সাবজাল হোসেন, ঝিনাইদহের চোখঃ
অভাব মাড়িয়ে এ বছরে এসএসসিতে জিপিএ ৫ প্রাপ্ত ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের হতদরিদ্র আসমানী ও জিহাদের নিয়ে দৈনিক সংবাদ, সমকাল, যুগান্তর, মানবকন্ঠ, যায়যায়দিন, ইনকিলাব, ভোরের কাগজ, ডেইলি বাংলাদেশ, পূর্বাচল, নিউজ এজেন্সি পিবিএ, দৈনিক গ্রামের কাগজ,স্পন্দন, দৈনিক নোয়াপাড়া,দৈনিক নবচিত্র, খবর কালীগঞ্জ,সবুজদেশ, ঝিনাইদহের চোখ,ক্রাইম ওয়াল্ড নিউজসহ বিভিন্ন অনলাইন পোর্টাল ও পত্রিকায় প্রতিবেদন, প্রকাশের পর লেখাপড়ার সুযোগ সৃষ্টিতে এগিয়ে আসলেন অনেকে। এতে দুই মেধাবীর অভিভাবকেরা হয়েছেন চিন্তা মুক্ত। তাদের অদম্য মেধা ও পারিবারিক দৈন্যতার কথা তুলে ধরে দেশের অত্যন্ত পাঠকপ্রিয় অনলাইন পত্রিকা ”ডেইলি বাংলাদেশে গত ৩১ মে ”অভাব রুখতে পারেনি আসমানীকে এবং ৯ জুন ”রিকসাচালক বাবার হ্যান্ডেলে ভর করে আলো ছড়াচ্ছে দুই ভাই” শিরোনামে দুটি সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। একইভাবে বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় তাদের খবর খবর প্রকাশিত হওয়ার পর তাদের অধ্যাবসায়ের স্বীকৃতিস্বরুপ এবং আর্থিক সঙ্গতি না থাকায় মানবিক সাহায্যের জন্য অনেকে এগিয়ে এসেছেন।
আসমানীর বাবা ওলিয়ার রহমান জানান, মেয়ের ফলাফল প্রকাশের পর নাম প্রকাশ না করেই ইংল্যান্ড প্রবাসী এক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখে নিজেই ফোনে যোগাযোগ করে লেখাপড়ার খরচ দেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। অন্যদিকে ঢাকার এক মহানুভব ব্যক্তিও একইভাবে মুঠোফোনে একই কথা বলেছেন। আবার ঝিনাইদহের বিশ্ববিদ্যালয় পড়–য়া শিক্ষার্থীদের সংগঠন helpful hands এর নেতৃবৃন্দ বাড়িতে এসে শিক্ষা উপকরণসহ শিক্ষাবৃত্তি প্রদানের বিষয়টি নিশ্চিত করে গেছেন। এছাড়াও কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সূবর্ণা রানী সাহাও আসমানীর ভর্তির সময় সাহায্য করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।
এদিকে রিকসাচালক বাবার জাহিদ জিহাদ দুই মেধাবী সন্তানকে নিয়ে পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখে এগিয়ে এসেছেন একই সংগঠন। তাদেরকেও শিক্ষাবৃত্তির আওতায় প্রতিমাসে শিক্ষাবৃত্তি ও শিক্ষা উপকরন প্রদান করবেন বাড়িতে এসে নিশ্চিত করেছেন সংগঠনটির নেতৃবৃন্দ। জাহিদ জিহাদের মা জাহানারা খাতুন এ বিষয়টি জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, জাহিদ, জিহাদ ও আসমানী অত্যন্ত মেধাবী ও হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান হলেও অদম্য মেধার অধিকারী। এদের মধ্যে উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামের জাহিদ -জিহাদ দুই ভাই। জাহিদ বড় আর জিহাদ ছোট। বাবার রিকসার হ্যান্ডেলে ভর করে জাহিদ ২০১৮ সালে এস এসসিতে রুস্তম আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে জিপিএ ৫ পেয়েছিল। সে এ বছর যশোরের কাজী নজরুল ইসলাম ডিগ্রী কলেজের একাদশ মানবিক শাখার অর্ধ বার্ষিকী পরীক্ষায় প্রায় সাড়ে ৩ শ শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রথম হয়েছে। ছোট ভাই জিহাদও এ বছর এস এসসিতে একই স্কুল থেকে জিপিএ ৫ পেয়েছে। আর একই উপজেলার ডাউটি গ্রামের দিনমজুর ওলিয়ার রহমানের মেয়ে ও কোলাবাজার ইউনাইটেড হাইস্কুল থেকে আসমানীও নানা অভাবের মধ্যদিয়ে লেখাপড়া করে জিপিএ পেয়ে সকলকে চমকে দিয়েছে। পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করার পর কিভাবে কলেজে লেখাপড়ার খরচ চালাবেন উভয় পরিবারের অভিভাবকেরা সে চিন্তায় ছিলেন। এখন তাদের সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দেয়ায় আশার আলো দেখছেন তারা।
কালীগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ভুপালি রানি সরকার জানান, হতদরিদ্র মেধাবী আসমানী ও জাহিদ জিহাদের পরিবারের খোঁজ নিয়ে দেখেছেন উভয় পরিবারই ভূমিহীন। ফলে পরিবার দুটিকে ভূমিহীনদের তালিকায় নাম দেয়া হয়েছে। সুযোগ আসলে সরকারী সুবিধা নিশ্চিতের সুপারিশ করবেন।