প্রথম ম্যাচ জিতে যে সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিল বাংলাদেশ
ঝিনাইদহের চোখঃ
আচ্ছা, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আজকের (রোববার) এ জয়কে আপনি কোথায় রাখবেন? এটি কি শুধুই বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ জয়? নাকি নিজেদের শক্তি-সামর্থ্যের প্রমাণ কিংবা সেরা চারে পা রাখতে যা যা করণীয়, তার প্রথম কাজটি করে ফেলা?
খেলা শেষে অনেকের মনেই এ প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। ওভালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে রাজ্যজয়ী বীরের বেশে প্রেস কনফারেন্সে আসা বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফির কাছেও রাখা হয়েছিল এ প্রশ্ন।
মাশরাফি তার মত করে ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তার কথার সারমর্ম হলো, একটি জয় দিয়ে অত কিছু চিন্তা না করাই ভাল। সবকথার শেষ কথা, সামনে দীর্ঘপথ। সেটা দূর্গম, বন্ধুর। তবে এটা সত্য বড় কিছু করতে হলে অবশ্যই এমন জয় দরকার এবং বড় বড় দল বা যারা শক্তিতে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে তাদের হারানোও খুব জরুরী।
অধিনায়ক মাশরাফির কথাকে মানদন্ড ধরলে বলতে হবে, বাংলাদেশকে সেরা চারে পা রাখতে হলে দক্ষিণ আফ্রিকার মত দলকে তো হারাতে হবেই, সঙ্গে সামনে এমন জয় আরও দরকার।
সেটা অবশ্যই দরকার। কারণ সেমিফাইনাল খেলতে হলে শুধূ দূর্বল, কমজোরি আর র্যাঙ্কিয়ে পিছিয়ে থাকা দলগুলোকে হারালে চলবে না। যারা সম্ভাব্য সেমিফাইনালিস্ট হিসেবে আছে বা যে চার দলকে ভাবা হচ্ছে সম্ভাব্য সেমিফাইনালিস্ট এবং তাদের খুব কাছাকাছি বা সেমিতে খেলার দাবিদার বলে যে দলগুলোকে মনে করা হচ্ছে- সেই দলগুলোর বিপক্ষে যত বেশি ম্যাচ সম্ভব জিততে হবে। খালি তুলনামূলক কমজোরি দলগুলোর সাথে জিতলে সেমিতে খেলা যাবে না।
কাজেই একদম শুরুতে হলেও আজ দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জয়টির তাৎপর্য্য, গুরুত্ব অনেক বেশি। খেলা শেষে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা আর মূল চালিকাশক্তি সাকিব আল হাসান যদিও বড় গলায় কিছু বলেননি। বরং বারবার বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, এক ম্যাচ জেতাই শেষ কথা নয়। এটা শুধু প্রথম ম্যাচ জয়। সামনে দীর্ঘ পথ। আরও আট আটটি ম্যাচ। ভাল কিছু করতে হলে আর ওপরে জায়গা করে নিতে হলে এভাবেই খেলতে হবে। বড় দলের তকমা আঁটা আরও দলকে হারাতে হবে।
তবে হ্যাঁ আজ মাশরাফির দল একটা বার্তা দিয়ে দিয়েছে, তা হলো, ‘আমাদের সামর্থ আছে ফেবারিটের তকমাধারিদের হারানোর।’
আজকের (রোববার) ম্যাচে টাইগাররা নিজেদের বেশ ভাল ভাবে মেলে ধরেছে। ব্যাটিং আর বোলিংয়ে পুরোপুরি না হলেও লক্ষ্য-পরিকল্পনার সফল বাস্তবায়ন করেও দেখিয়েছে। অধিনায়ক মাশরফি আগের দিন যা যা বলেছেন, তার দল আজ অনেকটাই সে কাজ গুলো করে দেখিয়েছে।
শুরুতে তাড়াহুড়ো না করে, পাওয়ার প্লে’তে অযথা তেড়েফুড়ে ব্যাট না চালিয়ে সতর্ক-সাবধানে যতটা সম্ভব কম উইকেট হারালে পরে ভাল খেলা তুলনামূলক সহজ হয়। আজ মাঠে নেমে ঠিক তাই করার চেষ্টাই ছিল। সে লক্ষ্যে মাশরাফির দল অনেকটাই সফল।
বোলিংটা ব্যাটিংয়ের মত সাজানো গোছানো না হলেও প্রয়োজনের সময় ব্রেক থ্রু এসেছে। সেটাও একটা অর্জন, প্রাপ্তি। কাজেই আজকের ম্যাচের পারফরম্যান্স ও সাফল্য বাংলাদেশকে সামনে আগাতে সাহস জোগাবে। এবং সেরা চারে জায়গা করে নিতে হলে এমন জয়ই যে দরকার।
এখন সামনের দিনগুলোয় বাংলাদেশকে আরও বড় দলকে হারাতে হবে। আগামী ৫ জুন নিউজিল্যান্ড আর ৮ জুন স্বাগতিক ইংল্যান্ডের সাথে খেলা। বলার অপেক্ষা রাখে না, ভারত ও অস্ট্রেলিয়া ছাড়া সম্ভাব্য সেমিফাইনালিস্ট হিসেবে বেশির ভাগ বোদ্ধা-বিশেষজ্ঞ ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড আর দক্ষিণ আফ্রিকাকে ধরে রেখেছেন।
আর নিউজিল্যান্ড-ওয়েস্ট ইন্ডিজকে রাখা হচ্ছে খুব কাছাকাছি। অন্যদিকে আফগানিস্তান, শ্রীলঙ্কা আর পাকিস্তানকে নীচের কাতারের দল মনে করা হচ্ছে।
খুব সহজ হিসেব, এই নীচের দিকের তিন দলের সাথে জিতলেও বাংলাদেশের সেরা চারে যাওয়া হবে না। সবার আগে দরকার সম্ভাব্য চার সেমিফাইনালিস্টের অন্তত এক বা দুই দলকে হারানো এবং ঠিক তার খুব কাছাকাছি থাকা নিউজিল্যান্ড এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের মত দলের বিপক্ষে জিততে হবে। আজ সেই পথে খানিকটা হেটে সামনে এগিয়ে চলা।
বাংলাদেশ যে ঐ দলগুলোর সাথে জিততে পারে; দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড আর ওয়েস্ট ইন্ডিজকে যে মাশরাফির দল হারাতে পারে- সেই সামর্থ্যের প্রমাণটা অন্তত আজ দিতে পেরেছে। সেটাও কিন্তু কম বড় প্রাপ্তি নয়। এটা অনেক বড় দাওয়াই। এখন টাইগাররা সামনের খেলায় নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে দিলেও অবাক হবার কিছু থাকবে না।