শৈলকুপায় অধ্যক্ষ মুহাম্মদ কামরুজ্জামান এর ১২তম মৃত্যু বার্ষিকী পালিত
এম হাসান মুসা, ষ্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহের চোখ-
ঝিনাইদহের শৈলকুপায় নিজ এলাকায় সাবেক এমপি আওয়ামীলীগ নেতা অধ্যক্ষ মুহাম্মদ কামরুজ্জামান এর ১২তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষে শুক্রবার পুরাতন বাখরবা গ্রামের মসজিদে দোয়া-মাহফিলের আয়োজন করা হয়। এতে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেন।
শৈলকুপার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগ নেতা অধ্যাপক আবেদ আলী, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সিনিয়র সহ সভাপতি তোবারক হোসেন মোল্লা সহ স্থানীয় আওয়ামীলীগ ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়ামের অন্যতম সদস্য, বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যক্ষ কামরুজ্জামান ১৯২০ সালের ২০ মার্চ শৈলকুপার পুরাতন বাখরবা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ২৫ সেপ্টম্বর তার ১২তম মৃত্যু দিবস। তার পিতার নাম শামছুদ্দিন আহমেদ এবং মাতার নাম করিমন নেছা। পাঁচ ভায়ের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়।
মুহাম্মদ কামরুজ্জামানের ছিলো দীর্ঘ, বর্ণাঢ্য ও কর্মময় রাজনৈতিক জীবন। ছাত্র জীবন থেকেই তিনি রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হন। কুষ্টিয়া কলেজে অধ্যয়নরত অবস্থায় ছাত্রনেতা হিসেবে তিনি ভাষা আন্দোলনে যোগদান করেন। ১৯৫২-৫৩ এর আন্দোলনের বিক্ষুব্ধ দিনে তিনি ছিলেন পূর্ব পাকিস্থান ছাত্রলীগের সভাপতি। ছাত্রলীগের সভাপতি থাকাকালেই তিনি ১৯৫৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট এর মনোনয়নে জাতীয় নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেন। ঝিনাইদ, শৈলকুপা ও হরিণাকুন্ডু থানা নিয়ে গঠিত তখনকার যশোর-১ আসনে ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগের প্রভাবশালী প্রার্থী । পরবর্তী সময়ে মোনেম খানের মন্ত্রী বশির উদ্দীন মাজমাদারসহ সাতজন প্রার্থী কে বিপুল ভোটে পরাজিত করে নির্বাচিত হন।
পূর্ব পাকিস্থান আইন পরিষদে সম্ভবত তিনিই ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ সদস্য। ছাত্র রাজনীতি এবং আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক কাজে অধ্যক্ষ কামরুজ্জামান ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর। ঐ সময়ে তিনি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর সান্নিধ্য লাভ করেন। ৫৪ এর নির্বাচনে ঐদুইজন নেতাই পৃথক পৃথকভাবে তার নির্বাচনী এলাকায় বিভিন্ন জনসভায় ভাষণ দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও তাঁর নির্বাচনী জনসভায় যোগদান করেছিলেন এবং তাঁর গ্রামের বাড়ি বাখরবা গ্রামে রাত কাটিয়েছিলেন। ১৯৫৫ সালে তিনি বিশ্বশান্তি সম্মেলনে পাকিস্থান প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে স্টকহোম যান এবং ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশ সফর করেন। দেশে ফেরার পর তিনি বামপন্থি যুব সংগঠন পূর্বপাকিস্থান যুবলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। পঞ্চাশ দশকের মাঝামাঝি তিনি বাংলাবাজার এলাকার কিশোরীলাল জুবিলী কলেজিয়েট স্কুলে শিক্ষকতার চাকুরী গ্রহণ করেন। তিনি শুধু নিজ বিদ্যালয়েই নয় সারাদেশের শিক্ষকদের দুঃখ দুর্দশা বুঝতে পেরে তৎকালিন পূর্ব পাকিস্থান শিক্ষক সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন এবং শিক্ষক সমাজের অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। পরবর্তীতে ১৯৭০ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি ঝিনাইদহ -১ আসনে আওয়ামীলীগের প্রার্থী হিসেবে জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। একাত্তর এর মুক্তিযুদ্ধে তিনি মুজিবনগর সরকারের শিক্ষা বিষয়ক উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেন। দেশ স্বাধীনের পর ১৯৮৬ সালে তিনি পুনরায় ঝিনাইদহ -১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। শিক্ষকতা থেকে ১৯৯৮ সালে তিনি অবসর গ্রহণ করেন এবং আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য হন। পরে তিনি মরোক্কোতে রাষ্ট্রদূত নির্বাচিত হয়েছিলেন।
ব্যক্তি জীবনে তিনি অত্যন্ত সৎ ও নিষ্ঠাবান রাজনৈতিক নেতা ছিলেন। বিত্ত বৈভবের প্রতি তাঁর কোনো লোভ বা লালসা ছিলো না। তিনি দুই পুত্র দুই কন্যা সন্তানের জনক। বড় ছেলে পারভেজ জামান নিউজিল্যান্ড প্রবাসী, ছোটছেলে তানভীর জামান আমেরিকা প্রবাসী। বড় মেয়ে বিলকিস জামান ও ছোটো মেয়ে পারভীন জামান উভয়ই জুবিলী স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক ছিলেন। ছোটো মেয়ে পারভীন জামান কল্পনা বর্তমানে আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য।
সরকার ২০১৩ সালে তাঁকে মরোনোত্তর স্বাধীনতা পদক ও ২০১৪ সালে একুশে পদকে সম্মানীত করে।