কালীগঞ্জটপ লিড

কালীগঞ্জে কারেন্ট পোকায় কৃষক দিশেহারা

সাবজাল হোসেন, ঝিনাইদহের চোখঃ

গোলাম রসুল গ্রামের সিরাজুল ইসলামের ২৫ কাঠা জমি বছরে ১০ হাজার টাকায় ইজারা নিয়ে আমন ধানের চাষ করেছিলেন।

ঠিকমত পরিচর্যার মাধ্যমে ক্ষেতের ধানও হয়েছিল ভালো। তার আশা ছিল ক্ষেতের ধান ঘরে তুলে সব দায়দেনা পরিশোধ করবেন। কিন্ত ভরা মৌসুমের শেষের দিকে এসে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। কেননা হঠাৎ কারেন্ট পোকার আক্রমনে ক্ষেতের ধান গাছ শুকিয়ে বাইলের সবধান চিটা হয়ে যাচ্ছে।

বারোপাখিয়া গ্রামের গরীব কৃষক ওলিয়ার রহমান মাত্র ১২ কাঠা জমিতে শুধুমাত্র পরিবারের চাহিদা মেটাতে আমন ধানের চাষ করেছিলেন। ক্ষেতের ধান গাছের শিষও বের হয়েছিল। কিন্ত হঠাৎ করেই ক্ষেতের মাঝে মাঝে ধানগাছগুলো মরে শুকিয়ে গাছের সব ধান চিটা হয়ে গেছে। বেলাট গ্রামের ফজলুর রহমানের ২৫ কাঠা জমির ধানক্ষেত এ রোগে আক্রান্ত হয়ে এখন খরচের টাকাও আসবে না। খড়িকাডাঙ্গা গ্রামের কবির হোসেন, বালিডাঙ্গার কবির হোসেনের ক্ষেতের অবস্থা একই। শুধু এদের ক্ষেতই নয় ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের সকল মাঠেই বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে গেছে কারেন্ট পোকা। কৃষিকর্মকর্তারা বলছেন আবহাওয়াজনিত কারনে (বি,পি,এইচ) বা কারেন্ট পোকার আক্রমন দেখা দিয়েছে। কিন্ত কৃষকদেরকে পরামর্শ দেওয়ার কারনে এখনও ব্যাপকতা লাভ করতে পারেনি।

কালীগঞ্জ কৃষি অফিসসূত্রে জানাগেছে, চলতি মোৗসুমে আমন ধান রোপনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৯ হাজার হেক্টোর। কিন্ত চাষ হয়েছে ১৮ হাজার ৫’শত ৫০ হেক্টোর জমিতে।
সরেজমিনে উপজেলার বারোপাখিয়া, বলরামপুর, কোলা, খালকুলা, কাবিলপুর, উল্ল্যা, ডাউটি, খেদাপাড়া, কামালহাট, খড়িকাডাঙ্গা, মল্লিকপুর, সাইটবাড়িয়া, মনোহরপুর, রঘুনাথপুর, বেলাট, সাদিকপুর, সুন্দরপুর,আলাইপুর, বালিয়াডাঙ্গাসহ বিভিন্ন গ্রামের মাঠে ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ মাঠের আমন ক্ষেতে বিক্ষিপ্তভাবে কারেন্ট পোকা ছড়িয়ে পড়েছে। ক্ষেত বাঁচাতে কৃষকেরা কীটনাশক স্প্রে করছেন।

ক্ষতিগ্রস্থ উপজেলার খালকুলা গ্রামের কৃষক গোলাম রসুল জানান, আগের দিন বিকালে ভালো ক্ষেত দেখে পরের দিন বিকালে গিয়ে দেখি ক্ষেতের মাঝে মাঝে বেশ খানিক স্থান জুড়ে পাকা ধানের মত রঙ ধারন করে ধানগাছ শুকিয়ে গেছে। আক্রান্ত ধানগাছগুলোর বাইলের সব ধান চিটা পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন, আমি একজন বর্গাচাষী। অনেক কষ্টে টাকা জোগাড় করে ধানচাষ করেছিলাম। এখন ক্ষেতের এমন অবস্থা। কিভাবে সারা বছর সংসার চালাবো সেই চিন্তায় পড়েছি।

কথা হয় ক্ষেতে কীটনাশক স্প্রে করা কামালহাট গ্রামের কৃষক নিমাই বিশ্বাসের সাথে। তিনি জানান, আমাদের মাঠের অনেকের ক্ষেতে কারেন্ট পোকা লেগেছে। আমার ক্ষেতেও কিছু কিছু জায়গায় দেখা যাচ্ছে। সে কারনে ক্ষেতে কীটনাশক স্প্রে করছি। তিনি বলেন, সারাবছর পয়সা খরচ করে চাষ করে এখন ভরা ক্ষেত নষ্ট হচ্ছে। এর চেয়ে বড় ক্ষতি হতে পারেনা।

উপসহকারী কৃষিকর্মকর্তা মতিয়ার রহমান জানান, গত সপ্তাহের কয়েকদিনের গরমের পর বর্ষা হয়েছে। এরপর দিনের বেলায় ভ্যাপসা গরমের শেষে রাতে ঠান্ডা পড়ার কারনে ধানক্ষেতে (বিপিএইচ) বা বাদামী গাছ ফড়িং রোগ দেখা দিয়েছিল। কৃষকদের ভাষায়, এটাই কারেন্ট পোকা রোগ। তিনি বলেন, ক্ষেত প্রথম দিকে আক্রান্ত হলেও বর্তমানে নিয়ন্ত্রনে। তিনি আরও বলেন, ঠান্ডা গরম মিশ্রিত আবহাওয়ায় স্যাঁতসেতে জমিগুলোতে আক্রমনটা বেশি দেখা যায়। তিনি বলেন, প্রথম দিকে এ পোকা ধানগাছের গোড়ায় বাসাবেধে বংশবিস্তারের পাশাপাশি শুড় দিয়ে গাছের গোড়ার নরম কান্ডে ছিদ্র করে দেয়। এতে ধান গাছের হরমোন ক্ষয় হতে থাকে। ২য় পর্যায়ে গাছের কান্ডের ছিদ্র দিয়ে জাইলেম ফ্লোয়েম সিল হয়ে গিয়ে মাটি থেকেও খাদ্যরস নিতে পারে না গাছ। সর্বশেষ ৩য় পর্যায়ে এসে হঠাৎ করেই ধানগাছগুলো শুকিয়ে বাইলের সকল ধান চিটা হয়ে যায়। তিনি বলেন, এ পর্যায়ে আর কিছু করার থাকে না।

কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষিকর্মকর্তা জাহিদুল করিম জানান, বিভিন্ন কৃষকের ক্ষেতের বিপিএইচ রোগের কথা শুনেছেন। দিনের বেলায় গরম আর রাতে ঠান্ডা এমন আবহাওয়ায় এ রোগ দেখা দিয়েছিল। কিন্ত কৃষকদেরকে সচেতন করার কারনে ব্যাপক আকার ধারন করতে পারেনি। তিনি বলেন, আক্রান্ত ক্ষেতে প্লেনাম, হুপারসট, সপসিন , নিপসিন ক্ষেতে স্প্রে করতে কৃষকদেরকে পরামর্শ দিচ্ছেন। তিনি বলেন, ঠান্ডা পড়া শুরু হলে বিক্ষিপ্ত এ আক্রমন থাকবে না।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button