পাঠকের কথা

ক্ষুধাতিহাস–গুলজার হোসেন গরিব

ঝিনাইদহের চোখঃ

হৃদয়ে লেগে আছে
দেগে যাওয়া যে ক্ষুধাতিহাস
আজো তার উদগিরণ হয়
অব্যক্ত স্মৃতির গহ্বরে।

ভাতের হাড়ি ছিঁকায় তোলা।
নুনের পেয়ালা শুন্য।
চুলার পাশে পড়ে আছে
তেলের বোতল মরা লাশের মতন,
সাথে ক’টা ঝালের বোটা
মুর্দা বোতলের শোক পালন করছে।
রুটিবেলা বেলুন,তার গায়ে লেগে থাকা
শুকনো গোলা আটা
শক্ত করে ধরে রেখেছে,
ওটুক ওর ছাড়া আর কারো নয়।
রুটিবেলা মোটা তকতায়
কাদা ছেঁনে ছোটরা মাটির রুটি বানায়।
কাঁসার চামচ অনেকদিন ব্যবহার
না করার কারণে যাচ্ছেতাই।
গম ভাজার জন্য মেটে কলসির তলা
বড়ই গাছের গোড়ায় হুবড়ি খেয়ে পড়ে আছে।
ঘর ক্ষুধার ঝরে জরাজীর্ণ
বৃষ্টি হলেই ছন গড়িয়ে টপটপ পানি পড়ে।

পানি?
পানি বাঁচার একমাত্র সম্বল,
মসজিদের কলের পানি মা
সবসময় মেটে দুই কলসি ভরে রাখতো,
একটু পরপর সেই পানি
মধু মনে করে পান করতাম।
বেঁচে থাকার জন্য আরো কিছু উপকরণও ছিলো,
পাশের বাড়ির ভাতের সুগন্ধি বাষ্প,
মসলা তেলে দেয়া শব্দ,
ওদের থালবাটির ঠকঠকানি,
মেঘলা বাতাস,
এঁরাই বাঁচিয়ে রেখেছিলো সেদিন।

কেউ পাশে ছিলো সেদিন
পাশে ছিলোনা পাশের বাড়ির লোক,
পাশে ছিলোনা আল্লাওয়ালা,
ভগবান ওয়ালা,
পাশে ছিলোনা সে,যাকে আমরা
একবিশ্বাসের নাম ধরে ডাকি।
পাশের বাড়ির যারা দেখতে আসতো
তারা চোখ ভরে দেখতো ক্ষুধার ছটফটানি,
দেখতো শকুনের মতো করে,
কখন ক্ষুধার যন্ত্রনায়
আস্তে আস্তে নিঃশ্বাস হারাবে।
এ ছিলো ঘটে যাওয়া জীবনের
অব্যক্ত সংক্ষিপ্ত ক্ষুধাতিহাস।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button