ক্যাম্পাসজানা-অজানাঝিনাইদহ সদরটপ লিডদেখা-অদেখা

ঝরেপড়াদের জন্য ব্যতিক্রমী ঝিনাইদহ ‘সবুজ শিশু পাঠাগার’ (ভিডিও)

ঝিনাইদহের চোখ-
দরিদ্র পরিবারের অভিভাবকেরা সন্তানদের বিদ্যালয়ে পাঠাতে চান না। অনেক শিশুও পড়ালেখা করতে আগ্রহ দেখায় না। এ কারণে শিক্ষা কার্যক্রম থেকে ঝরে পড়ে অনেক শিশু। ঝরেপড়া এসব শিশুর জন্য রয়েছে ‘সবুজ শিশু পাঠাগার’। এখানে অসহায়-দরিদ্র পরিবারের শিশু ও শিক্ষার্থীদের পড়ানো হয়। প্রায় ১৫ বছর কোনো পারিশ্রমিক ছাড়াই তাঁদের পড়াচ্ছেন শিক্ষক আলমগীর কবির।

আলমগীর কবির ঝিনাইদহ সদর উপজেলার খাজুরা গ্রামের মৃত আবুল হোসেন বিশ্বাসের ছেলে। তাঁর স্ত্রী ও এক মেয়ে রয়েছে। তিনি স্থানীয় একটি পলিটেকনিক কলেজের শিক্ষক।

ঝিনাইদহ শহর থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে খাজুরা গ্রামের অবস্থান। এলাকার মধ্যে এটি বেশ বড় গ্রাম। প্রায় ১৫ হাজার মানুষের বসবাস। শহরসংলগ্ন হলেও এ গ্রামে শিক্ষার হার ছিল কম। ঝরেপড়া শিশুর সংখ্যাও ছিল বেশি। তবে বর্তমানে প্রাথমিকের গণ্ডি পেরিয়ে সব শিক্ষার্থী মাধ্যমিক স্তরে যাচ্ছে। গ্রামের লোকজন জানান, গ্রামের সব ছেলেমেয়ে স্কুলে যাচ্ছে। এর কৃতিত্ব পুরোটাই আলমগীর কবিরের।

সম্প্রতি কথা হয় শিক্ষক আলমগীর কবিরের সঙ্গে। তিনি বলেন, তাঁর সঙ্গে পড়ালেখা করেছেন, এমন অনেকে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায় থেকে ঝরে গেছে। এটা দেখে তাঁর মাথায় চিন্তা আসে, ঝরেপড়া রোধ এবং বাচ্চাদের জীবনমুখী শিক্ষা দিতে হবে। ২০০৪ সালে তিনি গ্রামের কয়েকজনকে নিয়ে এ বিষয়ে আলোচনা করেন। সেখানে স্কুল প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ঘর না থাকায় গ্রামের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কক্ষে কাজ শুরু করেন। ওই সময় ২০-২৫টি শিশু তাঁর পাঠাগারে পড়ত। তাঁদের অনেকেই এখন চাকরি করেন। আবার অনেকে আছেন, যাঁরা দেশের বিভিন্ন এলাকায় কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করছেন।

নিজের প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতার পাশাপাশি আলমগীর কবির পাঠাগারে শিশুদের পাঠদান করতেন। চার বছর পেরিয়ে যাওয়ার পর নিজ বাড়ির আঙিনায় ঘর নির্মাণ করেন। তিনটি কক্ষে বর্তমানে ৩০-৩৫টি শিশু পড়ালেখা করছে। স্কুল শুরুর আগে ও ছুটির পর বাচ্চাদের পাঠদান করা হয়। প্রতিদিন দুই শিফটে ক্লাস নেওয়া হয়। সকাল ৭টা থেকে ৯টা ও বিকেল ৪টা থেকে ৫টা পর্যন্ত। তাঁর এই পাঠাগারে পড়ালেখা করেছেন, এমন দুজন তাঁকে সহযোগিতা করছেন। করোনা পরিস্থিতিতে পাঠদান কিছুদিন বন্ধ ছিল, বর্তমানে আবার কার্যক্রম শুরু করেছেন।

আলমগীর কবির বলেন, দরিদ্র পরিবারের শিশুদের পাশাপাশি সচ্ছল পরিবারের শিশুরাও তাঁর পাঠাগারে আসে। কারও কাছ থেকে কোনো পয়সা নেন না। তবে অনেক সময় কোনো শিশুর বই, খাতা, কলম কেনার জন্য বিত্তবান অভিভাবকের কাছ থেকে সহযোগিতা নেওয়া হয়। তিনি নিজেও নানা সময়ে দরিদ্র বাচ্চাদের শিক্ষার উপকরণ দিয়ে থাকেন।

পাঠাগারের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র মনিরুল ইসলাম জানায়, তার বাবা একজন শ্রমিক। অনেক কষ্টে তাদের সংসার চলে। এই পাঠাগারে বিনা পয়সায় পড়তে পারছে। সবুজ শিশু পাঠাগারে পড়েছেন আল-আমিন। বর্তমানে তিনি পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করছেন। তিনি বলেন, ‘আলমগীর কবির স্যারের সহযোগিতা না পেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া সম্ভব হতো না। সময়-সুযোগ পেলেই আমি পাঠাগারে চলে আসি। বাচ্চাদের পড়াই।’

গ্রামের বাসিন্দা হারুন-অর রশিদ বলেন, শিক্ষক আলমগীর কবিরের উদ্যোগে গ্রামের সব বাচ্চা পড়ালেখা করছে। তিনি নিজের সন্তানের মতো করে বাচ্চাদের বড় করছেন। তাদের মধ্যে নৈতিক শিক্ষা ফিরে এসেছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button