আমি আমাদের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট বিষটির বিবরন তুলে ধরে আবেদন করি। আমি আশা করছি আগামী ২০২০ সালের মধ্যে এই সমস্যা সমাধান হবে।
তিনি আরো জানান খুব দ্রæত পৌরসভার চাপালী কুটিপাড়ার মাঠের মধ্যে বিদ্যুতের একটা সাব ষ্টেশন স্থাপনের কাজ শুরু হবে। আর এই ৩৩ হাজার কেভির এই সঞ্চালন লাইনটি ওখানে এসে সংযুক্ত হয়ে ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক হয়ে এই পাওয়ার হাউসে এসে সংযুক্ত হবে। এরপর পৌর এলাকার ঐ লাইনটি তখন অপসারন করা হবে।