কালীগঞ্জের নির্মাণাধীন ছালাভরা ব্রীজটিই এখন বিষফোঁড়া
সাবজাল হোসেন, ঝিনাইদহের চোখঃ
সন্ধ্যা হলেই গাড়ি চালক আর বাসের যাত্রীদের বাড়তি চিন্তা। কখন তারা পার হবেন আলোচিত ব্রিজটি। কেননা একটু রাত হলেই দক্ষিণবঙ্গের মালবাহী হাজার হাজার ট্রাকের চাপে অন্ধকারের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকবে ভয়াবহ যানজট। তখন আর রক্ষা নেই। অপেক্ষা করতে হবে ঘন্টার পর ঘন্টা। এখান থেকে বের হওয়ার বিকল্প পথও নেই। ফলে প্রচন্ড ঠান্ডার মধ্যে দুর্বিসহ সময় কাটাতে হবে গাড়ীর লোকজন আর দুরপাল্লার যাত্রিদের। চিত্রটি যেন নিত্যদিনের। এমন অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে খুলনা-কুষ্টিয়া ব্যস্ততম মহাসড়কের ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের নির্মাণাধীন ছালাভরা ব্রীজটি ঘিরে।
হাইওয়ে প্রশাসন, পরিবহন শ্রমিক ও যাত্রীদের ভাষ্য, দীর্ঘদিনের ঝুঁকিপূর্ণ এ ব্রীজটি নির্মানের কাজ চলছে। যানজটমুক্ত মহাসড়কের জন্য এ ব্রীজটির পাশেই বিকল্প বাইপাস সড়ক নির্মাণ করা দরকার ছিল। কিন্ত তা না করে সরু বেইলী ব্রীজ নির্মান করা হয়েছে। যে কারনে যানজট নিত্যসঙ্গী হয়েছে। তবে সড়ক ও জনপদ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, নির্মাণাধীন ব্রীজটির দুই পাশেই খাল। যে খালের গভীরতা ২৮/৩০ ফুটেরও অধিক। ফলে বাইপাস সড়ক নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। যে কারনে নির্মানাধীন ব্রীজের ওপরই সরু বেইলী ব্রীজ নির্মান করা হয়েছে। এ ব্রীজের ওপর দিয়েই চলছে সব যানবাহন। যদিও ব্রীজটির একপাশের গাড়ি ছাড়লে অন্যপাশে গাড়ির লম্বা লাইন পড়ে যাচ্ছে। এটাতেও সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কিন্ত বিভিন্ন যানবাহনের কিছু চালক আছে তারা নিয়ম ভঙ্গ করে বিশৃংখলভাবে লাইন ছেড়ে আগে ওঠার চেষ্টা করছে। যে কারনে তাদের সৃষ্টির জন্য তারাও দায় এড়াতে পারেন না।
সরেজমিনে এ মহাসড়কে গেলে দেখা যায়, কালীগঞ্জের ছালাভরা নির্মাণাধীন ব্রীজের দুইধারে সারিবদ্ধ যানবাহনের প্রায় ১৫ কিলোমিটারের লম্বা লাইন। যে লাইনে সন্ধ্যার পর থেকে শত শত যাত্রীবাহী বাসসহ মালবাহী ট্রাক ছোট বড় গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। তারা ব্রীজের দু’ধারে অপেক্ষায় আছে বেইলী ব্রীজ পার হওয়ার জন্য। কিন্ত কিছু যানবাহন নিয়ম ও লাইন ভেঙে বিশৃংখলার মধ্যদিয়ে আগে উঠার চেষ্টা করার কারনে যানজটে আটকে রয়েছে। আর ঢাকা চট্রগ্রামসহ দুরপাল্লার গাড়িগুলোর যাত্রীরা প্রচন্ড শীতের মধ্যে গভীর রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করছেন।
গড়াই পরিবহনের আবুল কালাম নামের এক বাস চালক জানান, তারা সকালে কুষ্টিয়া থেকে যাত্রী নিয়ে খুলনায় গিয়েছিলেন। এরপর বিকালে খুলনা থেকে ফিরতি টিপে কুষ্টিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। কিন্ত মহাসড়কের কালীগঞ্জের ছালাভরা ব্্রীজের জন্য ভয়াবহ যানজটের শিকার হয়ে রাস্তায় পড়ে আছেন। তিনি বলেন, এমন অবস্থা প্রায় দিনই ঘটছে। কোন কোন দিন যাত্রী বোঝাই গাড়ি নিয়ে গভীর রাত পর্যন্ত গাড়ির লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। কিছু কিছু দিন রাতের শেষ ভাগে কুষ্টিয়ায় পৌছে বাসায় ফেরেন। আবার সকাল হলেই গাড়ি নিয়ে রওনা দিতে হয়। শ্রমজীবি মানুষ তারা ফলে ঠিকমত না ঘুমিয়েও তাদেরকে পেটের দায়ে গাড়ি নিয়ে ছুটতে হয় ।
জেলার মহেশপুরের সাইদুর রহমান নামের ঢাকা পরিবহনের যাত্রী জানান, বিকালের গাড়িতে ঢাকায় যাচ্ছেন। সকালে ঢাকায় গিয়ে অফিস ধরবেন। কিন্ত কালীঞ্জের ছালাভরা ব্রীজের আগে গাড়ির লম্বা লাইনের যানজটে আটকে গেছেন। শীতের ঠান্ডা রাত এখন হয়তো ব্রীজ পার হতেই রাত কেটে যাবে।
আলমগীর হোসেন নামের গড়াই পরিবহনের এক যাত্রী বলেন, দুপুরের পরই তিনি গড়াই পরিবহনে উঠে কুষ্টিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন। কিন্ত কালীগঞ্জের ছালাভরা ব্রীজের আগেই যানজটে আটকে আছেন। বেশ রাত হয়ে গেছে। শুনছি এখান থেকে ব্রীজের দুই ধারে প্রায় ১০ কিলোমিটার যানজট সৃষ্টি হয়েছে। ফলে কখনও বাড়ি পৌছাতে পারবেন জানিনা। তিনি অভিযোগ করে বলেন, দুই পাশে গাড়ির লম্বা লাইন পড়লেও সমস্যা নেই। কিন্ত কোন কোন গাড়ির চালক খামখেয়ালী করে অযথা আগে উঠার চেষ্টা করে যানজটটা আরও দীর্ঘস্থায়ী করছে।
কালীগঞ্জের তোতা মিয়া নামের ঢাকাগামী বাসের এক টিকিট কাউন্টার মালিকসহ একাধিক পরিবহনের চালক জানান, কালীগঞ্জ থেকে ঢাকাগামী রাতের অনেক পরিবহন ছালাভরা ব্রীজের যানজটের ঝামেলা এড়াতে কালীগঞ্জ শহরের মধ্যদিয়ে গ্রামের সড়ক ধরে আড়পাড়া হয়ে মাগুরায় উঠছেন। আবার কোন কোন ঢাকার পরিবহন শহরের মধ্যদিয়ে নারিকেলবাড়িয়া বাজার হয়ে সরু সড়কে গোপালপুর বাজারে উঠছেন। যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। তারা আরও জানান,দিনের বেলায় শহরের মধ্যদিয়ে গেলে শহরের মধ্যে আবার যানজটে আটকে যাচ্ছেন। ফলে ঝামেলা তাদের পিছু ছাড়ছে না।
হাইওয়ে পুলিশের এস আই কালীপদ বিশ্বাস যানজটের কথাটি স্বীকার করে জানান, নির্মাণাধীন ব্রীজটি ঘিরেই মুলত যানজট। যা প্রায় প্রতি রাতেই দেখা যাচ্ছে। তিনি বলেন ব্রীজটি নির্মানের আগে নির্মানাধীন ব্রীজটির দু’ধারে অবশ্যই বাইপাস সড়ক নির্মাণ করা প্রয়োজন ছিল। কিন্ত সেটা না করে ব্রীজটির এক পাশে সরু বেইলী ব্রীজ নির্মান করা হয়েছে। যে ব্রীজটি দিয়ে দেশের দক্ষিণাঞ্চালের ব্যস্ততম মহাসড়কটিতে যানজট লেগে থাকছে। তিনি বলেন, মংলা সমুদ্র বন্দর, ভোমরা বন্দর ও বেনাপোল স্থল বন্দর দিয়ে ছাড় হওয়া মালামালের মালবাহী ট্রাকসহ দক্ষিণাঞ্চালের সমস্ত মালামালের ট্রাক এ মহাসড়ক দিয়েই যাতায়াত করে থাকে। আর মালবাহী ট্রাকের চাপটা বেশি থাকে রাতে। এর পরেও রয়েছে দুরপাল্লাসহ স্থানীয় রুটে চলাচলরত যাত্রীবাহী বাস। ফলে পরিবহন আধিক্য ও সরু বীজের কারনে যানজট লেগে থাকে। যা কোন কোন রাতে অসহনীয় যানজটে রুপ নিয়ে ১৫/২০ কিলোমিটার পর্যন্ত গাড়ির লম্বা লাইন পড়ে যায়। যা নিরসনে তারা দিনরাত কাজ করছেন।
এ ব্যাপারে ঝিনাইদহ সড়ক ও জনপদের উপ প্রকৌশলী গোলাম সরোয়ার জানান, মহাসড়কের অত্যন্ত জনগুরুত্বপূর্ণ কালীগঞ্জের ছালাভরা ব্রীজটির নির্মান কাজ চলছে। ব্যস্ততম এ মহাসড়কের ওপরের ব্রীজটি নির্মানের আগে দুই ধারে বাইপাস সড়কের প্রয়োজন ছিল এটা সত্য। কিন্ত নির্মাণাধীন ব্রীজটির দুই পাশেই কমপক্ষে ৩০ ফুট গভীরের খাল। যে কারনে বাইপাস সড়ক নির্মান করা সম্ভব হয়নি। তবে যান চলাচল সাভাবিক রাখতে সরু হলেও বেইলী ব্রীজ নির্মান করা হয়েছে। যার ওপর দিয়েই চলছে সমস্ত যানবাহন। তিনি বলেন, টু লেনের বেইলী ব্রীজ নির্মানের জায়গা নেই। আর এটা তৈরী করা হলেও তা হতো অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। তিনি অভিযোগ করেন, সরু ব্রীজ দিয়েই সমস্ত যানবাহন চলাচল সম্ভব কিন্ত কিছু কিছু যানবাহনের চালকেরা একটু ফাঁকা সড়ক পেলেই লাইন ছেড়ে বিশৃংখলভাবে আগে উঠতে চায়। ফলে যানবাহন চলাচল আটকে যানজট সৃষ্টি হয়। মহাসড়কের ওপরেই ব্রীজ নির্মান হচ্ছে যে কারনে যান চলাচলে একটু অসুবিধা হতেই পারে। তবে কিছু যানবাহন চালকদের খামখেয়ালীপনায় অসহনীয় দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হচ্ছে।