ঝিনাইদহের চোখ-
ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার মান্দারতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠের অবস্থা শোচনীয় । মাঠের সিংহভাগ জায়গা জুড়ে জমে আছে পানি, বাকি অংশে বড় বড় গর্ত। বিদ্যালয়ের পুরাতন একটি ভবন ভাঙ্গার পর তৈরী হওয়া এই গর্ত ভরাট করা হয়নি। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের চলার জন্য আছে মূল ভবনের সামনে দিয়ে একটি সরু পথ। বাচ্চাদের খেলাধুলা অ্যাসেম্বলির কোনো সুযোগ নেই। মাঝে মধ্যে বারান্দায় আর ইটপাটকেলের মধ্যে অ্যাসেম্বলি সম্পন্ন করেন শিক্ষকরা।
শিক্ষকরা বলছেন, মাঠে মাটি ভরাটের প্রয়োজন। তারা এ জন্য সরকারের বিভিন্ন দপ্তর আর জনপ্রতিনিধিদের কাছে ঘুরেছেন, কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। এখন সামান্য বৃষ্টি হলেই স্কুল মাঠে হাটু পানি জমে থাকে। পানি বের হওয়ার কোনো ব্যবস্থা না থাকায় এই অবস্থা থাকে মাসের পর মাস। বিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ মারাত্বক ভাবে বিঘিœত হচ্ছে বলে তাদের অভিমত।
বুধবার সরেজমিনে মান্দারতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ে দুইটি একতলা ভবন রয়েছে। উত্তর পাশের ভবনটি নতুন আর পশ্চিমেরটা পুরাতন। বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর নির্মান হয়েছে সম্প্রতি। যার একটি প্রধান ফটক রয়েছে। এই ফটক থেকে একটি রাস্তা বেরিয়ে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সামনে চলে গেছে। সেটা থেকে আরেকটি শাখা রাস্তা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পুতারন ভবনের সামনে গিয়ে মিশেছে। আর ইতিপূর্বে থাকা আরেকটি রাস্তা দুইভবনের মাঝ দিয়ে পূর্ব দিকে যাদবপুর-মহেশপুর সড়কে মিশেছে। এখন নতুন রাস্তা আর পুরানো রাস্তার মাঝে পড়েছে বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ। যে স্থানটি অপেক্ষাকৃত নিচু। ওই স্থানে ২ থেকে ৩ ফুট পানি জমে আছে। অফিস ভবনের মধ্যে জমে থাকা পানি সদ্য নেমে গেছে, তবে স্যাতস্যাতে অবস্থা বিরাজ করছে। এছাড়া নতুন ভবনের সামনে কিছুটা জায়গা রয়েছে যেখানে বড় বড় গর্ত তৈরী হয়ে আছে। এখানে পুরাতন আরেকটি ভবন ছিল, যা ভেঙ্গে দেওয়ার পর তৈরী হওয়া গর্তগুলো আজো ভরাট করা হয়নি। বরং সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ইট-পাটকেল।
কথা হয় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ মোশারফ হোসেনের সঙ্গে। তিনি জানান, ৭২ শতক জমির উপর ১৯৫৫ সালে এই বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত। বিদ্যালয়ে বর্তমানে ২২৬ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। যাদের পাঠদানে ৬ জন শিক্ষক রয়েছেন। আরো আছেন একজন দপ্তরি। বিদ্যালয়ে দুইটি ভবন রয়েছে, যার শ্রেণী কক্ষ ৪ টি আর অফিস কক্ষ ১ টি। বিদ্যালয়ে শিক্ষার মানও ভালো। প্রতিবছর শতভাগ ছেলে-মেয়ে পাশ করছে এই প্রতিষ্ঠানের। তবে বিদ্যালয় এলাকার পরিবেশ বর্তমানে খুবই খারাপ হয়ে দাড়িয়েছে। অফিস থেকে শ্রেণী কক্ষে যাবার জন্য অনেক সময় শিক্ষকদের প্যান্ট গুটিয়ে যেতে হয়। কোমলমতি ছেলে-মেয়েরা বিদ্যালয় মাঠে ঠিকমতো চলাফেরা করতে পারে না। কখনও ক্লাসে যেতে গিয়ে পাঁ পিছলে পড়তে হয়, আবার মাঠে জমে থাকা পানির জন্য প্যান্ট গুটিয়ে চলতে হয়। এই অবস্থা দীর্ঘ দিনের বলে তিনি জানান।
প্রধান শিক্ষক মোঃ মোশারফ হোসেন আরো জানান, বিদ্যালয় মাঠের ৭০ ভাগ বছরের ৬ মাস পানির নিচে থাকে। যেখানে ২ থেকে ৩ ফুট পানি জমে থাকে। এখনও বিদ্যালয়ের সামনে হাঁটু সমান পানি জমে আছে। বৃষ্টির সময় এই পানি বেড়ে অফিস কক্ষেও প্রবেশ করে। তখন অফিসেও বসা যায় না। তিনি আরো জানান, নতুন ভবনটির সামনে মাঠের ৩০ শতাংশ জায়গা খালি থাকলেও সেখানে ইট-পাথর পড়ে আছে। ওই স্থানে বিদ্যালয়ের একটি পরিত্যক্ত ভবন ছিল, যেটা ভেঙ্গে নেওয়ার পর সেখানে গর্ত তৈরী হয়েছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ থেকে দরপত্রের মাধ্যমে ভবনটি বিক্রি করা হয়েছে। যিনি ক্রয় করেছেন তিনি মাটি খুড়ে ভবনের ইট উঠিয়ে নিয়েছে, কিন্তু মাটি সমান করেনি। তারা বারবার তাগাদা দিলেও কোনো কাজ হয়নি। যে কারনে বৃষ্টি হলে অ্যাসেম্বলি করাতে পারেন না। এছাড়া যেখানে একটু জায়গা পান সেখানেই অ্যাসেম্বলি করান বলে জানান।
প্রধান শিক্ষক আরো জানান, বিদ্যালয়ের উত্তরপাশ দিয়ে মাঠের পানি বেরিয়ে যেতো। সেখানে এক ব্যক্তি বাড়ি করার পর পানি আটকে গেছে। এখন মাঠে মাটি ভরাট প্রয়োজন। মাটি দিয়ে জায়গাটা উচু করতে পারলে পানি বেরিয়ে যাবে। এ জন্য তিনি স্থানীয় একাধিক জনপ্রতিনিধির কাছে ছুটেছেন। বিভিন্ন দপ্তওে লিখিত আবেদনও করেছেন, তারপরও কোনো কাজ হয়নি। তিনি দাবি করেন বিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ ফেরাতে আর কোমলমতি ছেলে-মেয়েদের কথা চিন্তা কওে মাঠে মাটি ভরাটের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
এ বিষয়ে মহেশপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আবু হাসান জানান, তারা ইতিমধ্যে চলাচলের জন্য একটা রাস্তা তৈরী করার ব্যবস্থা করেছেন। আগামীতে এডিবি’র বরাদ্ধ থেকে মাঠে মাটি ভরাটের জন্য এখন থেকেই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আশা করছেন মাঠে আর জলাবদ্ধতা থাকবে না।