হাবিব ওসমান, কালীগঞ্জ, ঝিনাইদহের চোখ-
ছোট্ট শিশু চাঁদনী। বয়স মাত্র দুই বছর। নিরন্তর কান্না করেই চলেছে। কোনভাবেই বাবা তার কান্না থামাতে পারছে না।
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার রাড়ীপাড়া গ্রামের মৃত-ক্কারী গোলাম মাওলার ছেলে দীনমজুর গোলাম রহমান (২৮)। আজ থেকে ১০ বছর আগে বিয়ে করেন মাগুরা সদর উপজেলার রশিন গ্রামের মৃত-মিজান মোল্লার মেয়ে স্বপ্না (২৭) কে। বিয়ের সময় গোলাম রহমান জানতেন না তার স্ত্রীর আপন ফুফাতো ভাইয়ের সাথে সম্পর্ক আছে। বিয়ের পর ১০ বছরের সংসার জীবনে তারা তিন সন্তানের জনক-জননী। বড় ছেলে গোলাম রসূল (৭), মেয়ে জান্নাতী (৫) এবং ছোট মেয়ে চাঁদনী (২) বছর। সংসার করা কালীন সময় রহমানের স্ত্রীর একাধিক পরকিয়া প্রেমের সম্পর্কের কথা জানতে পারে রহমান কিন্তু সন্তানদের কথা চিন্তা করে স্ত্রীকে অনেকবার বোঝানো চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়।
গোলাম রহমান বলেন, আমি খুব গরীব মানুষ পরের ক্ষেতে কামলা দিয়ে সংসার চলে আমার। বাবার দেওয়া ৩ শতক জমির উপর ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করতাম। গত ২১ সালের শেষের দিকে বর্তমান সরকারের দেওয়া একটি ঘর উপহার পেয়েছি। আমার বিয়ের অনেকদিন পর আমি জানতে পারি আমার স্ত্রীর ফুফাতো ভাই সহ একাধিক পরকিয়া সম্পর্ক রয়েছে। আমি তাকে ভালো করার অনেক চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি। আর এসব কাজে তাকে সহযোগীতা করতো তার মা। এই ১০ বছরে আমি কোনদিন তাকে নিয়ে সূখ-শান্তিতে সংসার করতে পারিনি। সর্বশেষ চলতি বছরের ফেব্রুয়ারী মাসের ৪ তারিখে আমি আমার স্ত্রীকে তার বাবার থেকে আমার বাড়িতে নিয়ে আসার পর আমি বিকাল ৫ টা থেকে রাত ৮ পর্যন্ত কাজে গাজীর বাজারে অবস্থান করি। এই সুযোগে ঐদিনই আমার বিদেশ যাওয়ার জন্য আমার ঘরে থাকা ৫১ হাজার ৫০০ টাকা, পার্সপোর্ট এবং আমার ব্যবহারিক জিনিষপত্র নিয়ে আমার ২ বছরের দুধের বাচ্ছাসহ ৩ সন্তান রেখে পালিয়ে যায়। আমি বাড়িতে এসে আমার শাশুড়ির মোবাইল-০১৮৯৩১৮৯৬৪৩ নম্বরে ফোন দিয়ে সে ও তার মা আমাকে খারাপ ভাষায় গালিগালাজ এবং জীবননাশের হুমকি দেয়।
তিনি আরো জানান, এই ঘটনায় গত ০৭/০২/২২ তারিখে কালীগঞ্জ থানায় আমার স্ত্রী ও শাশুড়ির নামে একটি একটি অভিযোগ এবং ০৮/০২/২২ ইং তারিখে মাগুরা সদর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করি। এরপর গত-২২/০২/২২ ইং তারিখে আমার নিকেট মাগুরা মোকাম নোটারী পাবলিকে এ্যাফিডেফিড একটি তালাকপত্র পাঠায়। বর্তমানে আমি ছোট ছোট ৩ টা মাসুম বাচ্চা নিয়ে খেয়ে না খেয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছি। কালীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আমার একটি চা-এর দোকান এবং চা-এর দোকানের কিছু মাল তুলে দিয়েছেন। এই দোকানের আয়-রোজগার দিয়ে কোন রকম খেয়ে না খেয়ে জীবন-যাপন করছি কিন্তু আমি আমার বাচ্চাদের কান্না থামাতে পারছি না। আমি আমার বাচ্চাদের জন্য আমার স্ত্রীকে ফেরৎ পেতে জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনসহ সকলের নিকট সহযোগীতা কামনা করছি।
এ বিষয়ে কালীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আশরাফুল আলম আশরাফ বলেন, গোলাম রহমান অত্যন্ত গরীব মানুষ । পরের ক্ষেতে কামলা না দিলে তার সংসার চলে না। তার স্ত্রী চলে যাওয়ার পর সে আমার নিকট আসে কান্নাকাটি করছিল। তার নিকট থেকে ঘটনা জানার পর আমি রহমানের শশুরবাড়ি ২বার গিয়ে ব্যর্থ হয়েছি। এরপর রহমান ও তার বাচ্চাদের কষ্ট দেখে আমি তার একটা চা-এর দোকান এবং কিছু মালামাল দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। আসলে রহমান ৩টা মাসুম বাচ্চা নিয়ে খুবই মানবেতর জীবন-যাপন করছে।
কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া জেরিন বলেন, এগুলো খুবই কষ্টদায়ক, দেখলে খুব খারাপ লাগে। দুধের বাচ্চাসহ এতো ছোট ছোট বাচ্চা রেখে কিভাবে একজন মা যেতে পারে। আপনার মাধ্যমে জানলাম আমি আমার সাধ্যমত সহযোগীতা করার চেষ্টা করবো।