ইউটিউব কাল হলো ঝিনাইদহের আসাদের/কাটলেন বাগান
ঝিনাইদহের চোখ-
২০১৯ সালে তিনি ৬০ শতক (দেড় বিঘা) জমিতে পেয়ারা চাষের পাশাপাশি একই জমিতে মেরিন্ডা জাতের কমলা এবং আলাদাভাবে ২০ শতক (১০ কাঠা) জমিতে চায়না কমলা চাষ করেন ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ৬নং ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নের দাঁদপুর কৃষক আসাদুজ্জামান। ।
এ বছর তার বাগানে ২০ মণ চায়না কমলার ফলন হয়েছে। কিন্তু তার বাগানের কমলাগুলোতে স্বাভাবিক কমলার থেকে রস কম, ভিতরে বিচি বেশি এবং খেতে একটু তিতা হওয়ায় বাজারে ন্যায্যমূল্য পাননি। ফলে তিনি হতাশা ও ক্ষোভে তার কমলা বাগান কেটে দিয়েছেন।
কৃষক আসাদুজ্জামান বলেন, আমি এই কমলা চাষ করে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। এখন সেখানে নতুন ফলের বাগান করতে চাই। তিনি বলেন, খুব শখ করে দুই বিঘা জমিতে কমলা বাগান করেছিলাম। ২০ শতক (১০ কাঠা) জমিতে চায়না কমলা ও ৬০ শতক (দেড় বিঘা) জমিতে মেরিন্ডা কমলা। ভবিষ্যতে কিছু করতে পারব এই ভেবে আশায় বুক বেঁধেছিলাম। বাগানে প্রচুর কমলাও ধরেছিল। কিন্তু এই কমলা যখন পরিপক্ক হয়ে বিক্রয় উপযোগী হল এবং পাকা শুরু করল তখনই সমস্যাটা দেখা দিল। কমলাগুলো ঢাকায় পাঠাতে গিয়ে বিভিন্ন বাধার সম্মুখীন হই। পাশের ইউনিয়নের এক ভাই ঢাকায় কমলা পাঠিয়ে ২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছেন। আমিও সেই আড়তে কমলা পাঠানোর জন্য ফোন দিই। কিন্তু তারা বলে এই কমলা বিক্রি করতে পারছি না, কমলা আর পাঠানোর দরকার নেই। পারলে অন্য কোনো ফল পাঠান।
ক্ষতিগ্রস্ত এই কৃষক বলেন, তিন বছর আগে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার কৃষি অফিসার তালহা জুবাইর মাসরুরের ইউটিউব চ্যানেল কৃষি বায়োস্কোপে একটি ভিডিও দেখতে পাই। সেখানে চুয়াডাঙ্গার জীবননগরের নিধিকুন্ডু গ্রামের ওমর ফারুকের নার্সারিতে চায়না কমলার চাষ নিয়ে একটি প্রতিবেদন দেখানো হয়। সেই প্রতিবেদন দেখে উদ্বুদ্ধ হই।
তিনি বলেন, আমার মতো কেউ শুধু ইউটিউব দেখে উদ্বুদ্ধ হবেন না। আপনার নিকটতম কৃষি কর্মকর্তা বা কৃষি অফিসে গিয়ে জেনে বুঝে শুনে তারপর এই ধরনের ফলের বাগান করবেন।
ঝিনাইদহ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, ঝিনাইদহে মোট আবাদযোগ্য কৃষি জমি রয়েছে ১ লাখ ৫০ হাজার ২৩৫ হেক্টর। যার মধ্যে ১১ হাজার ৭৯৫ হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে বিভিন্ন ধরনের ফল চাষ করা হচ্ছে। কৃষি প্রধান এই জেলায় বেশি পরিমাণে উৎপাদন হয় কলা, আম ও পেয়ারা ফল। যার মধ্যে কুল ৪৪৬ হেক্টর, কমলা ৬২ হেক্টর, মাল্টা ১৪৬ হেক্টর, ড্রাগন ১৫১ হেক্টর, শরিফা ১৭ হেক্টর, কদবেল ২৩ হেক্টর, কলা ৪ হাজার ৬৩০ হেক্টর, আম ২ হাজার ২২১ হেক্টর, লিচু ৩২০ হেক্টর এবং পেয়ারা ১ হাজার ২৭৯ হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে। এর মধ্যে নতুন বিদেশি ফল হিসেবে যোগ হয়েছে চায়না ও কাশ্মীরি কমলা, মাল্টা, ড্রাগন এবং উন্নত জাতের হাইব্রিড কুল। যা জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করা হচ্ছে।
ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. জহুরুল ইসলাম জানান, আসাদুজ্জামান কোনো যোগাযোগ করেননি। তিনি কমলা বাজারে বিক্রি করতে পারছেন না অভিযোগ করে বাগানের সব গাছ কেটে দিয়েছেন। তবে এই ফলের ভবিষ্যৎ ভালো। বাগানটা না কাটাই ভালো ছিল।
কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শিকদার মো. মোহায়মেন আক্তার বলেন, এই চায়না কমলার আবাদ সম্পর্কে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। তবে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, ফল গবেষণা ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন ধরনের নতুন নতুন চারা পাই। হর্টিকালচার সেন্টারগুলোর মাধ্যমেই চারাগুলো সম্প্রসারণ করা হয়। আমরা চাই না কোনো কৃষক কৃষিকাজ করে ক্ষতিগ্রস্ত হোক। তবে কৃষক ভাইয়েরা যদি আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতো তাহলে হয়তো তাদেরকে সহযোগিতা করতে পারতাম, কিংবা বিপণনের জায়গাগুলো খুঁজে দিতে পারতাম।