কালীগঞ্জজানা-অজানা

৯৩ এ চলে কালীগঞ্জের প্রথম প্রশিক্ষিত ধাত্রী সাধনা বিশ্বাস

ঝিনাইদহের চোখ-
সাধনা বিশ্বাসের জন্ম হয় ১৯২৯ সালে। সাতক্ষীরা জেলার মুড়াগাছা গ্রামে। যশোর জিলা স্কুলে ক্লাস নাইনে পড়ার সময় বিবাহসূত্রে চলে আসেন ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার নিশ্চিন্তপুর গ্রামে। বিয়ে হয় হরিপদ বিশ্বাসের সাথে। তারপরও থেমে যাননি সাধনা। স্বামীর বাড়ীতে থেকেও প্রশিক্ষণ নেন ধাত্রী ও নার্স বিদ্যায়।

কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, ১৯৬৩ সালে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি প্রতিষ্ঠালাভ করে। তখন প্রসূতি মায়েদের দেকভাল করা লোকের খুবই অভাব। সেইসময় এ উপজেলার একমাত্র প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ধাত্রী হওয়ায় তাঁকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে চাকরি দেওয়া হয়। এ পর্যন্ত প্রায় ৩ হাজারেরও বেশী প্রসূতী মায়েদের সন্তান জন্মদানে সহায়তা করেছেন। ১৯৮৯ সালে তিনি চাকরি থেকে অবসর যান।

যে মহীয়সী নারীর কথা বলা হচ্ছে তিন ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার প্রথম প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ধাত্রী সাধনা বিশ্বাসের কথা। মহীয়সী এই নারী ৯৩ বছর বয়সে গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে নিজ বাড়িতে মারা যান। এই সংবাদ ছড়িয়ে পড়তেই সাধনা বিশ্বাসকে শেষবারের জন্য দেখতে ছুটে এসেছেন কালীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আশরাফুল আলম, উপজেলা পরিষদের বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান শিবলী নোমানী, পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের নেতারাসহ অনেকে। তাঁর মৃত্যুতে উপজেলায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

তারপরও সাধনা বিশ্বাসের ডাক পড়া থেমে থাকেনি। একসময় বয়সের কারণে ধাত্রীসেবার কাজে থামতে হয় তাঁকে। এই সুদীর্ঘ জীবনে সন্তান প্রসবে সহায়তাকারী হিসেবে তিনি কাজ করে গেলেও কখনো কারও কাছ থেকে টাকা নেননি। হাসপাতালের নিয়ম অনুযায়ী বিনা পয়সায় সন্তান ভূমিষ্ঠ করেছেন। হাসপাতালের বাইরেও প্রসবে সহায়তা করলে কখনো কারও কাছ থেকে টাকা নেননি। যাঁরা তাঁর হাতে জন্ম নিয়েছেন, তাঁরা প্রথম আলোকে জানিয়েছেন এ কথা।

সাধনা বিশ্বাসের সহায়তায় জন্ম নিয়েছেন ঝিনাইদহ-৪ (কালীগঞ্জ) আসনের বর্তমান সাংসদ আনোয়ারুল আজীম। জন্মেছিলেন কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমানও। তিনি কালীগঞ্জের বাইরে থাকায় ফোনে শোক জানিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর মায়ের কাছ গল্প শুনেছেন সাধনা বিশ্বাসের সহায়তায়ই তাঁর জন্ম হয়েছে। তিনি ছিলেন একজন প্রশিক্ষিত ধাত্রী। ছিলেন নির্ভরযোগ্য এক ধাত্রী। যে কারণে সবাই তাঁর হাতে সন্তান প্রসবে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন। হাজার হাজার নারীর মুখে হাসি ফুটিয়েছেন তিনি।

সাধনা বিশ্বাসের স্বামী মৃত হরিপদ বিশ্বাসের কালীগঞ্জ পৌর শহরের নিশ্চিন্তপুর এলাকায় একটি খাবারের হোটেল ছিল। চার মেয়ে ও এক ছেলে তাঁদের। একমাত্র ছেলে শিবুপদ বিশ্বাসও সামাজিক কাজে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। তিনি সোনার বাংলা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এ পর্যন্ত তিনি ৭০০-এর বেশি বাল্যবিবাহ ঠেকিয়েছেন। ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বরে শিবুপদ বিশ্বাসকে নিয়ে প্রথম আলোর প্রথম পাতায় ‘বাল্যবিবাহ ঠেকান তিনি’ শিরোনামে বিশেষ প্রতিবেদন হয়। ২০১০ সালে প্রথম আলোর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সংখ্যাতেও তাঁকে নিয়ে প্রতিবেদন হয়।

শিবুপদ বিশ্বাস (৫৮) প্রথম আলোকে বলেন, মায়ের কাছে শুনেছেন হাসপাতালে ও হাসপাতালের বাইরে তিনি তিন হাজারের বেশি নারীর সন্তান প্রসব করিয়েছেন। ১৯৮৯ সালে চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার পর ২০০০ সাল পর্যন্ত মানুষ তাঁকে বাড়িতে ডেকে নিয়ে যেতেন। এরপর অসুস্থ হয়ে পড়ায় আর বাড়ির বাইরে যেতে পারেননি।

জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের উপপরিচালক জাহিদ হোসেন বলেন, সাধনা বিশ্বাস অত্যন্ত ভালো মানুষ ছিলেন। কাজের ক্ষেত্রে তাঁর তুলনা ছিল না। এমন ভালো মানুষ মেলা কষ্টকর বলে তিনি উল্লেখ করেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button