রাবি’র ছাত্র ঝিনাইদহের সন্তান লিখন এখন গ্রামের আদর্শ
ঝিনাইদহের চোখ-
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী লিখন আহমেদ। করোনাকালে সময় যেন কাটছিল না তার। পরে অবসর সময়কে কাজে লাগাতে সবজি চাষ শুরু করেন তিনি। স্বল্প পরিসরে শুরু করলেও এখন নয়টি আইটেম নিয়ে কাজ করছেন। মোট ৯ বিঘা জমিতে সবুজ শাক, পুইশাক, উচ্ছে, ঝিঙা, মিষ্টি কুমড়া, লাউ, পুকুরে মাছচাষসহ পুকুর পাড়ে কলা ও বেগুনেরর চাষ করছেন। পরিবারের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বেশিরভাগ অংশ বিক্রি হচ্ছে বাজারে।
এ দৃশ্য ঝিনাইদহ শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে কুমড়াবাড়ীয়া ইউনিয়নের ধোপাবিলা গ্রামের। করোনা ভাইরাসের মহামারীতে অবসর সময়কে কাজে লাগিয়ে ‘সমন্বিত কৃষি উদ্যোগ’ নিয়ে কৃষিকাজ করছেন লিখন আহমেদ নামের এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী। এতে একদিকে তো পরিবারের চাহিদা মিটিছেই, অন্যদিকে উৎপন্ন ফসল বিক্রি করে মিলছে আর্থিক সচ্ছলতা। সেই সঙ্গে অবসরও ভালো কাটছে তাঁর।
লিখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী। করোনার প্রকোপ শুরু হলে গত মার্চে বাড়ি আসেন তিনি। এরপর সময়টাকে ভালোভাবে কাজে লাগাতে শুরু করেন কৃষিকাজ।
শুরুর গল্পে লিখন বলছিলেন, করোনাকালে সময় যেন কাটছিল না তার। হঠাৎ করেই মাথায় কৃষি কাজের চিন্তা আসে। এরপর এক টুকরো জমিও অনাবাদি না রাখার প্রধানমন্ত্রীর সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে দীর্ঘ ছুটি পেয়ে কৃষি কাজ শুরু করে সে। তার অস্তিত্ব, তার শেকড় যেন কৃষি, কৃষক ও এদেশের মাটি। করোনায় দীর্ঘদিন বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের ঘোষণা পেয়ে গত ২০ মার্চ থেকে ‘সমন্বিত কৃষি উদ্যোগ’ নিয়ে কাজ শুরু করেন তিনি।
লিখন বলেন, প্রথম দিকে ২ কাঠা সবুজ শাক, ৫ কাঠা পুইশাক এবং ৫ কাঠা মিষ্টিকুমড়া লাগিয়ে স্বল্প পরিসরে চাষ শুরু করি। তবে শুরুর দিকে সবজির দাম কম থাকায় এবং আম্ফানে ঝিঙা ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এটি আমার কাছে বেশ চ্যালেঞ্জের ছিল। এ নিয়ে হতাশ হয়নি। এখন সব আইটেমের দাম ভালো পাচ্ছি।
তিনি বলেন, ১ কেজি উচ্ছে বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকায়, ঝিঙা ২৫ টাকা, পুইশাক ১৫ টাকা আটি, সবুজশাক ৫ টাকা আটি, মিষ্টিকুমড়া ১৫ টাকা। পাইকারি মূল্যে ঝিনাইদহ সদরের স্থানীয় বাজারে এইসব সবজি দিচ্ছি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এটি ঝিনাইদহ শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে কুমড়াবাড়ীয়া ইউনিয়নের ধোপাবিলা গ্রামে। মোট নয় বিঘা (তিন একর) জমিতে কৃষি কাজ চলছে। এর মধ্যে ছয় বিঘা পুকুরে মাস চাষসহ পুকুর পাড়ে কলা ও বেগুনের চাষ করা হচ্ছে। এক বিঘা জমিতে লাউ চাষ ও ৫ কাঠা (সোয়া আট ডেসিমাল) জমিতে মিষ্টিকুমড়া চাষ হচ্ছে। বাকি জমির ১০ শতাংশ সবুজ শাক, ৫ শতাংশ পুইশাক, ৫ শতাংশ উচ্ছে, এবং ৫ শতাংশে ঝিঙা চাষ করা হচ্ছে।
লিখন বলেন, প্রথম দিকে শুধু সব্জি (সবুজ শাক, পুইশাক, উচ্ছে, ঝিঙা, মিষ্টিকুমড়া) থেকে লাভ এসেছে প্রায় ৩০-৩৫ হাজার টাকা। উচ্ছে, পুইশাক ও ঝিঙা এখনও ফলন দিচ্ছে। ১ বিঘা জমির লাউ থেকে প্রায় ৫০-৬০ হাজার টাকা এসেছে। এটি এখনো ফলন দিচ্ছে। আর মাছ, কলা এবং বেগুন চাষ করা শুরু হয়েছে। আশা করছি, বড় একটা সফলতা আসবে।
লিখন জানান, কৃষি কাজ বা সবজি চাষের ব্যাপারে লিখন পূর্বে নিজ পরিবার থেকে কিছুটা পেয়েছে। তবে ‘সমন্বিত কৃষি উদ্যোগ’ শুরু করার জন্য কৃষিভিত্তিক বিভিন্ন ভিডিও ও ইন্টারনেটের সহযোগিতা নেন। এছাড়া ইন্টারনেট থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গার তরুণ কৃষি উদ্যোক্তাদের সফলতার খোঁজ-খবর নেন।
সম্প্রতি ওই ‘সমন্বিত কৃষি উদ্যোগ’ পরিদর্শন করেছেন কুমরাবাড়িয়া ইউনিয়নের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান। জানতে চাইলে হবিবুর বলেন, ‘আমি তার (লিখন) প্রায় ৮-৯ বিঘা কৃষি খামার ঘুরে দেখেছি। সেখানে তার মাছ চাষসহ বিভিন্ন ধরণের সবজি ক্ষেত আমি পরিদর্শন করেছি। পরিকল্পিতভাবে চাষ করায় ভালো ফলন দেখা গেছে। মাছ ও সবজি চাষে তার অগ্রগতি লক্ষ করা যায়।’ এসময় লিখনের কৃষি কাজে সার্বিক সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন ওই কৃষি কর্মকর্তা।
লিখন বলেন, এই করোনা মহামারীতে নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করেছি। ঠিক যেন একজন সফল কৃষক হয়ে গেছি। একজন কৃষক যেমন বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ ফেইস করে, সেগুলো অভারকাম করে সফলতা পেয়েছি। ঠিক তেমনিভাবে আমিও এখন কৃষি নিয়ে দিনযাপন করছি।
কৃষি কাজ করে এখন পর্যন্ত প্রায় ১ লক্ষ টাকা লাভ হয়েছে এবং আরো লাভ হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।