মুজিববর্ষের সূচনালগ্নে জাতি
ঝিনাইদহের চোখঃ
ক্ষণগণনার বেলা ফুরালো, এসে গেছে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনে প্রস্তুত দেশবাসী। মঙ্গলবার (১৭ মার্চ) থেকে সূচনা হচ্ছে মুজিব বর্ষের। উৎসবের ঝলমলে রঙে দিনটি উদযাপনের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হলেও করোনাভাইরাসের হুমকিতে সীমিত পরিসরেই মুজিববর্ষের সূচনা হচ্ছে, তবে এই আয়োজনে থাকছে প্রাণের ছোঁয়া।
হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি ও স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ, গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায়। এ বছর যার শতবর্ষপূর্তি হতে যাচ্ছে। এই দিনটি উদযাপনে বঙ্গবন্ধুকন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বছরব্যাপী বর্ণাঢ্য আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছিলেন গত বছরই। মুজিব শতবর্ষকে ঘিরে এ বছরের ১৭ মার্চ থেকে আগামী বছরের ২৬ মার্চ পর্যন্ত ‘মুজিববর্ষ’ উদযাপনের ওই ঘোষণা দেওয়া হয়।
সেই অনুযায়ী বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর ক্ষণগণনা শুরু হয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশে স্বাধীনতার রূপকারের পদার্পনের ঐতিহাসিক দিবস থেকে, চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি হতে প্রতীক্ষা শুরু হয় বর্নাঢ্য উৎসবে মুজিব বর্ষ উদ্বোধনের। বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রের সরকার প্রধান ও ব্যক্তিত্বদের উদ্বোধনী উৎসবে যোগ দেওয়ারও কথা ছিল। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনে জাতীয় কমিটি গঠন করে দেশজুড়ে নানা আয়োজনের মহাপরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠন ছাড়াও বেসরকারি পর্যায়েও ছিল ব্যাপক ও বর্ণাঢ্য আয়োজনের প্রস্তুতি। কিন্তু সর্বগ্রাসী করোনাভাইরাস পাল্টে দেয় বিশ্ব পরিস্থিতি।
করোনা সতর্কতায় জনস্বার্থে জমায়েত-সমাবেশ এড়িয়ে দেশজুড়ে সংক্ষিপ্ত কর্মসূচির মাধ্যমে জাতিকে স্বাধীনতার মহান স্থপতির জন্মশতবর্ষ উদযাপন করতে হচ্ছে। তবে বছরব্যাপী কর্মসূচি থাকায় উদ্ভূত পরিস্থিতির উন্নতি হলে মুজিব জন্মশতবর্ষ দেশে–বিদেশে উৎসব আমেজে উদ্যাপন করা হবে বলে আশা করছে দেশের মানুষ।
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ও বিশ্ব পরিস্থিতি বিবেচনায় জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে মুজিববর্ষের আয়োজন পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে। জনসমাবেশ এড়াতে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানসহ দেশ-বিদেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডের বর্ণাঢ্য উদ্বোধনী অনুষ্ঠানসহ অনেক কর্মসূচি আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। তবে পরিস্থিতির উত্তরণ হলে সুবিধাজনক সময়ে বর্ণাঢ্য আয়োজনের কথাও জানিয়ে রাখা হয়েছে।
এর আগে গত ১০ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছিল ‘মুজিববর্ষের’ ক্ষণগণনা। ওই দিন জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর থেকেই চলছে এই ক্ষণগণনা, যার পরিসমাপ্তি ঘটবে আগামীকাল মঙ্গলবার। ঢাকাসহ দেশের বিভাগীয় শহর ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ডিজিটাল ঘড়ি বসিয়ে এই ক্ষণগণনা কার্যক্রম চলছে।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মুজিব জন্মশতবর্ষের পুনর্বিন্যাস করা সংক্ষিপ্ত কর্মসূচি অনুযায়ী মঙ্গলবার (১৭ মার্চ) রাত ৮টায় বঙ্গবন্ধুর জন্মক্ষণে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আতশবাজি উৎসবের মাধ্যমে জন্মশতবার্ষিকীর মূল আয়োজনের সূচনা ঘটবে। ওই সময় (রাত ৮টা) রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ জাতির উদ্দেশে ভাষণের পরপর আতশবাজি কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন। এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বাণী দেবেন। জনসমাগম ছাড়া দেশ-বিদেশের অগণিত মানুষ যেন উদ্বোধনী আয়োজনে সম্পৃক্ত হতে পারেন, সে লক্ষ্যে বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ সব বেসরকারি টিভি চ্যানেল, অনলাইন মিডিয়া এবং সব ধরনের সোশ্যাল মিডিয়ায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠান একযোগে সম্প্রচার করা হবে। সারাদেশেও একই সময় আতশবাজি উৎসব হবে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে জনসাধারণের স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে এটি করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগ রাত ৮টায় বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে আতশবাজিসহ দেশজুড়ে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে ‘মুজিববর্ষ’ উদযাপন করবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঙ্গলবার সকালে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন ছাড়াও সকাল ১০টায় টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন এবং ফাতেহা পাঠ ও মোনাজাতে অংশ নেবেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দলও কর্মসূচিতে যোগ দেবে।
মুজিববর্ষের সূচনা দিনে দেশজুড়ে অন্য আরও আয়োজনও থাকছে। এর মধ্যে ১৭ মার্চ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থায় উৎসবমুখর পরিবেশে, তবে জনসমাবেশ এড়িয়ে ও সীমিত আকারে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান; সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে তোপধ্বনি (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে); সব সরকারি-বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন; বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন প্রভৃতি।
এ ছাড়া অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে মন্ত্রণালয়, বিভাগ, সংস্থা, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি দপ্তর ও প্রতিষ্ঠান ভবনে ১৭ মার্চ থেকে বঙ্গবন্ধুর ছবি, উদ্ধৃতি, জন্মশতবার্ষিকীর লোগোসংবলিত সামঞ্জস্যপূর্ণ মাপ অনুযায়ী ড্রপডাউন ব্যানার ব্যবহার ও মুজিববর্ষ উদযাপনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ব্যানার, ফেস্টুন ইত্যাদির মাধ্যমে সজ্জিতকরণ; সব সরকারি-বেসরকারি সংস্থা/প্রতিষ্ঠানে আলোকসজ্জা, সৌন্দর্যবর্ধন ও পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা প্রভৃতি।
আন্তর্জাতিকভাবে ইউনেসকোর সদর দপ্তর প্যারিসে অনুষ্ঠিত ইউনেসকোর ৪০তম সাধারণ অধিবেশনে সর্বসম্মতিক্রমে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যার ফলে ইউনেসকোভুক্ত বিশ্বের ১৯৫টি দেশে উদ্যাপন করা হবে জাতির জনকের জন্মশতবার্ষিকী। ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ১৭ মার্চ পর্যন্ত মুজিব বর্ষের বিশ্বস্বীকৃতি দেয় ইউনেসকো। এর ফলে ইউনেসকো বা এর ১৯৫ সদস্যরাষ্ট্রের সঙ্গে যৌথ বা দ্বিপক্ষীয়ভাবে এই দিবসটি উদ্যাপন করতে পারবে বাংলাদেশ।
বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে স্মৃতি জড়িয়ে আছে—এমন শহর ছাড়াও বাংলাদেশিরা বসবাস করেন যেসব শহরে, সেসব শহরেও নানা আয়োজন করা হবে। এর মধ্যে দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা, নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটন, লন্ডন, সিডনি শহরে উৎসবের প্রস্তুতি আছে।
মুজিব বর্ষ উপলক্ষে ২০২০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘ডক্টর অব লজ’ ডিগ্রি (মরণোত্তর) প্রদান করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫২তম সমাবর্তনে এ ডিগ্রি প্রদান করা হবে। সংসদে বিশেষ অধিবেশন বসবে। ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে বছরজুড়ে চলবে নানা আয়োজন।