ওপারে ভালো থাকবেন হে বীর । ঝিনাইদহে শোকের ছায়া
ঝিনাইদহ চোখ-
বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও ঝিনাইদহ-দুই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মসিউর রহমান ইন্তেকাল করেছেন। (ইন্নালিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজিউন)। আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে জেলা শহরের নিজ বাসার দরজা ভেঙ্গে তার অচেতন দেহ উদ্ধার করা হয়। সেখান থেকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে নেওয়ার পরে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ ছোঁয়া ইসরাইল তাকে মৃত বলে ঘোষনা করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। তিনি স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক কন্যা সন্তান রেখে গেছেন। দুপুরের দিকে মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে গোটা এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। হাসপাতাল থেকে তার মরদেহ একটি এ্যাম্বুলেন্সে করে বাড়িতে আনা হয়। এ সময় শত শত নেতা কর্মি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাবেক পৌর মেয়র আব্দুল মালেক গনমাধ্যমকে জানান, সকাল ৮টার দিকে মশিউর রহমান অসুস্থতার কথা জানিয়েছিলেন। গাড়ি চালক বাঁধন মঙ্গলবার ( ১ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বাসায় এসে ডাকাডাকি করতে থাকেন। ছোট ভাই আসাদুজ্জামান, প্রতিবেশি পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শেখর, ঘরের দরজা ভেঙ্গে দেখেন সোফার উপর মসিউর রহমানের নিথর দেহ পড়ে আছে। ইজিবাইকে দ্রæত ঝিনাইদহ সদর হাসপাতলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে জরুরী বিভাগে দায়িত্বরত চিকিৎসক ছোঁয়া ইসরাইল জানান অনেক আগেই মৃত্যু ঘটেছে তার।
মসিউর রহমান বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারি ছিলেন। ঝিনাইদহ জেলার হরিণাকুন্ডু উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের কন্যাদহ গ্রামে জন্ম গ্রহন করেন তিনি। স্কুল জীবনে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ভারতের বিহার রাজ্যের চাকুলিয়া থেকে ট্রেনিং নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ঝিনাইদহ মহাকুমা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের প্রথম (১৯৭৬ থেকে ১৯৭৮ পর্যন্ত) কমান্ডার হন তিনি।
৭৫ পরবর্তী বিএনপি গঠন হলে তিনিযোগদান করেন। এর আগে ১৯৭৭ সালে প্রথম হরিণাকুন্ডুর চাঁদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৮৭ সালে কারাগারে থেকে নির্বাচনে অংশ নেন এবং তৃতীয় বার নিজ ইপির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে চমক সৃষ্টি করেন। ১৯৮৭ সালে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের সময় ৭ মাস কারাভোগ করেন। এর আগে ১৯৭৯ সালে বিএনপি’র টিকিটে ঝিনাইদহ-২ আসনে জাতীয় সংসদ সদস্য পদে লড়াই করে তৎকালীন আইডিএল এর প্রার্থী মৌলানা ছামদানীর কাছে পরাজিত হন। কট্টর জামায়াত বিরোধী এই নেতা ১৯৯১ সালে প্রথম দলীয় (বিএনপি) সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। চার বার সংসদ সদস্য ছিলেন তিনি। বিরোধী দলীয় হুইপ, স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির দায়িত্ব পালন করেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধের সময় মসিউর রহমান বর্তমান ঝিনাইদহ, হরিণাকুন্ডু, শৈলকুপা, কুষ্টিয়া ও আলমডাঙ্গা উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গেরিলা যুদ্ধে অংশ নেন। অনরবর্ষি বক্তা ও সংসদ সদস্য হিসেবে সারা দেশে পরিচিত ছিলেন তিনি। জাতীয়তাবাদি দল (বিএনপি) কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে বড় ধরণের ভুমিকা পালন করেছেন এই নেতা।
গেলো কয়েক বছর ধরে জনপ্রিয়তায় বড় ধরণের ধাক্কা লাগে। নিজ দলের নানা মুখি সমালোচনায় জড়িয়ে পড়েন তিনি। আপন চাচাতো ভাই আব্দুল মজিদের হাতে জেলা বিএনপির নেতৃত্ব চলে যায়। জেলা বিএনপির গুরুত্বপুর্ণ নেতৃবৃন্দ কাছ থেকে দুরে চলে যান। অভিমানে দলীয় কর্মকান্ড থেকে সরে যেতে থাকেন তিনি। দলীয় সুত্র গুলো থেকে জানা গেছে ইদানিং হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। ঝিনাইদহে বেশী অবস্থান করতেন।
২০০৮ সালের ১৪ই ডিসেম্বর দুর্নীতির অভিযোগে দুদকের পক্ষ থেকে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। ওই মামলায় ২০১৭ সালের অক্টোবরে যশোরের বিশেষ জজ আদালত তাকে ১০ বছরের কারাদন্ড, জরিমানাসহ সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে রায় প্রদান করেন। কিছু দিন কারাভোগের পর উচ্চ আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পান তিনি । সেই থেকে কমতে থাকে দাপট। কিন্ত তার মৃত্যু হাজারো মানুষের চোখের জল ঝরিয়েছে। গ্রাম গঞ্জের মানুষের কাছে জন প্রিয় একজন মানুষ ছিলেন তিনি।
ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সংসদ সদস্য মোঃ আব্দুল হাই তার মৃত্যুতে শোক জানিয়ে বলেন, ১৯৬৭ সালে মেট্রিক পাশ করেন তারা। এরপর ঝিনাইদহ কেসি কলেজে ইন্টামেডিয়েট ক্লাসে ভর্তি হন। ১৯৭১ সালে পৃথক ভাবে যুদ্ধে চলে যান। জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল মজিদ, সাধারণ সম্পাদক জাহিদুজ্জামান মনা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদ আব্দুল মজিদ বিশ্বাস, সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মকবুল হোসেন, জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি মিজানুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক শেখ সেলিম, সংগঠনিক সম্পাদক আহম্মেদ নাসিম আনসারী সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ শাকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন। দলীয় সংসদ সদস্য থাকাকালীন হরিণাকুন্ডু উপজেলায় প্রথম বিএসসি নার্সিং ট্রেনিং সেন্টার স্থাপন করেন। জেলা শহরে নাসিং ইন্সটিটিউট, সরকারী শিশু হাসপাতাল, ম্যাটস, হেলথ টেকনোলজি, খাবার স্যালাইন ফ্যাক্টরী, ভেটেরিনারি কলেজ, সহ অসংখ্য কলেজ, স্কুল ও মাদ্রাসা স্থাপন করে নজির স্থাপন করেন তিনি। ##