কালীগঞ্জটপ লিড

কালীগঞ্জে পেট কাটার পর অস্ত্রোপচার ছাড়াই সেলাই করলেন ডাক্তার

আরিফ মোল্ল্যা, কালীগঞ্জ, ঝিনাইদহের চোখ-

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার সুন্দরপুর দুর্গাপুর ইউনিয়নের আনন্দবাগ গ্রামের জহুরুল ইসলামের স্ত্রী রহিমা বেগম (৩৮) প্রচন্ড পেটে ব্যাথা নিয়ে গত ৬ আগস্ট ভর্তি হন কালীগঞ্জ-কোটচাঁদপুর রোডে অবস্থিত হাসনা ক্লিনিকে। এ ক্লিনিকের ডাক্তারদের তত্ত্বাবধানেই তার চিকিৎসা শুরু হয়। ক্লিনিক থেকে জানানো হয় তার পেটের মধ্যে নাড়ি পেঁচানো অবস্থায় রয়েছে। অপারেশন করা লাগবে। সে কারণে ১১ আগস্ট রাতে তার পেটে অস্ত্রোপচার করা হয়। কিন্তু অস্ত্রোপচার সম্পন্ন না করেই ডাক্তার তার পেট পুনরায় সেলাই করে বেডে স্থানান্তর করেন। ক্লিনিকের বেডে শুয়ে এখন ব্যাথায় কাতরাচ্ছেন রহিমা বেগম।

রোগীর স্বামী জহুরুল ইসলাম জানান, আমার স্ত্রীর পরীক্ষা-নিরীক্ষার সকল কাগজ দেখার ছয় দিন পর ২০ হাজার টাকা চুক্তিতে অপারেশন করেন ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। অপারেশন টেবিলে রোগীর পেট কাটার পরে আমাদের জানানো হলো রোগীর নাড়িতে একটি টিউমার রয়েছে। এ কারণে অপারেশন স¤পন্ন করা যাচ্ছে না। এছাড়াও এই অপারেশন করতে হলে ৭ থেকে ৮ জন ডাক্তার লাগবে। এই বলে পেট সেলাই করে আবার বেডে দিয়ে দেয়। আমার প্রশ্ন হলো রোগী যদি অপারেশন করে ভালো করা নাই যাবে তাহলে কেন অপারেশন করা হলো? আমার স্ত্রীর জীবন এখন সংকটাপন্ন। আমি ডাক্তার ও ক্লিনিক মালিকের বিচার চাই। আর আমার রোগীর যদি কোনো ক্ষতি হয় তাহলে তার দায়-দায়িত্ব ওই ক্লিনিক মালিককেই নিতে হবে।

হাসনা ক্লিনিকের মালিক আব্দুর রহমান জানান, রুগির রিপোট করা ছিল যশোর থেকে। রিরোর্ট দেখে এই রোগীর অপারেশন করেন ডাঃ আসলাম হোসেন ও ডাঃ প্রবীর কুমার বিশ্বাস। হাসনা ক্লিনিকে এই রোগীর সুচিকিৎসা সম্ভব নয় জেনেও শুধুমাত্র অর্থের লোভে অপারেশন করা হলো কেনো প্রতিবেদকের এই প্রশ্নের জবাব তিনি এড়িয়ে যান।

অপারেশনের ব্যাপারে ডা: প্রবীর কুমার বিশ্বাসের সাথে কথা হলে তিনি জানান, রোগীর অপারেশন আমরা কমপ্লিট করে নি। ক্যান্সারের সম্ভাবনা বেশি থাকায় রিস্ক নেয়নি। পরবর্তীতে প্রস্তুতি নিয়ে যেকোন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এই অপারেশন করা যাবে।

কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ মাজহারুল ইসলামের সাথে এধরনের অপচিকিৎসার ব্যাপারে কথা হলে তিনি জানান, ভুক্তভোগী রোগীর স্বজনদের লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক ওই ক্লিনিকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

হাসনা ক্লিনিকে রোগীদের অপচিকিৎসা প্রদান করে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার ঘটনা আজ নতুন নয়। এই ক্লিনিকের মতো আরও অনেক ক্লিনিক কালীগঞ্জে রয়েছে যারা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মনীতি না মেনে ব্যাবসা পরিচালনা করে যাচ্ছে। কালীগঞ্জে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ ও নিয়মবহির্ভূতভাবে চলা ক্লিনিকগুলোর বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য বিভাগ কর্তৃক পরিচালিত হয় না কোন অভিযান। এ কারণেই আজ হাসনা ক্লিনিক এর মত ক্লিনিক ব্যবসায়ীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এইসব ক্লিনিক ব্যবসায়ীদের লাগাম কি আদৌ টেনে ধরা যাবে ? এমন প্রশ্নই এখন জনমনে ঘুরপাক খাচ্ছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button