অক্সফোর্ডের করোনাযুদ্ধে দুই বাঙালি নারী
ঝিনাইদহের চোখঃ
মানব বিধ্বংসী করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রতিষেধক তৈরি করেছেন অক্সফোর্ডের বিজ্ঞানী সারাহ গিলবার্টের নেতৃত্বে গবেষক দল । চ্যাডক্স -১৯ নামের এই ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা পরীক্ষায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্বেচ্ছায় নিজ দেহে স্যাম্পল নিয়েছেন এলিসা গ্রানাতো। সারা বিশ্ব এখন অপেক্ষায় তাদের দিকে। এলিসার দেহে এন্টিবডি তৈরি হলে তার দেহে ঢুকিয়ে দেওয়া ভাইরাস। ওই এন্টিবডি যদি করোনাভাইরাসকে মেরে ফেলতে সক্ষম হয়, তাহলেই ধরে নেয়া হবে যে ভ্যাকসিনটি শতভাগ সফল ও কার্যকর হয়েছে।
সারা গিলবার্টের করোনা ভ্যাকসিন প্রজেক্টে সঙ্গে কাজ করছেন একদল গবেষক।এই গবেষণা দলে রয়েছেন দুই বাঙালি নারী সুমি বিশ্বাস এবং চন্দ্রা দত্ত।
অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির জেনার ইনস্টিটিউটের অধীনে করোনা প্রতিষেধক নিয়ে যে গবেষণা চলছে, সেই দলটির সঙ্গে রয়েছেন সুমি। আর চন্দ্রা কাজ করছেন অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির ক্লিনিকাল বায়োম্যানুফ্যাকচারিং ফেসিলিটির কোয়ালিটি অ্যাসিওরেন্স ম্যানেজার হিসেবে। এই ফেসিলিটি থেকেই তৈরি হয়েছে নোভেল করোনা ভাইরাসের প্রতিষেধক চ্যাডক্স-১৯। গত বৃহস্পতিবারপরীক্ষামূলকভাবে প্রতিষেধকটি এলিসা ও অপর এক তরুণের দেহে প্রয়োগ হয়েছে। এর কার্যকারিতা প্রমাণের অপেক্ষায় আছে। প্রতিষেধকটির সফল হওয়ার সম্ভাবনা ৮০ শ তাংশ বলে মনে করছেন গবেষকরা।
সরাসরি সারা গিলবার্টের নেতৃত্বে গবেষণারত ১৫ জন বিজ্ঞানীর দলে রয়েছেন সুমি। পেশায় ইমিউনোলজিস্ট সুমি বেঙ্গালুরু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাইক্রোবায়োলজি নিয়ে পড়াশোনা শেষ করে ইংল্যান্ড চলে যান। লন্ডন স্কুল অফ হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিকাল মেডিসিনে বছরখানেক কাজ করার পরে যোগ দেন অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে। এরপর ২০১৩সালে জেনার ইনস্টিটিউটে ম্যালেরিয়ার প্রতিষেধক তৈরির কাজ শুরু করেন সুমি। এই মুহূর্তে ম্যালেরিয়ার প্রতিষেধক নিয়ে জেনার ইনস্টিটিউটের গবেষণাদলের শীর্ষেও রয়েছেন এই বাঙালি মেয়ে। এ ছাড়া অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের অন্তর্গত গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্পাইবায়োটেকের চিফ এগজিকিউটিভ অফিসার হিসেবেও কর্মরত ইমিউনোলজিস্ট সুমি।
সারা গিলবার্টের সঙ্গে সরাসরি না হলেও একই প্রজেক্টে কাজ করছেন চন্দ্রা দত্ত, যার ডাক নাম চন্দ্রাবলী। কলকাতার হেরিটেজ ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজিতে বিটেক করার পর ২০০৯ সালে ব্রিটেনে চলে যান চন্দ্রা। লিডস ইউনিভার্সিটি থেকে বায়োসায়েন্সে (বায়োটেকনোলজি) এম এসসি করেন। তারপর একাধিক দায়িত্বশীল পদে কাজ করেছেন তিনি। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির ক্লিনিকাল বায়োম্যানুফ্যাকচারিং ফেসিলিটিতে যোগ দেওয়ার পর ভ্যাকসিন তৈরির গুণগত মানের দিকটি নজরে রাখেন চন্দ্রা। যথাযথ পদ্ধতি এবং নিয়ম মেনে ভ্যাকসিন তৈরি হয়েছে কিনা, সব কিছু ঠিকমতো করা হয়েছে কিনা, অর্থাৎ কোয়ালিটি অ্যাসিওরেন্সের বিষয়টি সুনিশ্চিত করাই চন্দ্রার দায়িত্ব।
গত সপ্তাহের বৃহস্পতিবার এলিসা গ্রানাতোর দেহে করোনা প্রতিষেধকের প্রথম পরীক্ষামূলক প্রয়োগের পরই সুমি ও চন্দ্রা যার যার বাড়িতে বসে অনলাইনে পর্যবেক্ষণ করছেন ভলেন্টিয়ারকে। এন্টিবডি তৈরি হওয়ার পরই তাদের ডাক আসার কথা। সেই অপেক্ষায় আছেন দুই বাঙালি নারী। এরপরই শুরু হবে গবেষণার পরবর্তী ধাপ। সাফল্য এলে তৈরি শুরু হবে পেটেন্ট আর ব্যর্থতায় ভ্যাকসিনটি নিয়ে শুরু হবে নতুন পর্যায়ের গবেষণা।
সারা গিলবার্ট আর ভলেন্টিয়ার এলিসার মতোই দুই কৃতি বাঙালি তরুণী সুমি বিশ্বাস আর চন্দ্রা দত্ত ভীষণ আশাবাদী যে ভ্যাকসিনটি কার্যকর হবে। তাদের এই আশা যেন বাস্তবে রূপ নেয়, এই প্রার্থনা সমগ্র বিশ্ববাসীর।