ঝিনাইদহের চোখঃ
খুঁচরা-পাইকার ব্যবসায়ী, কৃষক-গ্রহস্থ্যদের কেনা-বেঁচার পাশাপাশি হাজার হাজার সাধারণ ক্রেতা-বিক্রেতারদের ভিড়ে জন¯্রােত হয়ে পড়েছে ঝিনাইদহের শৈলকুপার ভাটই হাট। এই বিষয়ে ক্যামেরায় কথা বলতে রাজি হলেন না উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। আর বাজার কমিটি বলছে ইউএনওর সাথে তাদের আলাপ হয়েছে, শুধু কাঁচা বাজার আর দুরত্ব বজায় রেখে স্বল্পপরিসরে হাট বসেছে। এদিকে উদ্বেগ প্রকাশ করে চিকিৎসকরা সাফ জানালেন এমন অবস্থায় করেনার মহামারি রোধ সম্ভব নয়। হাট হোক, ঘাট হোক, বাজার হোক আর যেকোন জায়গা হোক ১০ জনের বেশী উপস্থিতি মানেই ভয়ঙ্কর ব্যাপার !
ট্রাকে-ভ্যানে, নসিমনে পেঁয়াজ, ধান,গম মসুরী, তিল সহ নানা চৈতালী ফসলে খুব ভোরেই ভরে ওঠে খুলনা-কুষ্টিয়া মহাসড়ক সংলগ্ন শৈলকুপার ভাটই বাজারের আজ বুধবারের সাপ্তাহিক হাট। নানা পণ্য আর মানুষের চাপে প্রতি সপ্তাহেই এখানকার মহাসড়কটি প্রায় দখলে থাকে ব্যবসায়ীদের। সপ্তাহের রবি ও বুধবার বসে এই পুরাতন ঐতিহ্যবাহী হাঁট টি । চট পেতে শাড়ি-লুঙ্গি সহ যাবতীয় পোষাক বিক্রি, দীর্ঘ লাইনে খাট-পালঙ্ক, কোথাও হার্ডওয়ার সামগ্রী, মিষ্টি-মিঠাই, পান-বিড়ি, চা-বিস্কিট, দোকানে টিভি-ফ্রিজ আর তারুণ্যের আনাগোনা আছে সবই। মাছ বাজারের সেই চিরায়িত ভিড়, মাংসের ঘরগুলোয় দীর্ঘ দরকষাকষি সবই চলছে। খোলা জায়গা, রাস্তার ধার সহ একাধিক হাঁটচান্দিনায় সকাল থেকেই হাজার হাজার মানুষের ভিড়। আর সারি সারি মুদি দোকান তো রয়েছেই। বাজার-ঘাটে আসা ক্রেতা-বিক্রেতা, দিনমুজুর আর গৃহস্থ্য- ব্যবসায়ীরা জানায়, করোনার কারণে বেশ কিছুদিন হাটটি বন্ধ ছিল। এতে তাদের দ’ুবেলা খাবারই জুটছে না, তাই বাধ্য হয়ে আসা ।
সাপ্তাহিক এই ভাটই হাটে মানুষের ভীড়ে ঘাড় ঘোরাবার জায়গা নেই। ধুলাবালি, জাগায় জাগায় জটলা আর কথা কাটাকাটি, বয়স্কদের হাঁচি-কাশি, কাটফাঁটা রোদ্দুরে নাভিশ্বাস আছে সবই । টোং ঘরগুলিতে বসে শ্রমজীবি মানুষের চা পান, পিড়িতে বসা নাপিতের কাছে চুলকাটার ভীড়। এ যেন কেউ কথা রাখেনি! তবে এই ছোঁয়াছে করোনা ভাইরাস নিয়ে অনেকেই সচেতন দাবি করলেও বলছে নিরুপায় হয়ে বাজারে আসা, আর কেনাকাটা সেরে দ্রুতই ঘরে ফিরবে ।
নিরাপদ দুরত্ব বজায় রেখে শুধু চাল-ডাল আর কিছু কাঁচা বাজারের সাময়িক কেনা-বেঁচার নির্দেশ থাকলেও, কাঁচা বাজার যেন ঢেকে গেছে বাণিজ্যের পাহাড়ে ! বৈষ্মিক করোনা ভাইরাসের মহামারী প্রতিরোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আর প্রশাসনের মাধ্যমে যখন শহর-বন্দর, রাস্তা-ঘাট শুধু ফাঁকাই করা হচ্ছে না, জরিমানা, সাজা দেয়াও হচ্ছে। আগামী আরোও ১ সপ্তাহ বা তারও বেশী সময় ঘরে থাকার সরকারী নির্দেশনা দেয়া হয়েছে তখন হঠাৎ এমন হাট বসানো বা মানুষ কে বাজারমুখি নিয়ে ক্যামেরায় কথা বলতে চাননি শৈলকুপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম। তবে তিনি বলছেন শুধু কাঁচাবাজার আর চাল সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় কিছুর জন্য স্বল্পপরিসরে কেনাকাটা হওয়ার কথা।
এদিকে ভাটই বাজার কমিটির সভাপতি বাদশা আলমগীর জানান ইউএনওর সাথে তাদের আলাপ হয়েছে, শুধু কাঁচা বাজার আর দুরত্ব বজায় রেখে স্বল্পপরিসরে হাট বসিয়েছেন।
সামাজিক দুরত্ব আর ঘরে থাকার কঠোর হুশিয়ারীর মধ্যে দিনভর এমন সাপ্তাহিক হাটের চিত্র বিষ্মিত করেছে ডাক্তারদের। উদ্বেগ প্রকাশ করে চিকিৎসকরা সাফ জানালেন এমন অবস্থা চলতে থাকলে করোনার মহামারী রোধ সম্ভব নয় ।
শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রাশেদ আল মামুন জানান, হাট হোক, ঘাট হোক, বাজার হোক আর যেকোন জায়গা হোক ১০ জনের বেশী উপস্থিতি মানেই ভয়ঙ্কর ব্যাপার ! এমন অবস্থায় করোনা প্রতিরোধ সম্ভব নয় শংকা প্রকাশ করেন।