আর কত বয়স হলে ভাতা কার্ড পাবেন বিশারত ?
মাজেদ রেজা বাঁধন, ঝিনাইদহের চোখঃ
বিশারত মন্ডল। ঝিনাইদহ পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের একজন পুরুষ ভোটার।
নিজের বাড়ি নাই। অন্যের ঘরে ভাড়া থাকতে হয়েছে সারা জীবন। কাজ করে চুয়াডাঙ্গা স্ট্যান্ডের মল্লিক ভবনের দক্ষিণ দিকে অবনের কেরাম বোর্ড এর কারখানায় রং ও নকশার মিস্ত্রি হিসাবে।
বয়স ৭৫ বছর। বয়বৃদ্ধ এই লোকটির হাতের চামড়া কুচকে গেছে, শরীর অত্যন্ত দূর্বল। একটি বোর্ডে রং ও নকশা করে ১০০ টাকা পায়। প্রত্যেকদিন তিনটা বোর্ড রং করে তিনশ টাকা পায় তাই দিয়ে দুইজনের সংসার ও ঔষধপত্রের খরচ চলে। সে এক ছেলে ও এক কন্যার জনক। মেয়ে বিয়ে হয়ে চলে গেছে । ছেলে ড্রাইভার পৃথক থাকে। এখন তাদের দুইজনের সংসার। শহরে ঘর ভাড়া দিয়ে থাকতে না পেরে ভাটই স্কুলের পাশে কুলুদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে সেখান থেকে প্রত্যেকদিন কাজ করার উদ্দেশ্যে ঝিনাইদহে আসে আবার রাতে ফিরে যায়।
বিশারত মন্ডল ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার ১৪নং দুধসর ইউনিয়নের নাকোল গ্রামের মৃত খোরশেদ মন্ডলের ছেলে ।
পৈত্রিক সূত্রে দশ কাঠা জমি পেয়েছিলো তা মেয়ের বিয়ে দিতে বসত বাড়িসহ সর্বস্ব বিক্রি করে দিয়ে ঝিনাইদহের মাস্টার পাড়ায় ভাড়া থেকে চাকলা পাড়ার একটি ভাতের হোটেলে কাজ করতো। পরে আজ থেকে ত্রিশ বছর পূর্বে এই কাজে যোগ দেয় এখন পর্যন্ত এই কাজ করে যাচ্ছে। সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে একটি বয়স্কভাতার জন্য দীর্ঘ নিঃস্বাস ফেলছিলো। শহর থেকে গ্রামে আবার গ্রাম থেকে শহরে অনেক চেষ্টা করেও একটি ভাতার কার্ড সংগ্রহ করতে পারে নাই।
কতটা বয়স বৃদ্ধি পেলে একটি বয়স্কভাতার যোগ্য হওয়া যায় এটা তার জানা নেই শুধু জানতে চায় মৃত্যুর আগে একটু বিশ্রাম নেওয়ার কোন সুযোগ তার ভাগ্যে জুটবে কিনা। যে হাত একদিন ১০/১২টা বোর্ড রং করতে পারত এখন হাত চলে না, দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না সেই হাত আজ ২/৩টার বেশি রং করতে পারে না। এই কাজ করতে অনেক শক্তি লাগে। হাত অবস হয়ে আসে। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাজ করতে হয়। বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না। এই বয়সে এই কাজ করা যায় না তবুও কিছু করার নেই তাই বাধ্য হয়ে করতে হচ্ছে। লোকটি দীর্ঘ নিঃশ্বাসের সাথে জানায় ত্রিশ বছর ধরে এই কাজ করছি তাই মালিক দয়া করে আমাকে রেখেছে। প্রত্যেকদিন তিনটার বেশি বোর্ড রং করতে পারি না। বড় বোর্ড হলে দুইটা এবং ছোট বোর্ড হলে তিনটা রং করতে পারি। রাতে বাসায় যেয়ে হাত, পা, গা- গতরে ব্যথা করে, ঘুমাতে কষ্ট হয়। সকালে বিছানা ছেড়ে ওঠতে খুব কষ্ট পাই তবুও কাজে চলে আসতে হয়। সারা জীবন তো জন বিক্রি করলাম। আর তো শরীরে কুলায় না। যদি একটি কার্ডের ব্যবস্থা হতো তাহলে বাকি জীবনটা কিছুটা হলেও আয়েস পেতাম।