আড়াই লাখ টন ধান কিনবে সরকার
ঝিনাইদহের চোখঃ
ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতে কৃষকের কাছ থেকে প্রতি কেজি ২৬ টাকা দরে আরও আড়াই লাখ টন বোরো ধার কিনবে সরকার।
মঙ্গলবার সচিবালয়ে কৃষি ও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক ও খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।
খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন। আমরা ওনার সঙ্গে গতকালকে (সোমবার) বসেছিলাম। মিল গেটে যদি আমরা ধান কিনতে দেই তবে চাল তারা (মিলার) দেয় না। টাকা যদি অগ্রিম পেয়ে যায় তবে চাল পচা ছাড়া ভালো দিতে চায় না। তাই এই লাইন আমাদের বর্জন করতে হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আগে দেড় লাখ টন ধান কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। এর মধ্যে আমরা ৩০ হাজার টন ধান কিনতে পেরেছি এ পর্যন্ত। প্রান্তিক কৃষকদের কাছ থেকেই আমরা ধান নিয়েছি। কৃষি মন্ত্রণালয়ের তালিকা অনুযায়ী যে কৃষকরা এখনও ধান দিতে পারেননি আমরা তাদের কাছ থেকে আরও আড়াই লাখসহ মোট চার লাখ টন ধান কিনতে চাই। এতেও যদি আমরা বাজারে প্রভাব দেখতে না পাই তবে প্রয়োজনে আরও বাড়াব। এগুলো মিল ক্র্যাসিংয়ে দিয়ে যদি মিলারদের কাছে কয়েক মাস করে রাখতে হয় আমরা রাখব।’
‘তবুও কৃষকরা যাতে ন্যায্যমূল্য পায়। এটাই হলো আমাদের সিদ্ধান্ত। এখানে সিন্ডিকেটের কোনো স্থান নেই। এখানে আমরা জিরো টলারেন্সে আছি।’
প্রতি কেজি ধানের সংগ্রহমূল্য আগের মতোই ২৬ টাকা থাকছে জানিয়ে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বোরো ধান-চাল সংগ্রহ কর্মসূচি আগামী আগস্ট মাস পর্যন্ত চলবে।’
খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সমস্যার স্থায়ী সমাধান খুঁজছি। এ জন্য আমরা ৫ হাজার টন ধারণক্ষমতার ২০০টি স্টিল পেডি সাইলো নির্মাণ করব।’
কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের বড় সমস্যা হচ্ছে যথেষ্ট খাদ্য গুদাম নেই। খাদ্য গুদানের ধারণক্ষমতা ২০ লাখ টনের মতো। খাদ্য নিরাপত্তার জন্য সব-সময় ১৩-১৪ লাখ টন খাদ্যশস্য গুদামে রাখতে হয়। অলরেডি ১৪ লাখ টন খাদ্যশস্য গুদামে আছে। খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটি এবার ১২ লাখ টন চাল ও দেড় লাখ টন ধান কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।’
তিনি বলেন, ‘আমরা দেখছি বাজারে কোনো ইম্প্যাক্ট হয় না। আমরা এই কয়দিন মনিটরিং করছি। গতকাল (সোমবার) আমরা এ বিষয়টি নিয়ে সর্বোচ্চ মহলে আলাপ-আলোচনা করেছি। আমি ও খাদ্যমন্ত্রী। উনি (প্রধানমন্ত্রী) আমাদের দুটি পরামর্শ দিয়েছেন। আরও বেশি ধান চাষীদের কাছ থেকে কেনা। কিনে আপাতত গুদামে রাখা। চালটা আস্তে আস্তে কেনা। দ্বিতীয়ত হলো মিলারদের মাধ্যমে ধান কেনা যায় কি না। আমরা ধান কিনে মিলাররের গুদামে রাখব, তারা ছাঁটাই করে আমাদের চালটা দেবে। আমরা চাষীকে সরাসরি দামটা দিলাম, মিলারকে ছাঁটাই ও পরিবহন খরচটা দিলাম।’
‘কিন্তু এটার একটা তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে। মিলাররা ঠিকমতো চাল সরবরাহ করে না। এখনও ৩০০ কোটি টাকা মিলারদের কাছ থেকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের পাওনা আছে। এগুলো হাইকোর্টে পর্যন্ত মামলা হয়েছে’,- বলেন কৃষিমন্ত্রী।
আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘আমাদের ধানের আর্দ্রতা পরিমাপক যথেষ্ট মিটার নেই, এটা নিয়ে সমস্যা হয়। মিলাররা বলে থাকেন- ধানের আর্দ্রতা বেশি, যতটুকু চাল পাওয়ার কথা আমি পাইনি। সেই চাল কীভাবে দেব।’
মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের মিটার কিনতে হবে। কৃষি মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে ৩ হাজার মিটার কেনার অর্ডার দিয়েছে। সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের কাছে মিটার থাকবে। ভবিষ্যতে যথেষ্ট পরিমাণ মিটার মাঠ লেভেলে দেব।’
চাল রফতানির বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ করছেন জানিয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্ব খাদ্য সংস্থা, যারা খাদ্য কিনে বিভিন্ন দেশে সাহায্য দেয়। তাদের সঙ্গে কথা বলেছি, তারা বলেছেন, তোমরা যদি আন্তর্জাতিক বাজারের কম্পিটেটিভ দামে আমাদের চাল দাও, তাহলে তোমাদের কাছ থেকে আমরা চাল নেব। এসব পদক্ষেপ আমরা নিচ্ছি।’