কালীগঞ্জে ব্যতিক্রমী স্বাস্থ্য পাঠশালা
সাবজাল হোসেন, ঝিনাইদহের চোখঃ
বসতবাড়ি, অফিস আদালত কিংবা পথে ঘাটে যে কেউ হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। আশপাশে চিকিৎসার ব্যবস্থা না থাকলে আক্রান্ত ব্যক্তির হতে পারে চরম সঙ্কটাপন্ন অবস্থা। কিন্তু সব রোগেরই একটা প্রাথমিক চিকিৎসা রয়েছে। যা জানা থাকলে এমন বিপদ মূহুর্তে খানিকটা রক্ষা পাওয়া যায়। কিন্তু কোন রোগের প্রাথমিক চিকিৎসা কি তা বেশিরভাগ মানুষেরই জানা নেই। আর সেই কারনেই বিভিন্ন রোগের প্রাথমিক চিকিৎসার জ্ঞান দিতে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছেন ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের মেডিকপস নামের একটি সমবায় ভিত্তিক হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ। প্রতিষ্ঠানটি নিরিবিলি পরিবেশে স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার পাশাপাশি গড়ে তুলেছেন স্বাস্থ্য পাঠশালা। যে পাঠশালাতে প্রতি বৃহস্পতিবার সাধারন মানুষকে বিভিন্ন রোগের লক্ষন ও তার প্রাথমিক চিকিৎসা সম্পর্কে জ্ঞান দিয়ে আলোচনায় এসেছে।
সরেজমিনে হাসপাতালটিতে গেলে দেখা যায়, কালীগঞ্জ শহর থেকে খানিকটা একপাশের খোলামেলা প্রাকৃতিক পরিবেশে গড়ে তোলা হয়েছে প্রকৃতি মেডিকপস নামের একটি সমবায়ভিত্তিক হাসপাতাল। যেখানে অত্যন্ত নিরিবিলি পরিবেশে দেয়া হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা। সাথে সাথে হাসপাতালের একটি কক্ষে বসানো স্বাস্থ্য পাঠশালায় দেয়া হচ্ছে বিভিন্ন রোগের প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য করনীয় বিষয়ে জ্ঞান। অত্যন্ত আগ্রহের সাথে নারী পুরুষেরা এ পাঠশালাতে বসেই রোগে আক্রান্ত রোগীর প্রাথমিক চিকিৎসা সম্পর্কে শিখছেন। মোট ৫৩৭ জনের মালিকানায় প্রতিষ্ঠিত এ হাসপাতালটি। তবে তাৎক্ষনিক সমস্যা মোকাবেলায় রয়েছে ১১ সদস্যের নির্বাহী বা পরিচালনা কমিটি।
প্রকৃতি হাসপাতাল পরিচালনা কমিটির সাধারন সম্পাদক আনোয়ার হোসেন জানান, ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে প্রতিষ্ঠিত বহু মালিকানার একমাত্র সমবায়ভিক্তিক হাসপাতাল। তিনি বলেন, সাধারন মানুষের প্রকৃত সেবা দিতে হাসপাতালের উদ্যোগে স্বাস্থ্য পাঠশালার কার্যক্রম শুরু করেছেন। যেখানে বিভিন্ন রোগের প্রাথমিক চিকিৎসা সম্পর্কে জানতে হাসপাতালের স্বাস্থ্য পাঠশালায় ভীড় বাড়ছে।
সে কারনেই তারা হাসপাতালের চিকিৎসার পাশাপাশি এটাতেও গুরুত্ব দিচ্ছেন।
হাসপাতালটির উপদেষ্টাদের অন্যতম আতাউর রহমান মিটন জানান, প্রকৃতপক্ষে স্বাস্থসেবা সাধারন মানুষের কাছে পৌছে দিতে তারা মেডিকপস হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেছেন। সমবায়ের ভিত্তিতে প্রায় ৫ শতাধিক ব্যক্তির উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হাসপালটিতে প্রত্যেক সদস্যকে প্রথম পর্যায়ে ১ হাজার ৫০ টাকা দিয়ে একটি শেয়ারের মালিক হতে হয়েছে। এরপর প্রতিমাসে ৫০ টাকা চাঁদা দিয়ে শেয়ারে সঞ্চয় করার সুযোগ রয়েছে। তিনি জানান, অনেক শেয়ার মালিক আছেন যারা একাই শতাধিক শেয়ার কিনেছেন। বছর শেষে তিনি চাইলে হাসপাতালের রোজগারের লভ্যাংশ তুলে নিতে পারবেন। আবার শেয়ার মালিকদের পরিবারের কেউ অসুস্থ হলে যাবতীয় পরীক্ষা নিরীক্ষাসহ সমুদয় ব্যয়ের অর্ধেকটা বহন করতে হবে। তিনি আরও বলেন,হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা দেয়ার পাশাপাশি তারা সাধারন মানুষের মধ্যে যে কোন রোগের লক্ষণ ও প্রাথমিক চিকিৎসা সম্পর্কে ধারনা দেয়া হচ্ছে। যা জানা থাকলে অনেক রোগী মুহুমুর্ষ অবস্থা থেকে রক্ষা পেতে পারেন। সর্বোপরি এতো সংখ্যক মালিকের হাসপাতালের মুল লক্ষ্য হলো সেবামুলক।
ববিতা খাতুন নামের এক গৃহিণী জানান, প্রতি বৃহস্পতিবার সকাল সকাল গৃহস্থালীর কাজ শেষ করে মেডিকপস হাসপাতালের স্বাস্থ্য পাঠশালায় যোগ দেন। সেখানে অভিজ্ঞ চিকিৎসক দ্বারা বিভিন্ন রোগের লক্ষণ ও প্রাথমিক চিকিৎসা সম্পর্কে জ্ঞান দান করা হয়। তিনি বলেন, মানুষ মাত্রই অসুস্থ হতে পারেন। কিন্ত অনেক রোগ আছে যেগুলো নিজেরাই প্রতিরোধ করা যায়। এ সম্পর্কে স্বাস্থ্য পাঠশালাতে শিখতে পারছেন। কোন রোগের লক্ষণ কি তা জানতে পারছেন। এটা জেনে আবার প্রাথমিক চিকিৎসা সম্পর্কেও জ্ঞানার্জন করছেন। এই গৃহিনী আরও জানান, তার সাথে আরও অনেকে বিভিন্ন রোগের লক্ষণ সম্পর্কে এবং প্রাথমিক চিকিৎসা সম্পর্কে জেনে তারা উপকৃত হচ্ছেন।
কালীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি জামির হোসেন জানান, সমবায়ভিত্তিতে পরিচালিত কালীগঞ্জের মেডিকপস হাসপাতালে সাধারন রোগীদের সেবা দেওয়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্য পাঠশালায় আপদকালীন সময়ের জন্য মানুষকে চিকিৎসা সম্পর্কে ধারনা দেয়া হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, তাদের কর্মকান্ডে মনে হচ্ছে বানিজ্যিকভাবে নয় বরং সেবার জন্য তারা কাজ করছেন।
কালীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আশরাফুল আলম আশরাফ জানান, প্রায় সাড়ে ৫’শ মানুষের আর্থিক সহযোগীতায় এ হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যা সমবায়ের ভিত্তিতে পরিচালিত হচ্ছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্বাস্থ্য পাঠশালায় নারী পুরুষদের রোগ ও রোগের প্রাথমিক চিকিৎসা সম্পর্কে ধারনা দিচ্ছেন। তিনি মনে করেন এটি সারাদেশের মধ্যে ব্যতিক্রমী এক উদ্যোগ। তিনি বলেন, এমন সেবামুলক উদ্যোগ নেয়ার জন্য কতৃপক্ষ ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য।