অক্টোবরে ঘূর্ণিঝড়ের সতর্কবার্তা, থাকছে বন্যারও শঙ্কা
#ঝিনাইদহের চোখঃ
> বঙ্গোপসাগরে দুই থেকে তিনটি বর্ষাকালীন লঘুচাপের সম্ভাবনা
>> স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বেশি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা
>> দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদের বন্যার সম্ভাবনা
মাথার ওপরে যেন ঘন মেঘের ঘনঘটা। কখনও অন্ধকার হয়ে মুষলধারে বৃষ্টিও হচ্ছে। দীর্ঘক্ষণ ধরে চলছে এ বৃষ্টির ধারা। একটু দম নিয়ে ফের যেন ঘন মেঘের উড়ে যাওয়ার দৃশ্য। এখনকার আকাশ ও প্রকৃতির চিত্র যেন এমনই।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এ চিত্র কেবল বর্তমান সময়ে নয়, বর্ষা আসার পর থেকে মৌসুমি বায়ু সক্রিয় হলেই প্রকৃতির মুখ যেন ভার হয়ে যাচ্ছে। আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, অক্টোবরেই দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু (বর্ষা) বাংলাদেশ থেকে বিদায় নিতে পারে।
আবহাওয়া অফিস এও বলছে, অক্টোবরে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হতে পারে। এ মাসে বঙ্গোপসাগরে এক থেকে দুটি নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে। এর মধ্যে অন্তত একটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে।
আগস্ট থেকে অক্টোবর – এ তিন মাসের দীর্ঘমেয়াদী আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এ তথ্য জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।
এ বিষয়ে আবহাওয়াবিদ মো. আরিফ হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের দেশের আবহাওয়া ও জলবায়ুগত যে বৈশিষ্ট্য আছে, সেটার পরিসংখ্যান বলে যে, অক্টোবর-নভেম্বরে ঝূর্ণিঝড় হয়। এটা যে হবেই এমন না। তবে হওয়ার সম্ভাবনা আছে। সব তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে এ পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে।’
আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, ঊর্ধ্বাকাশের আবহাওয়া বিন্যাস, বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন স্তরের বিশ্লেষিত আবহাওয়ার মানচিত্র, জলবায়ু মডেল, জলবায়ু অনুমানযোগ্যতা সরঞ্জাম, জাপান আবহাওয়া এজেন্সি (জেএমএ), ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর মিডিয়াম-রেঞ্জ ওয়েদার ফোরকাস্ট (ইসিএমডব্লিউএফ), এপেক (APEC) জলবায়ু কেন্দ্র এবং বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা অনুমোদিত গ্লোবাল প্রডিউসিং সেন্টার (জিপিসিএস) থেকে প্রাপ্ত নিউমেরিক্যাল ওয়েদার প্রিডিকশন (এনডব্লিউপি) মডেল পূর্বাভাস, এসওআই (এল নিনো/লা নিনা’র অবস্থা) ইত্যাদির বিশ্লেষণ করে এ পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে।
দীর্ঘমেয়াদী এ পূর্বাভাসে আগস্টে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টি এবং সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হতে পারে বলেও জানানো হয়েছে। আগস্টের বিষয়ে এতে বলা হয়েছে, এ মাসে বাংলাদেশে স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বেশি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এ মাসে বঙ্গোপসাগরে দুই থেকে তিনটি বর্ষাকালীন লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। যার মধ্যে একটি বর্ষাকালীন নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে।
আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, ইতোমধ্যে একটি নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে।
মৌসুমি বৃষ্টিপাতের কারণে আগস্টে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কিছু জায়গায় স্বল্পমেয়াদের বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে বলেও জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
সেপ্টেম্বরের বিষয়ে দীর্ঘমেয়াদী পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সেপ্টেম্বর মাসে দেশে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হতে পারে। এ মাসে বঙ্গোপসাগরে এক থেকে দুটি মৌসুমি নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে।
উত্তরাঞ্চলে ৩-৫, পূর্বাঞ্চলে ১-৩ দিন বন্যার পূর্বাভাস
আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্যের ভিত্তিতে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া বলছেন, নিম্নচাপের কারণে দেশে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। বাংলাদেশ ও ভারতের আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, এ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের মাঝামাঝি দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং এর আশপাশের মেঘালয় ও ত্রিপুরা অঞ্চলে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। চলতি সপ্তাহের শেষের দিকে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের নদীর পানি সমতল থেকে দ্রুত বাড়তে পারে। ফলে এ অঞ্চলের সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, নেত্রকোনা ও হবিগঞ্জ জেলার কিছু জায়গায় স্বল্পমেয়াদের (এক থেকে তিনদিন) বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।
cloud-1
আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া আরও বলেন, দেশের প্রধান নদ-নদী যেমন ব্রহ্মপুত্র-যমুনা এবং গঙ্গা-পদ্মার অববাহিকায় চলতি মাসের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত বন্যার ঝুঁকি নেই। তবে চলতি মাসের ১৬ থেকে ১৭ তারিখ থেকে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা এবং গঙ্গা-পদ্মাসহ বিভিন্ন নদ-নদীর পানি সমতলের অংশে বৃদ্ধি পাওয়া শুরু হতে পারে।
চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার কাছাকাছি বা কোনো কোনো জায়গায় সাময়িকভাবে বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। ফলে দেশের উত্তর ও উত্তর-মধ্যাঞ্চলের কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জামালপুর ও বগুড়া জেলার কিছু জায়গায় স্বল্পমেয়াদে (তিন থেকে পাঁচদিন) বন্যা পরিস্থিতির তৈরি হতে পারে।
বাংলাদেশ ও ভারতের আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে দেশের উত্তরাঞ্চল ও এর কাছাকাছি উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে তিস্তা নদীর পানি সমতলে দ্রুত বাড়তে পারে।
জুলাইয়ে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাত
আগস্ট থেকে অক্টোবরের আবহাওয়ার দীর্ঘমেয়াদের পূর্বাভাসে জুলাই মাসের তথ্য-উপাত্তও বিশ্লেষণ করা হয়েছে। তাতে বৃষ্টিপাত ও তাপমাত্রার অস্বাভাবিকতা পাওয়া গেছে।
তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, গত জুলাই মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে বৃষ্টিপাত ও তাপমাত্রা বেশি ছিল। এ মাসে সারাদেশে স্বাভাবিকের চেয়ে ২৫ দশমিক ৮ শতাংশ বৃষ্টিপাত হয়েছে। এর মধ্যে ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও রংপুর বিভাগে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি এবং খুলনা বিভাগে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টিপাত হয়েছে।
গত ৩০ জুন উত্তর বঙ্গোপসাগর ও এর আশপাশ এলাকায় লঘুচাপ সৃষ্টি হয়। ১ জুলাই এটি একই এলাকায় সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়। সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ৬ থেকে ১৪ জুলাই পর্যন্ত দেশের অনেক জায়গায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হয়। এ সময় এ মাসে দৈনিক সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত ২৫৯ মিলিমিটার রেকর্ড হয় কুতুবদিয়ায়।
জুলাইয়ে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে যথাক্রমে ১ ডিগ্রি ও দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল।
১৪ জুলাই থেকে মৌসুমি বায়ুর প্রভাব সরে গেলে ১৫ থেকে ২৩ জুলাই দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অনেক জায়গায় মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যায়। ১৫ ও ১৬ জুলাই এ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড হয় যশোরে।