আইয়ুব বাচ্চুর যে অজানা গল্প মন কাঁদায়
না ফেরার দেশে চলে গেছেন ব্যান্ড লিজেন্ড আইয়ুব বাচ্চু। গেল ১৮ অক্টোবর তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ২০ অক্টোবর তাকে চট্টগ্রামে নিজের মায়ের পাশে সমাহিত করা হয়। আইয়ুব বাচ্চুর শোক শহরে, নগরে; বাচ্চু ভক্তদের অন্তরে।
শোবিজসহ সাধারণ মানুষদের আড্ডাতেও এখন আইয়ুব বাচ্চু। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও বাচ্চুকে নিয়ে নানা স্মৃতিচারণ। এবার ফেসবুকে ভাইরাল হলো এক অজানা গল্প। যেখানে আইয়ুব বাচ্চুর মহানুভব হৃদয়ের সন্ধান মেলে।
গল্পটি তুলে ধরেছেন আবু বকর সিদ্দিকী নামের এক ব্যক্তি। তার লেখা সেই কাহিনি ছড়িয়ে গেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের হাত ধরে দেশ-বিদেশে। নেত্রকোনার কৃষ্ণপুর বড়বাড়ির এই অধিবাসী নিজের ফেসবুকে লেখেন, ২০১৪ সালে তার বোনের আড়াই বছরের ছেলেকে বাঁচাতে চিকিৎসার্থে প্রয়াত আইয়ুব বাচ্চু আর্থিক অনুদান দিয়েছিলেন। সেই সময় আয়ানের জন্য সাহায্য চেয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিলেন আবু বকর। সেই পোস্ট পড়েই আইয়ুব বাচ্চু সাহায্যের জন্য হাসপাতালে ছুটে এসেছিলেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
শনিবার দুপুরে দেয়া সিদ্দিকীর স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো :
‘২০১৪ সালের এপ্রিল মাসে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় আমার আড়াই বছর বয়সী ভাগিনা আয়ানকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হলে জরুরি ভিত্তিতে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অপারেশন করানোর প্রয়োজন দেখা দেয়। অপারেশনটা ছিল অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ও ব্যয়বহুল। আয়ানকে বাঁচাতে হলে এই অপারেশনের কোনো বিকল্প ছিল না।
বিভিন্ন সোর্স থেকে অপারেশনের জন্য টাকা সংগ্রহ করার পরও প্রায় দেড় লাখ টাকার ঘাটতি ছিল, যা কোনোভাবেই এই অল্প সময়ের মধ্যে জোগাড় করতে পারছিলাম না।
তখন আর উপান্তুর না দেখে রাত আনুমানিক ৩টার দিকে ফেসবুকে আয়ানের অপারেশনের জন্য সাহায্য চেয়ে একটি পোস্ট দিই। সময় হাতে ছিল আরও সাত ঘণ্টা।
কিন্তু সকাল ৯টা পর্যন্ত কারও কোনো সাহায্য না পেয়ে হতাশ হয়ে গেলাম। ডাক্তার সাহেবকে অনুরোধ করলাম অপারেশন শুরু করার প্রস্তুতি নিতে এবং সংগৃহীত টাকা পেমেন্ট করে বকেয়া টাকার জন্য তিন ঘণ্টা সময় নিলাম।
অপারেশন থিয়েটারের সামনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে লাগলাম। ঠিক তখনই এক মহান ব্যক্তির আগমন ঘটল সেখানে।
এসেই তিনি আয়ানের অভিভাবককে খুঁজতে লাগলেন। আমরা তখন তার সঙ্গে কথা বললাম এবং খুবই অবাক হলাম ওনাকে দেখে। জানতে পারলাম উনি ফেসবুকের পোস্টটা দেখে আয়ানকে দেখতে এসেছেন।
জরুরি বিভাগ থেকে আয়ানকে অচেতন এবং অক্সিজেন মাস্ক পরানো অবস্থায় অপারেশন থিয়েটারের সামনে আনা হয়। ওই ভদ্রলোক আয়ানকে দেখে কাছে গেলেন এবং আয়ানের মাথায় হাত বুলিয়ে দুই-তিনবার বললেন, আয়ান বাবুটা, সোনামনিটা, আল্লাহ্ তোমাকে ভালো করে দিবেন, সুস্থ করে দিবেন।
এ কথাগুলো বলে তিনি হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করে দিলেন। তার কান্না দেখে আমরাও কেঁদে ফেললাম।
যাই হোক, কিছুক্ষণ পর এর মধ্যেই আয়ানকে অপারেশন থিয়েটারে ঢুকানো হল। প্রায় চার ঘণ্টা লাগল অপারেশন শেষ হতে। আল্লাহর অশেষ রহমতে অপারেশন সফল হল।
ওই বিশেষ ব্যক্তিটি তখন জানালেন সম্পূর্ণ বকেয়া টাকা তিনি পরিশোধ করে দিয়েছেন এবং অনুরোধ করলেন যে উনি জীবিত থাকাবস্থায় আমরা যাতে ওনার এই আর্থিক সহযোগিতার কথা কাউকে না বলি।
আজ উনি জীবিত নেই। তাই নিজেকে কোনোভাবেই আর আটকাতে পারলাম না, বলে ফেললাম।
উনি আর কেউ নন- প্রিয় আইয়ুব বাচ্চু। মহান আল্লাহ্তায়ালা এই মহামানবকে বেহেশত নসিব করুক… আমিন, আমিন, আমিন।’