ভিক্ষুকের পরিচয় থেকে ফিরতে চায় কালীগঞ্জের পঙ্গু সাইদুল
জামির হোসেন, কালীগঞ্জ, ঝিনাইদহের চোখ-
আর কখনও ভিক্ষা করব না। ছোট্ট একটা মুদি দোকান জুটলেই ব্যবসা করে সংসার চালাব। তাহলে তো আর পরিবার ও সন্তানদের ভিক্ষুকের পরিবার পরিচয়ে বাঁচতে হবে না।
দু’কাধে ক্র্যাচে ভর করে শহরে ভিক্ষা করতে আসা পঙ্গু প্রতিবন্ধী সাইদুল ইসলাম (৪৫) সাংবাদিকদের সামনে এমন প্রতিশ্রæতি ব্যক্ত করেন। সে বলছে, নিজে তো ভিক্ষা করিই, এরপরও ছেলে মেয়ে নিয়ে ৪ সদস্যের অভাবের সংসারে স্ত্রী পলি খাতুনকেও পরের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করতে হয়। এটাও যেন আরো কষ্টদায়ক। তাই সে অন্য পেশায় যুক্ত হয়ে ভিক্ষুকের অপবাদ থেকে পরিবারকে মুক্ত করতে চায়। এজন্যই সন্তানদের আগামী ভবিষ্যতের কথা ভেবেই ভিক্ষাবৃত্তি থেকে বেরিয়ে আসতে এখন নতুন পথের সন্ধান খুঁজছেন।
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বেজপাড়া গ্রামের বাসিন্দা সাইদুল চুয়াডাঙ্গার বঙ্গজপাড়া এলাকার মৃত আমিনুল ইসলামের পুত্র।
প্রতিবন্ধী সাইদুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানায়, পরিবারের দারিদ্রতায় ১০ বছর বয়সেই তাকে একটি মুদি দোকানে কাজ নিতে হয়েছিল। সে সময়ে দূর্ঘটনাবশত তার একটি পা কেটে যায়। কিন্তু অর্থাভাবে চিকিৎসা নিতে না পারায় পরে গ্যংগ্রিনে আক্রান্ত হলে ডাক্তারের পরামর্শে তার বাম পায়ের হাঁটুর নিচে থেকে কেটে ফেলা হয়। এরপর বেঁচে থাকার তাগিদেই পঙ্গু সাইদুল বেছে নিতে হয় ভিক্ষাবৃত্তি। এক সময়ে ভিক্ষা করতে করতেই চুয়াডাঙ্গা থেকে চলে আসেন ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে। যৌবন বয়সে কালীগঞ্জ উপজেলার বেজপাড়া গ্রামের ইউসুপ বিশ্বাসের মেয়ে পলি খাতুনকে বিয়ে করে শ্বশুর বাড়িতেই থেকে যায় সাইদুল। এ সময়ে তাদের কোল জুড়ে আসে সাথী ও বিথি নামে দু’টি সন্তান।
সাইদুল আরো জানায়, সারাদিনে ভিক্ষা করে মাত্র ২/৩শ’ টাকা আয় করেন। এছাড়াও সরকারিভাবে পঙ্গু ভাতা ও ১০ কেজি চালের কার্ডও পেয়েছেন। কিন্তু তবুও ৪ সদস্যের সংসারে ভরণপোষনে সব সময়ই টানা পোড়েন লেগেই থাকে। এজন্য বাড়তি চাহিদা মেটাতে স্ত্রীকেও অন্যেও বাড়িতে কাজ করতে হয়। সে জানায়, তাদের দুটি সন্তানের মধ্যে বড় ছেলে ১৪ বছরের সাথী গ্রামেরই ব্রাক স্কুলে ৩য় শ্রেণিতে পড়ছে। আর মেয়ে বিথি প্রতিবন্ধী হওয়াতে মাদরাসা থেকে এনে তাকেও ওই ব্রাক স্কুলে ১ম শ্রেণিতে ভর্তি করেছেন। তার কষ্ট সে ভিক্ষা করে বলেই তার সন্তানদের গ্রামের অনেকেই ভিখারীর সন্তান পরিচয়ে আঙ্গুল তোলে। এতে তার সন্তানরাও মনে কষ্ট পায়। তাই সে ভিক্ষাবৃত্তি থেকে বেরিয়ে আসতে নতুন পেশা খুঁজছেন।
সাইদুল জানায়, কেউ যদি একটা ছোট্ট মুদি দোকান বা চার্জার ভ্যানের ব্যবস্থা করে দিত তাহলে সে ভিক্ষাবৃত্তি পেশা ছেড়ে দিত। তার ইচ্ছা ছোটখাট কর্ম করেই সন্তানদের আগামীর ভবিষ্যৎ গড়ে দিতে চায়।
সাইদুলের স্ত্রী পলি জানায়, পঙ্গু স্বামী আর দুই সন্তানকে নিয়ে তার পিতার দেয়া দুই শতক জমিতেই কোনো রকমে কাঁচা ঘর তুলে বসবাস করছেন। ছেলে মেয়েরা এখন বড় হচ্ছে। তাই স্বামীর ভিক্ষাবৃত্তি পেশার প্রভাব তাদের উপরেও পড়ছে। সেটা তার কাছেও কষ্টদায়ক। তাই তিনিও চান তার স্বামী যেন ছোটখাট কোনো কর্মের মাধ্যমে ভিক্ষাবৃত্তির পরিচয়টা ঘোচাতে পারেন।
১ নম্বর সুন্দরপুর দূর্গাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অহিদুজ্জামান অদু জানান, পঙ্গু সাইদুলের পরিবারটি বেশ অসহায়। ভিক্ষা করেই চলে তাদের সংসার। এখন ভিক্ষাবৃত্তি থেকে বেরিয়ে আসতে সাইদুলের ইচ্ছাটি পূরনে তিনি সাধ্যমত চেষ্টা করবেন। সেই সাথেই তিনি একটি পরিবারকে স্বাধীনভাবে বাঁচতে সমাজের দানশীল ব্যক্তিদের পাশে দাঁড়ানোর আহব্বান জানান।