ঝিনাইদহে ত্বীন ফল চাষে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুক্ষিণ চাষী
মনজুর আলম, ষ্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহের চোখ-
ঝিনাইদহে ত্বীন ফলের বাজার চাহিদা না থাকা এবং সংরক্ষন করতে না পারায় চাষীরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুক্ষিণ ।
তবে কৃষি বিভাগ জানান, কয়েকজন নিজ উদ্যোগে এই ফলের আবাদ করেছেন। ফলের বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে, পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা হবে।
জেলার কোটচাঁদপুর উপজেলার কাগমারি গ্রামের হারুন-অর-রশিদ ওরফে মুসা জানান, ইউটিউবে তালুকদার নামের এক ব্যক্তির ত্বীন ফলের আবাদ দেখে তিনি অনুপ্রাণিত হন। খোঁজখবর নিয়ে গ্রামের মাঠে ৩০ শতক জমিতে আবাদ করেন। গাছগুলোতে এখন ফল আসতে শুরু করেছে। লোকজন বাগান দেখতে আসছে। গাছে ফল পাকতে শুরু করেছে। কিন্তু এই ফলের কোন বাজার চাহিদা না থাকায় বিক্রি করতে না ফিরে এখন তিনি হতাশ হচ্ছেন। সংরক্ষন করা যাচ্ছে না, তাই গাছ গুলোতেই ফল পেকে ঝড়ে নষ্ট হচ্ছে।
অপর চাষি জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নের বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের শরিফ উদ্দিন রানা জানান, তিনি বিজ্ঞাপন দেখে ১ বিঘা জমিতে ত্বীন ফলের আবাদ করেছেন। প্রতিটি চারা সাড়ে ৩ শত টাকা দরে ৪ শতাধিক চারা তিনি ওই জমিতে রোপণ করেছেন। এখানে তার প্রায় ৩ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। চার মাস পরে গাছগুলোতে ফুল আসতে শুরু করে। এখন প্রতিটি গাছে ফুল থেকে ফল হয়েছে। ফলগুলো পাকতে শুরু করেছে। কিন্তু বাজার চাহিদা না থাকা এবং বিক্রির জায়গা খুঁজে না পেয়ে তিনিও হতাশ হচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঝিনাইদহ সাধারণত মিশরী-১, মিশরী-২, মিনি গোল্ড এবং কুর্তামিনি নামের ত্বীন ফলের আবাদ হচ্ছে। ঝিনাইদহে ত্বীন ফলের চারা সরবরাহকারী অন্যতম প্রতিষ্ঠান হচ্ছে মহেশপুর উপজেলার খালিশপুরের শান্ত নার্সারি। এই প্রতিষ্ঠানের মালিক একই উপজেলার বজ্রাপুর গ্রামের হেকমত আলী।
জানতে চাইলে তিনি জানান, লোকজন আগ্রহী হয়ে ত্বীন ফলের চারা চাইলে তিনি চারা সংগ্রহ করে দেন। এরইমধ্যে ১৮ থেকে ২০ জনের চারা দিয়েছেন বলে তিনি জানান। তবে এই ফলের বাজার চাহিদা কেমন বা কোথায় বিক্রি করতে হবে তিনি নিজেও জানেন না।
সরেজমিন দেখা গেছে, তিনি বজ্রাপুর গ্রামের ময়না গাড়ি মাঠে ১৫ শতক জমিতে ত্বীন ফলের চারা রোপন করেছেন। পাশেই রয়েছে চারা উৎপাদনের জন্য ফার্ম। সেখানে বিভিন্ন চারার পাশাপাশি ত্বীন ফল গাছে বেঁধেছেন কলম বিক্রি জন্য।
সেখানে চারা কিনতে এসেছেন মহেশপুর উপজেলা শহরের শাকিব নামে এক যুবক। তিনি জানান, শৌখিনতার জন্য ছাদ বাগান করেছেন। ইউটিউবে কোরআন শরীফ এ বর্ণিত ত্বীন ফলের গুনগতমান ও উপকারিতা শুনে এখানে চারা কিনতে এসেছেন। প্রতিটি ছাদের চারার জন্য ৫ শত থেকে ৮ শত টাকা দরে নিচ্ছেন বলে তিনি জানান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঝিনাইদহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (প্রশিক্ষণ) কর্মকর্তা বিজয় কৃষ্ণ হালদার জানান, ঝিনাইদহে ব্যক্তি উদ্যোগে কয়েকজন ত্বীন ফলের আবাদ করেছেন। যা ১ দশমিক ৮৭ হেক্টর জমিতে। যেখানে কালীগঞ্জ উপজেলায় শূণ্য দশমিক ৩৪ হেক্টর, কোটচাঁদপুর উপজেলায় ১ দশমিক ০৪ হেক্টর ও মহেশপুর উপজেলার শূন্য দশমিক ৪৯ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে।
তিনি আরো জানান, ফলটি দেখতে ডুমুরের ফলের মত, তবে সাইজ একটু বড়, পিছনের দিকটা চ্যাপ্টা হয়ে। ঝিনাইদহে এটা নতুন একটি ফল। এটা কেমন হবে, সে বিষয়ে এখনও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়নি। তবে খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনে একটা ব্যবস্থা করবেন বলে তিনি জানান।