ঝিনাইদহসহ ৭ জেলায় মাল্টি লেভেল কোম্পানি খুলে প্রতারণা: গ্রেপ্তার ৮
ঝিনাইদহের চোখ-
এসবিএসএল নামে মাল্টিলেভেল মার্কেটিং কোম্পানি খুলে প্রতারণার মাধ্যমে গ্রাহকদের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যানসহ আট জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
শনিবার (২৭ আগস্ট) সকাল ১১টার দিকে র্যাব-১২ কুষ্টিয়া ইউনিটের কোম্পানি কমান্ডার স্কোয়াড্রন লিডার মো. ইলিয়াস খান সংবাদ সম্মেলন করে এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- সানরাইজ বিজনেস সার্ভিস লি. (এসবিবিএল) কোম্পানির চেয়ারম্যান মো. সাজ্জাদ হোসেন (২৯), কোম্পানীর ম্যানেজিং ডিরেক্টর মহসিন আলী (৩১), ফিন্যান্স ডিরেক্টর মো. ইমরান হোসেন (২৮), কোম্পানির কর্মী মো. হাসান আলী (২৮), মো. আব্দুল হান্নান (৪৩), মো. মোস্তফা রাশেদ পান্না (৪৭), মো. আইয়ুব আলী (২৮), এবং মো. হাফিজুর রহমান (২৮)।
স্কোয়াড্রন লিডার ইলিয়াস খান জানান, প্রতারক চক্রটি কুষ্টিয়া জেলায় এসবিএসএল নামের একটি মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) খুলে গ্রাহকদেরকে অধিক মুনাফার লোভ দেখায়। পরে তারা গ্রাহকদের কায়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটি কুষ্টিয়া ছাড়াও ঝিনাইদহ, মাগুরা, যশোর, খুলনা, চুয়াডাঙ্গা, পাবনা এবং রাজশাহী জেলায় প্রতারণার জাল বিস্তৃত করে।
প্রতারণার কৌশল হিসেবে কোম্পানির নিজস্ব ওয়েবসাইট ও মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করে গ্রাহকদেরকে বিভিন্নভাবে প্রলুব্ধ করে। এসময় তারা গ্রাহকদের ১ হাজার ২০০ টাকা দিয়ে কোম্পানির আইডি খুলতে বলা হতো। প্রতি আইডি থেকে প্রতিদিন ১০ টাকা ও আইডি বাবদ প্রদানকৃত টাকার সমমূল্যের পণ্য দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হতো। শুরুর দিকে কিছু গ্রাহক টাকা ও পণ্য পাওয়ার কারণে অনেকেই আইডি খুলতে উৎসাহিত হয়েছিল। এক সময় গ্রাহকদের লভ্যাংশের টাকা না দিয়ে আত্মগোপনে চলে যায় প্রতারক চক্রটি। লগ্নিকৃত টাকা হারিয়ে শত শত গ্রাহক দিশেহারা হয়ে পড়েন।
চক্রটির প্রতারণার বিষয়ে একজন ভুক্তভোগী গত শুক্রবার (২৬ আগস্ট) কোম্পানির চেয়ারম্যানসহ একাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে কুমারখালী থানায় দণ্ডবিধির ৮০৬/২০/৩২৩/৩০৭/৫০৬ ধারায় মামলা করেন। মামলা নম্বর-৩৫। এরই ধারাবাহিকতায় সিপিসি-১, কুষ্টিয়া ক্যাম্প র্যাব-১২ একটি দল র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখার সহায়তায় কুষ্টিয়া জেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে প্রতারক চক্রের ৫ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তারকৃতদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী কোম্পানির আরও তিনজনকে ঝিনাইদহ জেলা ও ঢাকার মিরপুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে।
র্যাব জানায়, গ্রেফতারকৃত আসামিরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রতারণার বিষয়টি স্বীকার করেছে। এসবিএসএল কোম্পানির বিরুদ্ধে কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর ও কুমারখালী থানায় দুটি মামলা রয়েছে। এছাড়া কোম্পানির চেয়ারম্যান সাজ্জাদ হোসেনের বিরুদ্ধে দুটি চেক জালিয়াতির মামলা, ম্যানেজিং ডিরেক্টর মহসিন আলীর বিরুদ্ধে চেক জালিয়াতি ও পাঁচটি স্ট্যাম্প জালিয়াতির মামলা এবং ফিন্যান্স ডিরেক্টর ইমরান হোসেনের বিরুদ্ধে দুটি চেক জালিয়াতির মামলা রয়েছে।
প্রসঙ্গত গত বুধবার রাতে কুষ্টিয়ার কুমারখালী থেকে তিন মাদরাসা শিক্ষকসহ পাঁচজনকে ডিবি পুলিশের পরিচয় দিয়ে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। সন্ধান না পেয়ে বৃহস্পতিবার ভুক্তভোগী দুটি পরিবার কুমারখালী থানায় এ ব্যাপারে সাধারণ ডায়েরি করেন।
গ্রেপ্তারকৃত ৮ জনের মধ্যে নিখোঁজ হওয়া ওই ৫ জনও রয়েছেন।