ঢাকা থেকে ঝিনাইদহ যাওয়ার ভাড়া ১০ হাজার টাকা!
ঝিনাইদহের চোখঃ
অতিরিক্ত ভাড়া ও করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়েই প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ করতে বাড়ি ফিরছে হাজার হাজার মানুষ। এ সময় সামাজিক দূরত্ব মানতে দেখা যায়নি যাত্রীদের।
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া ঘাটে শনিবার (২৩ মে) ভোর থেকেই যাত্রীদের প্রচুর চাপ দেখা গেছে। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় চরম বিপাকে পড়েছে ঘাটে আসা ঈদে ঘরমুখো মানুষ। পাটুরিয়া ঘাট পার হলেও দৌলতদিয়া ঘাটে এসে কোনো যানবাহন না পাওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা।
ঈদে ব্যক্তিগত গাড়ি ছাড়া কেউ বাড়ি যেতে পারবে না বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে একটি নির্দেশনা রয়েছে। তাই একটু কৌশল অবলম্বন করে মহাসড়কে ভাড়ায় প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাস চালাচ্ছে চালকরা। মূলত পাটুরিয়া ঘাট থেকে আসা সাধারণ যাত্রীদের সঙ্গে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা চুক্তি করে মহাসড়কে ছুটছে ভাড়ায়চালিত প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসগুলো। অভিযোগ রয়েছে, স্বাভাবিক সময়ের থেকে কয়েকগুণ ভাড়া বেশি নিয়ে যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছে দিচ্ছে তারা।
শনিবার দুপুরে সরেজমিনে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া বাস টার্মিনাল ও ফেরি ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, যাত্রীদের অপেক্ষায় সারিবদ্ধভাবে ভাড়ায়চালিত মাইক্রোবাস ও প্রাইভেটকারগুলো দাঁড়িয়ে আছে। যাত্রীদের সঙ্গে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা চুক্তি করে ঘাট এলাকা ছাড়ছে তারা। ওই সময় চালকরা যাত্রীদের শিখিয়ে দিচ্ছে- কেউ প্রশ্ন করলে বলবেন এটা ব্যক্তিগত গাড়ি।
ঝিনাইদহগামী যাত্রী আবুল হোসেন বলেন, ‘দুই ঘণ্টা আগে ঘাটে এসেছি। কিন্তু এখান থেকে ঝিনাইদহ যাওয়ার কোনো যানবাহন পাচ্ছিনা। এখন কীভাবে যাবো বুঝতে পারছি না।’
সপরিবারে ঢাকা থেকে আসা বেসরকারি একটি সংস্থার কর্মকর্তা বলেন, ‘গাবতলী থেকে চার হাজার টাকা দিয়ে একটি প্রাইভেটকার ভাড়া করে পাটুরিয়ায় এসেছি। কিন্তু দৌলতদিয়া ঘাট থেকে মাইক্রোবাস ঝিনাইদহ পর্যন্ত ভাড়া চায় ছয় হাজার টাকা।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ভাড়ায়চালিত প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসের চালক বলেন, ‘ভাই কী করব? করোনার কারণে এতদিন ঘরে বসেছিলাম। এভাবেতো আর ঘরে বসে থাকা যায় না। কাজ না করলে খাব কী?’
যশোরগামী যাত্রী কামাল হোসেন জানান, গণপরিবহন বন্ধ থাকায় সড়কে কোনো গাড়ি নেই। তাই নিরুপায় হয়েই প্রাইভেটকার ভাড়া করেছি।’
শনিবার সকাল ৮টায় দৌলতদিয়ার ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে দেখা যায়, ভোর থেকেই ঘাটে প্রচুর যাত্রীর চাপ রয়েছে। কিন্তু গণপরিবহন বন্ধ থাকায় দৌলতদিয়া ঘাটে এসে তারা ঘরে ফিরতে অনেকটা হিমশিম খাচ্ছেন। বিশেষ করে যারা দূরের যাত্রী- যশোর, ঝিনাইদহ, মাগুরা ও কুষ্টিয়ার, তারা পড়েছে বেশি ভোগান্তিতে।
ঘাট সূত্রে জানা গেছে, সড়কে গণপরিবহন না থাকায় ঢাকার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ভেঙে ভেঙে পাটুরিয়াতে এসে গাদাগাদি করে ফেরিতে নদী পার হয়ে দৌলতদিয়াতে আসছেন যাত্রীরা। দৌলতদিয়া প্রান্তের সড়কেও গণপরিবহন না থাকায় ঘাটে নেমে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ঘরমুখো যাত্রীদের চরম ভোগান্তিতে পোহাতে হচ্ছে। এসব যাত্রীরা কয়েকগুণ বাড়তি ভাড়া দিয়ে মোটরসাইকেল, অটোরিকশা, ভ্যান, প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসে গন্তব্য যাচ্ছেন।
ঘরমুখো যাত্রীরা জানান, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌ রুটে ফেরি চলাচলে বাধা না থাকায় তারা নদী পার হয়ে আসতে পারছেন। কিন্তু সড়কে গণপরিবহন না থাকায় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এছাড়া অনেক অতিরিক্ত ভাড়া লাগছে। তবে তারা করোনাভাইরাসের ঝুঁকির মধ্যেও বাড়িতে আসতে পারছেন এবং সবার সঙ্গে ঈদ করতে পারবেন বলে অনেক খুশি।
বিআইডব্লিউটিসি’র দৌলতদিয়া ঘাটের ব্যবস্থাপক মো. আবু আব্দুল্লাহ রনি জানান, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌ রুটে বর্তমান ৯টি ছোটবড় ফেরি চলাচল করছে। এতে পণ্যবাহী ট্রাক, মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার, অ্যাম্বুলেন্স, মোটরসাইকেলসহ হাজার হাজার যাত্রী পারাপার হচ্ছে।