কালীগঞ্জজানা-অজানাটপ লিডদেখা-অদেখা

কালীগঞ্জে সুস্বাদু পাবদা মাছ চাষে অভাবনীয় সাফল্য

আরিফ মোল্ল্যা, ঝিনাইদহের চোখঃ

ট্যাংরা, পুঁটি, কৈ, পাবদাসহ দেশীয় প্রজাতির মাছ প্রায় বিলুপ্তি প্রায়। তবে এখনও যে অল্প সংখ্যক মাছ বাজারে আসে তাও দামে বেশ চড়া। ফলে সুস্বাদু এ মাছগুলো চলে যায় ধনী মানুষের রান্নাঘরে। তবে পুকুরে পাবদা মাছের সফল চাষ শুরু হওয়ায় আবার আশার আলো দেখা দিয়েছে।

উপজেলা মৎস অফিসের সহযোগিতায় মৎস খামারি মমরেজ আলী বিশ্বাস(৪৯) পুকুরে সুস্বাদু পাবদা মাছের চাষ করেছেন। আশানুরুপ উৎপাদনে অন্য যেকোন মাছ চাষের থেকে বেশি মুনাফা পাওয়ায় তিনি বেশ খুশি । আগামীতে আরো অধিক জলাকারে পাবদা মাছের চাষ করার চিন্তা করছেন তিনি।

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের নিশ্চিন্তপুর গ্রামের আলহাজ্ব শওকত আলী বিশ্বাসের ছেলে মমরেজ আলী বিশ্বাস উপজেলার জামাল ইউনিয়নের তৈলকুপি গ্রামে ৬ একর পুকুরে দেশি পাবদা মাছের চাষ করেছেন। এর আগে ২০১৮ সালে ২৫ শতাংশ জলাকারে পাবদা মাছ চাষ করে ৩০ হাজার টাকা মুনাফা পেয়েছিলেন। তবে সেটি ছিল কালীগঞ্জ উপজেলা মৎসৎ অফিসের দেয়া একটি প্রোজেক্ট। মৎস অফিসের দেয়া ১০ হাজার পাবদা পোনা ছেড়ে ৭ মাস পরে মাছ ধরে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে সকল খরচ বাদে ওই পরিমান মুনাফা তিনি পেয়েছিলেন।
অন্যান্য মাছ চাষের তুলনায় পাবদা মাছের চাষ লাভজনক হওয়ায় দ্বিতীয় বার তিনি ২০১৯ সালের মে মাসে ৬ একর পুকুরে সাড়ে ৩লক্ষ পাবদা মাছের পোনা ছাড়েন। তখন মাছের দৈর্ঘ্য ছিলো প্রায় ২ ইঞ্চি। সে সময় প্রতি পিচ মাছ কিনতে হয়েছিল ১টাকা করে। পাবদা মাছের সাথে প্রতি শতাংশে ১০ পিচ হারে কার্ভ জাতীয় মাছ ছেড়েছিলেন। ৭ মাস পরে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে ১২টন পাবদা মাছ বিক্রি করেছেন। যার বাজার মূল্য প্রায় ৪৫ লক্ষ টাকা। এছাড়া এক মাস পর কার্ভ মাছ বিক্রি থেকে কমপক্ষে আরও ৮ লক্ষ টাকা আয় হবে বলে তিনি জানান। পুকুর লিজ, খাবার, ঔষধ, বিদ্যুত বিল, নিয়মিত ও অনিয়মিত শ্রমিকের বেতন সহ অন্যান্য খরচ মিলে ৩৮ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। সেই হিসেবে তার নিট মুনাফা কমপক্ষে ১৫লক্ষ টাকা।

মাছ বাজারজাতকরণ নিয়ে তিনি বলেন, আমাদের দেশীয় বাজারে এই মাছ বিক্রি করলে কেজি প্রতি ৩’শ থেকে ৩’শ ৫০ টাকা পাওয়া যায়। তবে ভারতীয় ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করতে পারলে কেজি প্রতি ৩’শ ৭০ থেকে ৩’শ ৮০ টাকা দর পাওয়া যায়। মমরেজ জানান, এ বছরে তার উৎপাদিত সকল মাছ ভারতীয় এক ক্রেতা ক্রয় করে ভারতে নিয়ে গেছেন।

মাছ চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চাইলে মমরেজ বলেন, যে পুকুরে মাছ চাষ করা হবে প্রথমে সেই পুকুরের পানি সেচে পানি শূন্য করে চুন দিয়ে শোধন করে নিতে হবে। পরে নার্সারী মাছ (মাছের পোনা) ছাড়তে হবে। এর পর বয়সের সাথে সাথে বিভিন্ন সাইজে খাবার খাওয়াতে হয়। মাছের ওজনের ২০ থেকে ২৫ ভাগ পরিমান খাবার খাওয়াতে হয়। তিনি বলেন, অনেকে দুই বার খাবার খাওয়ালেও তিনি খাবার দিতেন একবার। প্রতিদিন সন্ধ্যার পরে খাবার দিতেন। এদিকে বেশি ঘনত্বে মাছ চাষ করায় তাকে ৩ একর পুকুরে ৫টি এয়ারেটর ব্যবহার করতে হয়েছে। যার প্রতিটির মূল্য প্রায় ৩৪ হাজার টাকা। এ মাছে খুব একটা রোগ বালাই দেখা যায় না। তারপরও মাসে দুইবার গ্যাসোনিল ও ৪০দিন পর পর জীবানু নাশক ঔষধ ব্যবহার করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

নতুনদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, পাবদা মাছের চাষ যথেষ্ট লাভজনক। যে কেউ এ মাছের চাষ করলে লাভবান হবেন। বিদ্যুতের ব্যবস্থা থাকলে পুকুরে এয়ারেটর ব্যবহার করা ভালো। এতে একই জলাকারে অধিক মাছ চাষ করা যায়। এয়ারেটর ব্যবহার করলে প্রতি শতাংশ জমিতে ৫’শ পিচ পাবাদা ও ১০ পিচ কার্ভ জাতীয় মাছ ছাড়া যায়। এয়ারেটর না ব্যবহার করলে ৪’শ পিচ পাবদা ও ৭ পিচ কার্ভ জাতীয় মাছ ছাড়া যায়।

কালীগঞ্জ উপজেলা মৎস কর্মকর্তা সাইদুর রহমান রেজা বলেন, বৃহত্তর যশোর জেলায় মৎস চাষ উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে মৎস খামারী মমরেজ বিশ্বাসকে ১০ হাজার পাবদা মাছ ও ৫ব্যাগ খাবার দেয়া হয়। মাত্র ২৫ শতাংশ জলাকারে পাবদা চাষ করে তিনি বেশ লাভবান হন এবং সেখান থেকে উৎসাহিত হয়ে ২০১৯ সালে ১৮ বিঘা পুকুরে পাবদা মাছের চাষ করে আরো অধিক লাভবান হয়েছেন। তিনি আরো বলেন, দেশিয় প্রজাতির হারিয়ে যাওয়া মাছ ফিরিয়ে আনতে মৎস অধিদপ্তর নিরলস প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। তারই অংশ হিসেবে কালীগঞ্জ মৎস অফিস দেশিয় পাবদা মাছ চাষের সম্প্রসারণ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button