অন্যান্য

নীরব ঘাতক শব্দ দূষণে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে শহুরে জীবন

ঝিনাইদহের চোখঃ

নীরব ঘাতক শব্দ দূষণে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রাজধানীবাসী। চরম বিরক্তিরকর, মেজাজ খিটখিটেকারী, পারস্পরিক সম্পর্ক বিনষ্টকারী, অস্থিরতা বৃদ্ধিকারী, শ্রবণশক্তি বিনষ্টকারী, উচ্চরক্তচাপ, অনিয়মিত হৃদস্পন্দন, মাথা ধরা, বদহজম, পেপটিক আলসার এবং অনিদ্রাসহ বিভিন্ন রোগ সৃষ্টিকারী এক ঘাতকের নাম এই শব্দ দূষণ।

এক গবেষণায় ওঠে এসেছে, ঢাকায় শব্দ দূষণের মাত্রা তিন থেকে চারগুণেরও বেশি। উন্নত বিশ্বে যানবাহনের হর্ন বাজানো নিয়ে কড়াকড়ি আইন থাকলেও রাজধানীতে এর কোনো প্রয়োগ নেই। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা হাসপাতালের সামনে দিয়ে বিকট শব্দে হর্ন বাজিয়ে গাড়ি চালিয়ে গেলেও তা দেখার কেউ নেই। শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ আইন ও বিধি-বিধান থাকলেও সেগুলোর কোনো প্রয়োগ নেই। এই শব্দ দূষণ রোধের আইন যেন ‘কাজীর গরু কেতাবে আছে গোয়ালে নেই।’

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজধানীতে ভয়াবহভাবে বেড়েছে শব্দ দূষণ। রাজধানীর ৯০ শতাংশ মানুষ কানে কম শুনে। এর কারণ হচ্ছে প্রতিনিয়ত উচ্চ হারে শব্দ গ্রহণ করা। রাজধানীতে হাইড্রলিক ভেঁপু ব্যবহার বেড়েই চলছে। আকস্মিক ভেঁপুর শব্দ একজন মানুষকে বধির কিংবা বেহুঁশ করে দিতে পারে। অথচ এই অপরাধের জরিমানা মাত্র একশ টাকা।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, শব্দ দূষণ যে কোনো মানুষের জন্য ক্ষতিকর হলেও হর্নের ফলে শিশু এবং গর্ভবতী নারীরা বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এছাড়াও ট্রাফিক পুলিশ, রিক্সা বা গাড়ি চালক, রাস্তার নিকটস্থ শ্রমিক বা বসবাসকারী মানুষ অধিক হারে ক্ষতির স্বীকার হচ্ছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ৬০ ডেসিবেল মাত্রার শব্দ মানুষকে অস্থায়ী বধির এবং ১০০ ডেসিবেল মাত্রার শব্দ মানুষকে স্থায়ীভাবে বধির করে দেয়। অথচ ঢাকা শহরে শব্দের মাত্রা ধারণা করা হয় ৬০-৮০ ডেসিবেল যা মানুষকে বধির করে দিতে পারে।

ঢাকার রাস্তায় হর্ন/ভেঁপুর শব্দে মনে হয় গাড়ি চালকরা যেন ভেঁপু বাজানোর প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। বিনা প্রয়োজনে হরহামেশাই যত্রতত্র হর্ন বাজানো হচ্ছে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বা সংরক্ষিত এলাকা যেমন মসজিদ, মন্দির, হাসপাতালের পাশের রাস্তাগুলোতেও ভেঁপু বাজানো বন্ধ করে না এই চালকরা। অথচ গাড়ির ভেঁপুর এই বিকট শব্দে চলার পথেই অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে যে কেউ। গাড়ীতে হাইড্রোলিক ভেঁপু নিষিদ্ধ থাকলেও সে নিষেধ মানার সময় নেই চালকদের।

এ ব্যপারে ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (ডুয়েট) চিফ মেডিকেল অফিসার নিউরোন বিশেষজ্ঞ ডা. মো. এমদাদূল হক জানান, শব্দ দূষণের ফলে ০-৫ বছর বয়সী শিশুদের স্বাভাবিক মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়, শ্রবণ শক্তি নষ্ট করে দিচ্ছে। হঠাৎ করে হর্ন দেওয়ার ফলে অনেকেই হার্ট অ্যাটাক করে। এছাড়া, অতিরিক্ত হর্নের ফলে মেজাজ খিটমিটে হয়ে যায়, যার ফলে অপরাধ প্রবনতা বেড়ে যায়।

তিনি আরও বলেন, আমরা একটু খেয়াল করলেই দেখতে পাই, শিশু বয়সে বেশির ভাগ শিক্ষার্থী মেধাবী থাকলেও বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তার অ্যাকাডেমিক ফলের মান কমতে থাকে। নিম্ন মাধ্যমিক বা মাধ্যমিক পর্যায়ে যে পরিমাণ মেধাবী দেখা যায় উচ্চ মাধ্যমিকে সে পরিমাণ ফল পাওয়া যায় না।

শব্দ দূষণ রোধে জনসচেতনতা ও করণীয় :

১. টিভি এবং মিউজিক সিস্টেমের আস্তে করে দিন।

২. ঘন ঘন অযথা গাড়ির হর্ন বাজাবেন না।

৩. হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।

৪. লাউড স্পিকারের ব্যবহার করতে নিষেধ করুন।

৫. বিয়ে বাড়ির শোভাযাত্রায় ব্যান্ড বাজানো, পটকা ফাটানো বন্ধ করুন।

৬ . সবাইকে শব্দ দূষণ সংক্রান্ত আইন মেনে চলার কথা বলুন।

শব্দ দুষণের এই ভয়াবহতা থেকে জাতিকে মুক্ত করতে হলে সরকারকে এখনই পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন আইনের পূর্ণ বাস্তবায়ন। আইন বাস্তবায়নের জন্য জরিমানা আদায় নিশ্চিত করতে হবে।

লেখক : শিক্ষার্থী, ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button